বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ২১:৫৮

ধনাগোদা নদীতে বীরদর্পে চলছে অবৈধ ভাসমান রেস্টুরেন্ট! প্রশাসন নীরব

মতলব উত্তর ব্যুরো
ধনাগোদা নদীতে  বীরদর্পে চলছে অবৈধ ভাসমান রেস্টুরেন্ট! প্রশাসন নীরব

মতলব উত্তরে ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের চরমাছুয়া এলাকায় ধনাগোদা নদীর বুকে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে 'ধনাগোদা রিভারভিউ রেস্টুরেন্ট'। প্রায় ২০০ ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই বিশাল ভাসমান রেস্টুরেন্ট এখন নদী দখলের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪ জুন ২০২৫ তারিখে অপসারণ চিঠি দেয়ার পরও রেস্টুরেন্টটি দিব্যি চালু রয়েছে। যেনো প্রশাসনের মাথা ব্যথাই নেই।

পাউবো’র ডুবগী পানি উন্নয়ন শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন খান স্মারক নং- উসগ্র/ডুব-১০২-এর মাধ্যমে রেস্টুরেন্টটির বিরুদ্ধে উচ্ছেদ নোটিস জারি করেন। তাতে মো. সাইফুল মোল্লা ও মো. সবুজ মিয়াকে তিন দিনের মধ্যে নিজ ব্যবস্থাপনায় স্থাপনাটি সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এর কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানা পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সাতটি দপ্তরে পাঠানো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, চিঠি পাঠিয়ে পাউবো নিশ্চুপ, আর রেস্টুরেন্ট চলছে বীর দর্পে, যেনো কারো কোনো ক্ষমতা নেই এটি বন্ধ করার।

এ নিয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, আমরা অপসারণের চিঠির একটি অনুলিপি পেয়েছি। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জায়গা, উচ্ছেদের দায়িত্ব তাদের।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি সম্পত্তি দখলের মতো স্পষ্ট অপরাধেও কেনো ইউএনও নিজে উদ্যোগ নিচ্ছেন না বা নিতে পারছেন না।

স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, এই অবৈধ রেস্টুরেন্ট প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করেই চলছে। নোটিস দেয়ার এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, এতোদিনেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন?

কেউ কেউ নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, রেস্টুরেন্ট মালিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকায় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।

বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুসারে, জলাধার বা নদীর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করতে পারে, জরিমানা আরোপ করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের ‘দায়সারা’ আচরণ আইন প্রয়োগের বিষয়টিকে অসম্মানিত করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম সাহেদের ভাষ্য, আমরা বিষয়টি জানি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রশ্ন হলো : এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলো, এখনো “ব্যবস্থা নেয়া হবে”—এই ‘প্রক্রিয়াগত কথা’ দিয়ে কি আইন প্রয়োগ করা যাবে? নাকি এই ‘কথা’ আসলে অব্যবস্থার আড়ালে দায় এড়ানোর কৌশল?

ধনাগোদা নদী মতলব উত্তরের হাজারো মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে সম্পর্কিত। অথচ সেই নদীর বুক দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ রেস্টুরেন্ট দিনের পর দিন চললেও কারো টনক নড়ছে না।

এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে রেস্টুরেন্টটি উচ্ছেদ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনকে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা অবৈধ দখলদারদের কাছে মাথা নত করেনি। চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ নয়। সরকারি দপ্তরের এভাবে চুপ থাকা বড়ো ব্যর্থতা। প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে আরও বড়ো দখলবাজিকে উৎসাহিত করবে। নদী রক্ষা করতে হলে দখলদারকে নয়, আইনের শাসনকে জয়ী হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়