প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

প্রতি বছর শীতকাল আসলেই হৃদরোগের প্রকোপ বেড়ে যায় এবং এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক বিখ্যাত, পরিচিত ব্যক্তিত্ব, আপনজন-ঘনিষ্ঠজন আকস্মিকভাবে হারিয়ে যান। এভাবে শীতে হৃদরোগ যেন তার মারাত্মক হন্তারক রূপ প্রকাশ করে, যার বীভৎসতা সবাইকে করে তোলে আতঙ্কিত। যে চিকিৎসক মানুষের আশা-ভরসার জায়গা, সে চিকিৎসককেই যদি শীতকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যুর শিকার হতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্কটা কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে সেটা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের স্বনামধন্য সার্জারী চিকিৎসক ডাঃ মনিরুল ইসলামের আকস্মিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কম-বেশি উপলব্ধি করা গেছে। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত পৌনে ৫টায় হাসাপাতাল কোয়ার্টারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়ে কোনো চিকিৎসা নেয়ার আগেই ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৪৫ বছর। তিনি চিকিৎসক স্ত্রী, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ১ মেয়ে ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ১ ছেলেসহ বহু আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেছেন।
ডাঃ মনিরুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর শহরের চিকিৎসক অঙ্গনসহ সকল মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। কেননা চাঁদপুরে দীর্ঘদিন তিনি বেশ সুনামের সাথে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বিশ্বাস-আস্থার জায়গায় নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিলেন। তার রোগীসহ সাধারণ মানুষ যখন জানলেন, হৃদরোগের চিকিৎসায় ওপেন হার্ট সার্জারি না করে ডাঃ মনিরুল সাময়িক চিকিৎসা স্বরূপ হার্টে রিং পরেছেন, তখন কেউ কেউ বলেছেন, সার্জারির চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিজের সার্জারিকেই অবহেলা করলেন, যার পরিণতিতে অকালে হারিয়ে গিয়ে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি করে গেলেন। তার মতো হাতের যশওয়ালা ডাক্তার মফস্বলে সবসময় পাওয়া যায় না। তারা থাকেন বিরলই। সেজন্যে তাদেরকে আকস্মিকভাবে হারানোর শোকটা ভক্ত-অনুরাগীদের জন্যে হয় অনেক প্রবল।
এ শোকের রেশ আমাদের মন থেকে মুছে না যেতেই বুধবার বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই পেলাম আরেকটি মৃত্যুর খবর। যেটি চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারকে যেন শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলে এককালে চাঁদপুর কণ্ঠের সক্রিয় সংবাদদাতা হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন জসিম উদ্দীন মিয়াজী। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ বুধবার ভোররাতে ঢাকার বাসায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। ডাঃ মনিরুল ইসলামের মতোই জীবনের অর্ধ শতক পূরণের আগেই জসিম মিয়াজী মাত্র ৪৭ বছর বয়সে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করলেন। জসিম উদ্দিন মিয়াজী ২০০৭ সাল থেকে চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করছিলেন। তিনি বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দুবারের সফল ইউপি সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২নং বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছাড়াও বহু সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। মৃত্যুকালে জসিম উদ্দিন মিয়াজী দুই কন্যা ও এক ছেলে এবং স্ত্রী সহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। উল্লেখ্য, জসিম উদ্দিন মিয়াজী এক বছর আগে থেকে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। বুধবার ভোর রাতে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকার টঙ্গী এলাকার একটি হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। জসিম উদ্দিন মিয়াজী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
ডাঃ মনিরুল ও জসিম মিয়াজির চিরপ্রস্থানের সময় কাকতালীয়ভাবে একই, শুধু দিনের ভিন্নতা। শীতকালে ভয়ঙ্কর হন্তারকরূপী হৃদরোগের কাছে রাতের অন্ধকারে নীরবে নিভৃতে হার মানলেন তারা। এভাবে যে এই শীতে আরো কতজনকে হার মানতে হবে সেটা মহান সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কে জানে। সেজন্যে চিকিৎসায় সামর্থ্যবান-অমামর্থ্যবান, সচেতন-অসচেতন মানুষদের কেউ জ্ঞাতসারে প্রমাদ গুণছেন, আর কেউ উদাসীনতায় অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর দিকেই ধাবিত হচ্ছেন।
আমরা ডাঃ মনিরুল ইসলাম ও জসিম মিয়াজীর আকস্মিক মৃত্যুতে হৃদয়ে যেন রক্তক্ষরণ অনুভব করছি। আমরা গভীর শোকাহত। আমরা মরহুমদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার দুটির প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।