প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩১
বাজেট অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিনের জমানো কথার যেনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে চাঁদপুর পৌরসভার বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানের সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি ‘পৌরসভার স্কুলগুলো বন্ধ ও জনবল কমানোর জোর দাবি’ শিরোনামের পৃথক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ১২৮ বছর বয়সী চাঁদপুর পৌরসভার নিজস্ব আয় খুব একটা বেশি নয়। পৌরকর দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই শুভঙ্করের ফাঁকি দিচ্ছেন। যতোটুকুই আদায় হচ্ছে তা থেকে অপ্রয়োজনীয় এবং অলাভজনক খাতে ব্যয় হওয়াটা মোটেই সমীচীন নয়। এ উপলব্ধি থেকে বিশিষ্ট পৌর নাগরিকদের মন্তব্য হচ্ছে : চাঁদপুর পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেগুলো পরিচালনায় ব্যয় হয় বছরে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো মানের মধ্যে পড়ে না। আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষক হিসেবে চাকরি নিয়েছেন, তাদের নব্বইর ভাগই ইন্টারভিউ দিয়ে যোগ্যতা যাচাইয়ে চাকরি নিয়েছেন এমনটাও নয়। তাহলে মানহীন স্কুলে নাগরিকদের বাচ্চাদের পড়িয়ে কেনো প্রজন্ম ধ্বংস করা হচ্ছে? এটা পৌর নাগরিকদের সাথে এক রকম প্রতারণা। কিছু অযোগ্য বেকার লোককে লালন-পালন করা ছাড়া অন্য কোনো লাভ দেখছে না পৌরবাসী। এই শহরে সরকারি-বেসরকারি এতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার পরও পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার কোনো দরকার নেই। তাই পৌরসভার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া দরকার। চাঁদপুর পৌরসভায় প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অনেক বেশি। এ পৌরসভায় এতো জনবল থাকার প্রয়োজন নেই। তাই জনবলও কমাতে হবে। এভাবেই বিভিন্ন খাত থেকে ব্যয় সংকোচন করে ব্যয় খাতে বাজেট কমাতে হবে। তাহলে পৌরসভার রাজস্ব আয় থেকে নাগরিক সেবা বাড়ানো যাবে। এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসককে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
|আরো খবর
সোমবার চাঁদপুর পৌরসভার ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকে এই বক্তব্যগুলো আসে। যেটা ছিলো দীর্ঘদিনের জমানো কথার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। যে প্রকাশে ছিলো না কারো চোখ রাঙানির ভয় এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চাপ। বিশিষ্টজনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশাসহ স্পষ্টভাষী আরো ক’জন। তাঁদের এই মতামতকে উপস্থিত অনেকেই সমর্থন জানান। আমরাও সমর্থন জানাই। কারণ, চাঁদপুর পৌরসভার অগ্রগতিকে পেছন থেকে টেনে ধরে অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অতিরিক্ত জনবলই।
হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, চাঁদপুর পৌরসভার স্কুলগুলোতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেককে চেয়ারম্যান ও মেয়রগণ শাস্তিমূলক বদলি করে আসছিলেন দীর্ঘদিন যাবত। যারা অনিয়ম-অন্যায় করে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসেন, তারা থাকে নৈতিকতাহীন, তারা শিক্ষার্থীদের ঠিকমত পড়ান না, সত্যি বলতে কি পড়াতে পারেন না। তারা স্কুলে সময় কাটান শিক্ষকতার অভিনয়ে এবং মাসশেষে নিতান্তই বেতন গোণেন। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন বিভাগ অপ্রয়োজনীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীতে ভরপুর। বছরের পর বছর পৌরসভা কার্যালয়ে এবং স্কুলগুলোতে ভোটের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের চাপ ও তদবির, চেয়ারম্যান/মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান কিংবা আত্মীয়তার সূত্রে অনেককে চাকুরি দিয়ে বস্তুত পৌরসভার রাজস্ব আয়ের সিংহভাগকে গলাধঃকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন পৌরসভা ও চাঁদপুরের বাইরের পৌরসভায় বর্তমান পৌর প্রশাসক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির মাধ্যমে চাঁদপুর পৌরসভার কিছু জনবল কমিয়েছেন। কিছুটা ভার কমিয়েছেন। আরো জনবল কমাতে পারলে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্ব এড়াতে পারলে চাঁদপুর পৌরসভার ব্যয় সংকোচন সম্ভব হবে এবং পৌরসভাটি নাগরিকবান্ধব, বিশেষ করে অগ্রগতির পথে দ্রুত ধাবমান হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।