প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
সংবাদ-পরবর্তী এমন ফলোআপ প্রেরণাদায়ক

মুদ্রিত সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন তথা স্বীকৃত গণমাধ্যমগুলোতে অনিয়ম সংক্রান্ত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হবার পর পাঠকরা এর ফলোআপ প্রত্যাশা করে। ফলোআপের বঙ্গানুবাদ অনুপ্রেরিত হলেও সংবাদের ফলোআপ বলতে বোঝায়, সংবাদটি প্রকাশের পর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াস্বরূপ কী কী হলো। গণমাধ্যমের আকালের যুগে এমন ফলোআপ তোলপাড় সৃষ্টি করলেও গণমাধ্যমের বর্তমান প্রাচুর্যের যুগে তেমন তোলপাড় দেখা যায় না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলায় সে তোলপাড়টি দেখা যাচ্ছে। অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর স্বল্প সময়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিচ্ছে নানা পদক্ষেপ। যার ফলে জনমনে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের প্রতি আস্থা বাড়ছে এবং অসহায় মানুষ কোনো সমস্যার সমাধান না পেলে শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গণমাধ্যমের দ্বারস্থ হবার প্রতি ঝুঁকছে।
|আরো খবর
কচুয়ায় এক সংখ্যালঘু ব্যক্তির পৈত্রিক সম্পত্তি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কর্তৃক দখল প্রচেষ্টার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসন যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিটি মানুষ সন্তুষ্ট হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো পূর্ববর্তী সংবাদের ফলোআপ। একটির শিরোনাম ‘ইটভাটার জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দিয়েছে প্রশাসন’ এবং অন্যটি ‘শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা’।
ইটভাটা সংক্রান্ত সংবাদটিতে নূরুল ইসলাম ফরহাদ লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করায় ইটভাটার আগুনে পানি ঢেলে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের বালিথুবা এলাকায় মা-রহমত ব্রিক ফিল্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহার। জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে মা-রহমত ব্রিক ফিল্ডে অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার দায়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং ইটভাটাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ভাটার মালিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। প্রশাসনের এ নির্দেশ অমান্য করার কারণে ইটভাটার আগুনে পানি ঢেলে বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আব্দুল হান্নান, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আবু বকর সিদ্দিক, ফরিদগঞ্জ থানার এসআই রফিকুল ইসলাম ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ অভিযানের বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় মানুষের দাবি, পৌর সদর ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের আঙ্গিনায় অবৈধ ইটভাটা দেদার পরিচালিত হলেও প্রশাসনের কোনো খবরদারি নেই।
শাহরাস্তির কৃষি জমি সংক্রান্ত সংবাদটিতে মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন, শাহরাস্তিতে কৃষি জমির মাটি (টপ সয়েল) কাটায় ৩ ট্রাক ও ট্রাক্টর মালিককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ এ দণ্ডাদেশ দেন। তাঁর নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমজাদ হোসেন সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শোরসাক মাঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি (টপ সয়েল) কেটে স্থানীয় এসএসবি ব্রিক ফিল্ডে বিক্রয়ের অভিযোগে ১টি ট্রাক্টর ও ২টি ট্রাক জব্দ করেন। সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ট্রাক্টরের মালিক শোরসাক গ্রামের মৃত মোসলেহ উদ্দিনের পুত্র রফিক উল্লাহ (৫৮), ট্রাকমালিক একই গ্রামের গণি মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া (৪৫) ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পানিওয়ালা গ্রামের আঃ সাত্তারের পুত্র আনোয়ার হোসেনকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ জানান, কৃষি জমির মাটি (টপ সয়েল) বিক্রয় ও পরিবহনের দায়ে এ দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। কেউ অবৈধভাবে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে তা বিক্রি এবং কেউ পরিবহন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ অব্যাহত থাকবে।
উপরোক্ত দুটি সংবাদই ইটভাটাকেন্দ্রিক। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটাগুলোতে ইট উৎপাদনের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টরা বৈধ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি অবৈধ নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সংবাদ তথা গণমাধ্যমের উপজীব্য বিষয়ে পরিণত হয়। কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসন সংবাদ-পরবর্তীতে ফলোআপস্বরূপ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, আবার কোথাও অর্থপূর্ণ নীরবতা পালন করে। এর পেছনে ইটভাটা মালিকদের দ্বারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে প্রভাবিত করার মুখরোচক আলোচনা মানুষের মুখে মুখে বিরাজ করে। এতে প্রভাবিতগণ সাধারণত প্রতিক্রিয়া দেখান না। চাঁদপুরে দুটি উপজেলায় যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, সেজন্যে সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাই এবং অন্য সকলকে অনুরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের অনুরোধ জানাই। অন্যথায় মুখরোচক আলোচনা থেকে তারা রেহাই পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না।