বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০০:৫৭

বিভিন্ন স্থানে বর্জ্যের ট্রান্সফার-স্টেশনে শহরের সৌন্দর্যহানি ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

মোটরচালিত ভ্যান চায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তবেই হবে অনেক সমাধান

কবির হোসেন মিজি
বিভিন্ন স্থানে বর্জ্যের ট্রান্সফার-স্টেশনে শহরের সৌন্দর্যহানি ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে
ছবি :চাঁদপুর কন্ঠ

চাঁদপুর শহরে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের ব্যবহার্য বর্জ্যের পরিমাণ। এ বর্জ্য সামলাতে পৌরসভা শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করেছে ট্রান্সফার স্টেশন ও ছোট-বড় ডাস্টবিন। কিন্তু এই উদ্যোগের সুফল যতোটা, ভোগান্তি যেন তার চেয়ে বেশি।

শহরের নতুন বাজার সিএসডি গোডাউনের সামনে, ছায়াবাণী-মাতৃপীঠ স্কুল সংলগ্ন চার রাস্তার মোড়ে, ঘোষপাড়া পুলের পাশে, মিশন রোড ও সাবেক বঙ্গবন্ধু সড়কের সংযোগস্থলে, পৌর ঈদগাহ সংলগ্ন ব্রিজের নিচে এবং পুরাণবাজারের বিভিন্ন স্থানে বড়ো আকারের ট্রান্সফার স্টেশন রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেই এসব স্টেশনের অবস্থান।

এসব ডাস্টবিন এবং ট্রান্সফার স্টেশন করার উদ্দেশ্য ছিল সহজে বর্জ্য ফেলা, দ্রুত সরিয়ে নেয়া এবং শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

দিনের পর দিন এসব স্থানে জমে থাকে পচা-বাসি ময়লা। প্লাস্টিক, কাগজ, উচ্ছিষ্ট খাবার, পলিথিনের স্তূপে ঢেকে যায় নিকটস্থ রাস্তার অনেক জায়গা। বৃষ্টির পানির সাথে মিশে দুর্গন্ধময় তরল শহরজুড়ে গড়িয়ে পড়ে। এতে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

দোকানপাট ও আশপাশের বাসাবাড়ির মানুষও নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছেন।

এসব বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু, উড়তে থাকে মাছি। ডাস্টবিন ঘেঁটে খাবার খুঁজে নেয় পশুপাখি, যেমন গরু, কুকুর, বিড়াল। এতে আরও বাড়ছে দুর্গন্ধ এবং নোংরামি।

শহরবাসীর প্রশ্ন, একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা নিয়মিত বর্জ্য অপসারণের মতো মৌলিক কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে ব্যর্থ কেন?

বিশেষ করে নতুন বাজার, ছায়াবাণী, ঘোষপাড়া ও স্ট্র্যান্ড রোডের মতো ব্যস্ত এলাকায় দিনে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। অথচ তাদের নাকাল হতে হয় প্রতিদিন দুর্গন্ধ ও কাদাজলের মাঝে।

শহরবাসী মনে করেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যখন বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন, তখন তা সরাসরি স্বর্ণখোলার মূল ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে ফেললেই শহরের সৌন্দর্য রক্ষা পাবে এবং দুর্গন্ধ ছড়াবে না।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অভিমত, পা-চালিত ভ্যানে এতদূর বর্জ্য বহন করা কষ্টকর। তারা চাইছেন মোটরচালিত ভ্যান। তাহলে সহজে ও দ্রুত সময়ে বর্জ্য সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

পৌরসভা যদি মোটরচালিত ভ্যান সরবরাহ করে, তাহলে শহরের রাস্তায় দীর্ঘ সময় ময়লা জমে থাকার সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

এ সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ জরুরি। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ময়লা সরানো, পর্যাপ্ত গাড়ি ও জনবল নিশ্চিত করা এবং ডাস্টবিনগুলোর চারপাশে সুরক্ষা দেয়াল বা ছাউনি দেয়া দরকার।

সম্ভব হলে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা গারবেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করা এখন সময়ের দাবি।

একটি শহর শুধু উন্নয়ন প্রকল্পে নয়, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশই একে বাসযোগ্য করে তোলে। চাঁদপুর শহরের সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে এখনই সময় টেকসই উদ্যোগ গ্রহণের।

চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, শহরে এভাবে উন্মুক্ত অবস্থায় বর্জ্য ফেলার কোনো নিয়ম বা সুযোগ নেই। এগুলো আইনগতভাবেও বৈধ নয়। তাই পৌর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, তারা একটি সুপরিসর নতুন জায়গা কেনার পরিকল্পনা করছে, যেখানে আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ সম্ভব হবে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়