বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

ফসলি জমি সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে কে?
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের আবাদযোগ্য ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে। বসতঘর, বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা ইত্যাদি গড়ার প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত কমছে ফসলি জমি। তার পাশাপাশি নানা কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যেটি নিয়ে শাহরাস্তির প্রবীণ সাংবাদিক ফারুক চৌধুরী গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘মাটি কাটার ভেক্যুর দৌরাত্ম্যে ফসলি জমির সর্বনাশ’। সংবাদটি শীর্ষ সংবাদের মর্যাদা পেয়েছে।

সচিত্র সংবাদটিতে ফারুক চৌধুরী লিখেছেন, মাটি কাটার ভেক্যুর দৌরাত্ম্যে ফসলি জমির সর্বনাশ হচ্ছে। এখন থেকে ১০-১২ বছর পূর্বেও শাহরাস্তি উপজেলার ভাসমান সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর দক্ষিণে ইরি-বোরো মৌসুমে যে পরিমাণ ধান হতো, তা দিয়ে শাহরাস্তি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি হতো। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার আর শুষ্ক মৌসুমে ভেক্যুর দ্বারা মাটি কাটায় ফসলি জমি প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে।

কোনো মাঠে ৩০ শতক জমিতে ভেক্যুর দ্বারা ২-৩ ফুট গর্ত করে মাটি উঠিয়ে নিলে পার্শ্ববর্তী ১২০ শতক জমি ধান চাষে হুমকির সম্মুখীন হয়। কারণ, গর্তময় জমির কারণে পার্শ্ববর্তী জমিতে সেচের পানি দেয়া যায় না। ফলে বিপদে পড়ে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা। ফসলি জমির সমতা আনার জন্যে তাদেরকে বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়। ফলে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদী হয়ে পড়ে এবং উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

ফসলি জমির ওপর প্রতিনিয়ত যে ধরনের দখল হয়, এতে করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা 'একটু জমিও যেনো অনাবাদী না থাকে' তা আর পূরণ হচ্ছে না। ফসলি জমির ওপর ড্রেজার ও মাটি কাটার দৌরাত্ম্য কমাতে প্রশাসনের আন্তরিকতা তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এভাবে ফসলি জমি প্রতিনিয়ত কমতে থাকলে কয়েক বছর পর আর ফসলি জমি থাকবে না।

ফারুক চৌধুরী আরো লিখেছেন, শাহরাস্তি উপজেলার ছোট এলাকায় প্রায় ২০-২৫টি ব্রিক ফিল্ড রয়েছে। প্রতিটি ব্রিক ফিল্ড লক্ষ লক্ষ টন মাটি দ্বারা ইট তৈরি করছে। ব্রিক ফিল্ড বন্ধেরও সরকারি কোনো চেষ্টা নেই। ব্রিক ফিল্ডের ধোঁয়ার কারণে ফসলাদি নষ্ট হয়, গাছের ফল ঝরে পড়ে যায়। আম, জাম, কাঁঠালসহ সব ফল গাছ ফল দিতে সক্ষমতা হারাচ্ছে। তাছাড়া মাটির উপরিভাগের উর্বর অংশ কেটে নিয়ে গেলে ঐ জমিতে ফসল হয় না। যার কারণে কৃষকরা ধান চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়েছে।

প্রতিটি উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তর আছে, কৃষি অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পেলে ব্রিক ফিল্ড হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ভেক্যু, ড্রেজার বন্ধ করার জন্য সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা ছাড়া বিকল্প কিছু দিয়েই ফসলি জমি নষ্ট রোধ করা সম্ভব হবে না বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।

ফসলি জমির সর্বনাশের এ চিত্র শুধু শাহরাস্তিতে নয়, পুরো জেলায় নয়, সারাদেশেই দৃশ্যমান। কিন্তু এই সর্বনাশ রোধে স্থানীয় প্রশাসনের ছিটেফোঁটা বা বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ দেখা যায়। জেলা প্রশাসক কঠোর হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফসলি জমির সুরক্ষায় ভেক্যু, ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। অন্যথায় অধিকাংশ ইউএনও নীরব থাকেন। এতে ইউএনও অফিস, থানা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ফসলি জমিতে চলে ড্রেজার ও ভেক্যুর দাপট। এ দাপট সাধারণ ও সচেতন মানুষ দেখলেও যারা ভালোভাবে দেখার কথা, তারা না দেখার ভান করে। তারা দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভেক্যু ও ড্রেজারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের সুযোগ থাকলেও বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ ছাড়া ধারাবাহিক কোনো পদক্ষেপ নেয় না। মোদ্দা কথা, ফসলি জমি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য শিথিলতা রয়েছে, যেটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। কথা হলো, এ উদ্বেগ নিরসনে কাণ্ডারী হবে কে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়