বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৫

নিরীহ খালে যতো দখলবাজি!

অনলাইন ডেস্ক
নিরীহ খালে যতো দখলবাজি!

আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় মহাসড়ক, পাহাড়ি এলাকার সড়ক, শহুরে কিছু সড়ক ও উঁচু সমতল ভূমির কিছু সড়ক ছাড়া অন্য এমন কোনো সড়ক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার পাশে ছোট-বড় খাল নেই। কারণ, খাল কেটে সড়ক বানানোটা আমাদের দেশের পুরোনো প্রবণতা ছিলো। সরকারের যখন সামর্থ্য ছিলো না, মানুষ তখন নিজেদের প্রয়োজনে স্বেচ্ছাশ্রমে কিংবা স্বীয় উদ্যোগে চাঁদা/অনুদান সংগ্রহ করে শ্রমিক লাগিয়ে সড়কগুলো বানিয়েছে। সরকারের এখন সামর্থ্য আছে। সেজন্যে পুরোনো কাঁচা সড়ক সংরক্ষণের জন্যে নগদ ও উপকরণে সরকার যা বরাদ্দ দেয়, তাতে ভাগ ও ভোগ দুটোই নিশ্চিত হয় সংশ্লিষ্টদের। আর সড়কের পাশের খালে নির্বিঘ্ন ও নির্বিচার দখলবাজি চলে প্রভাবশালী সহ সাধারণ মানুষের। খালের মালিক যে সরকার, সে সরকারের লোকজন খালে দখলবাজি প্রতিহতকরণে কঠোর ভূমিকা নেয়ার নজির একেবারে কম। খাল তো নিরীহ ও নির্বাক, সেজন্যে এমন দখলবাজি বন্ধ হচ্ছে না কোনোভাবেই।

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি অখ্যাত গ্রামীণ সড়কের পাশের খাল কীভাবে দখলের শিকার হয়েছে, তার সচিত্র সংবাদ ছাপা হয়েছে। ‘শাহতলী-মোল্লাবাজার সড়কের পাশে খাল দখল’ শিরোনামের সংবাদটিতে লেখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী-মোল্লাবাজার সড়কের পাশে সরকারি খালের ওপর দোকান নির্মাণ করে খাল দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, মোল্লাবাজারের উত্তরে স্লুইচ গেট এলাকায় সড়কের পাশে সরকারি খালের ওপর দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এরা ভিন্ন ভিন্ন দোকান তুলে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে ব্যবসায়িক অফিস ও চায়ের দোকান দিয়ে সরকারি খালে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমল পর্যন্ত সরকারি খালের ওপর দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। এসব দোকান নির্মাণ করার কারণে খাল দিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সময়মতো পর্যাপ্ত পানি জমিতে প্রবেশ করতে পারে না। যার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে সরকারি খালটি দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে। আর দখলদারদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে আসছে। এরা প্রভাবশালী হওয়ায় সচেতন মহল ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়নি। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ক’জন বলেন, সরকারি খালের ওপর দোকান নির্মাণ করার কারণে খালে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সময় সঠিক সময়ে ফসল চাষাবাদে বিলম্ব হয়। এভাবে খালে দোকান নির্মাণ করতে থাকলে একদিন খালটি সরু হয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

খালে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে কিংবা বন্ধ হয়ে গেছে-এটা আমাদের দেশের অধিকাংশ স্থানের অতি সাধারণ চিত্র। অতিবৃষ্টি হলে পানি যখন দ্রুত সরতে পারে না এবং সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, তখন দখলবাজ ছাড়া ভুক্তভোগীরা খালের জন্যে সাময়িক মায়াকান্না করে। তারপর সবাই চুপ হয়ে যায়। আর নিরীহ ও নির্বাক বলে দখলবাজির শিকার খালগুলো তো চুপ থাকেই। খালের পক্ষে সরব হবার মতো লোকগুলো ম্যানেজ্ড হয়ে সব চেয়ে চেয়ে দেখে। এমতাবস্থায় খালগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে নীরবে কাঁদে। যেমনটি কেঁদেছিলো চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের খালগুলো। গেল বছর অতি বৃষ্টিতে এই খালগুলো পানি ধারণ ও নিষ্কাশন কোনোটাতেই সক্ষম না হওয়ায় বন্যার ভয়াবহতা উপহার দিয়েছে প্রকল্পবাসীকে। প্রাণহানি না ঘটলেও ফসলহানি হয়েছে অস্বাভাবিক। অভ্যন্তরীণ সড়ক অবকাঠামোর হয়েছে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি। সরকারের সক্ষমতায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে বলে সমস্যার টেকসই সমাধানে নেই তেমন অগ্রগতি। হয়তো আরো বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতির জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়