মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫, ০৯:১৩

ইতিহাসের পাতায় চাঁদপুর মহকুমা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা

অনলাইন ডেস্ক
ইতিহাসের পাতায় চাঁদপুর মহকুমা ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা

ত্রিশের দশকে অর্থাৎ ১৯৩৬ সনে চাঁদপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব আজিজ আহম্মেদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় চাঁদপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা গঠিত হয় । তিনি ক্রীড়া সংস্থার জন্য একটি খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বাখরপুরের জমিদারদের নিকট হতে বাৎসরিক ১ টাকা রায়তি খাজনা ধার্য করে বর্তমান চাঁদপুর কলেজের মাঠটিকে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার জন্যে বন্দোবস্ত আনেন । মহকুমা প্রশাসকের প্রস্তাবে জমিদারগণ সানন্দে মাঠটির জন্যে জমি দান করে দেন । জনাব আজিজ আহম্মেদ এ জমিকে একটি খেলার মাঠে রূপান্তর করেন এবং বাংলার ছোট লাট ‘এন্ডারসন’- এর নামে মাঠের নামকরণ করেন । তিনি মাঠের পশ্চিম উত্তর- কোণে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে তাতে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম শুরু করেন। এটি চাঁদপুরের প্রথম প্যাভেলিয়ন ভবন। এ প্যাভেলিয়ন ভবনটির দক্ষিণ পাশে একটি উন্মুক্ত নাট্য মঞ্চও নির্মাণ করেন জনাব খান। এ ভবনগুলো এখনো চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে স্মৃতির নিদর্শন হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। এ মাঠেই দীর্ঘদিন চাঁদপুরের খেলাধুলা চলে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ মাঠটিতে ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর ঘাঁটি নির্মাণ করা হয়। ফলে এখানে খেলাধুলা সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধ চলাকালে স্থানীয় প্রশাসন ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম পাশে রেলওয়ে কলোনীর স্থানে একটি মাঠ নির্মাণ করে চাঁদপুরের খেলাধুলা পরিচালনা করা হয়। এছাড়া নিশি কোয়ার্টারের কাছে একটি খেলার মাঠ ছিল, সেখানেও খেলাধুলা হতো । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ অবসানে আবার ‘এন্ডারসন’ মাঠে খেলাধুলা শুরু হয় । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে এ মাঠের উত্তর পাশে চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ‘এন্ডারসন গ্রাউন্ডে’র নাম পরিবর্তন করে ‘আজিজ আহম্মেদ ময়দান’ রাখা হয় । তখনও এ আজিজ আহম্মেদ ময়দানে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার খেলাধুলা পরিচালনা করা হতো।

১৯৬০ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব আজিজুল হাকিম চাঁদপুর স্টেডিয়ামের স্থানটি হুকুম দখল করেন এবং এ স্থানটিকে একটি খেলার মাঠে রূপান্তর করেন। কিন্তু অবকাঠামোগত সুযোগ- সুবিধার অভাবে মহকুমা প্রশাসক আজিজুল হাকিমের আমলেও ‘আজিজ আহম্মেদ’ মাঠেই খেলাধুলা চলতো। পরবর্তীতে মহকুমা প্রশাসক হিসেবে জনাব মো. আমজাদ হোসেন চাঁদপুরে যোগদান করেন এবং তিনি আজিজ আহম্মেদ ময়দানটিকে মাত্র ১০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে স্থায়ীভাবে চাঁদপুর কলেজকে দান করেন । ১৯৭৫ সালে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক বর্তমান স্টেডিয়াম মাঠটিকে খেলার উপযোগী করে তোলেন এবং তখনই এ স্থানে নিয়মিত খেলাধুলা শুরু হয়। যাঁরা মহকুমা প্রশাসক হিসেবে চাঁদপুরে দায়িত্ব পালন করেন, মূলত তাঁরাই চাঁদপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার পদাধিকার বলে সভাপতি থাকতেন এবং সম্পাদক হতো ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়া সংগঠকদের মধ্যে থেকে মনোনয়ন বা নির্বাচনের মাধ্যমে ।

চাঁদপুর মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণার পর ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা নতুনভাবে গঠন করা হয় । এরপর থেকে ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসকগণ দায়িত্ব পালন করেন এবং এ পর্যন্ত যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন : জনাব আলহাজ্ব জানিবুল হক (১৯৮৪-৮৫), জনাব এসএম শামসুল আলম (১৯৮৫-৮৯), জনাব মোহাম্মদ আবুল কালাম (১৯৮৯), জনাব মো. আবুল কাশেম (১৯৯০-৯১), জনাব মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী (১৯৯১-৯৩), জনাব মো. গোলাম কিবরিয়া (১৯৯৩-৯৬), জনাব মো. খালিদ আনোয়ার (১৯৯৬-৯৮), জনাব মো. রেজাউল করিম (১৯৯৮-২০০১), জনাব মো. মনিরুজ্জামান খান (২০০১-০২), জনাব মো. আব্দুল রব হাওলাদার (২০০২-০৪), জনাব মো. তাহেরুল ইসলাম (২০০৪-০৬), জনাব মো. আব্দুল খালেক (২০০৬), জনাব আ ক ম শাহীদুর রহমান (২০০৬-২০০৮), বিশ্বাস মো. আজিম উদ্দিন (২০০৯-২০১০), জনাব প্রিয়তোষ সাহা (২০১০-২০১২), জনাব মো. ইসমাইল হোসেন (২০১২-২০১৫) এবং জনাব আব্দুস সবুর মণ্ডল (২০১৫ এবং পরবর্তী সকল জেলা প্রশাসক)। চাঁদপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা এবং চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা হচ্ছেন- জনাব এমএ সালাম, জনাব একিউএম লুৎফুর রহমান চুন্নু মিয়া, অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, জনাব মো. ফরিদ উল্যাহ (১৯৫২-১৯৬৫), জনাব সামছুদ্দিন আহমেদ বিএ (১৯৬৫-১৯৭০), ম্যাজিস্ট্রেট নুরুজ্জামান ভূইয়া (ভারপ্রাপ্ত), জনাব মনির আহম্মেদ (১৯৭১-২০০১), জনাব দেওয়ান আরশাদ আলী (২০০২-০৯) এবং জনাব গোলাম মোস্তফা বাবু (২০১০ থেকে ২০২৪)। সূত্র : চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়