সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ৩৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সফলতার নেপথ্যে

ড. মোঃ নাছিম আখতার
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সফলতার নেপথ্যে

জীবনে সফলতা কে না চায়? আমরা সফল মানুষের গল্প বলতে ও শুনতে পছন্দ করি। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, প্রাত্যহিক জীবনে একটু সচেতন থাকলে আমরাও পেতে পারি জীবনের কাঙ্ক্ষিত সফলতা! মানুষ এক দিনে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায় না। এর শুরুটা হয় স্বপ্ন দিয়ে। স্বপ্নের বাস্তবায়নে সম্পাদিত কর্মে প্রতিটি মুহূর্তে মনঃসংযোগের প্রয়োগই তাকে সফলতার চূড়ান্ত ধাপে অধিষ্ঠিত করে।

মনঃসংযোগ অর্জনে চাই নিরন্তর চেষ্টা। মনঃসংযোগ অনুশীলনের ধাপভিত্তিক চেষ্টার নামই হলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। মনঃসংযোগ অনুশীলনের আধ্যাত্মিক চেষ্টার নাম হলো ধ্যান বা মেডিটেশন।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় বই পড়া, লেখার চর্চা, মুখস্থ করা, গণিতের সমাধান করা- সব কিছুই কিন্তু মনঃসংযোগের ধাপভিত্তিক অনুশীলন।

এমনকি তিন ঘণ্টা বসে কেন পরীক্ষা দেওয়াও মনঃসংযোগ চর্চার অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। মনঃসংযোগের আরেকটি প্রাত্যহিক চর্চা হলো গণিতের হিসাবগুলো কাগজে-কলমে করার অভ্যাস গড়ে তোলা। জীবনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় গাণিতিক হিসাবে ক্যালকুলেটরের ব্যবহার মনঃসংযোগ বৃদ্ধির অন্তরায়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই এক ধরনের এবং প্রশ্নের প্যাটার্ন ভিন্ন ধরনের।

পাঠ্যবই ও প্রশ্নপত্রের মধ্যে এমন বিশাল ব্যবধান থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পড়ানো যাচ্ছে না। ফলে পাঠ্য বই পড়ার মাধ্যমে মনঃসংযোগ বাড়ানোর অভ্যাস গড়ে তোলা যাচ্ছে না। এতে সমগ্র জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বর্তমানে সমাজের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আমরা মনঃসংযোগ বিচ্যুতির চর্চায় মেতে আছি। যেদিকে দৃষ্টি যায়, দেখি কেউ বসে নেই।

সবাই নিজের জীবন গঠনের সময় অন্যকে দিতে ব্যস্ত। তবে সেটি সজ্ঞানে নয়, না জেনে। দেখি পিয়ন টুলে বসে আছে কর্মকর্তার হুকুম তামিলের অপেক্ষায়, কিন্তু টুলে বসে থাকলেও চোখটি স্মার্টফোনে। নিজের জীবনের মূল্যবান সময়ক্ষেপণের জন্য স্মার্টফোন হয়েছে এক অনন্য সাধারণ মাধ্যম। সংবাদপত্রের খবরে দেখেছি ইন্টারনেটের কোনো ইংরেজি কনটেন্টের অংশ গুগল অনুবাদের মাধ্যমে পাঠ্য বইয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। টিচার্স কমনরুমে দেখি, বই পড়ে ক্লাসের প্রস্তুতি বিরল ঘটনা। সবার চোখ মুঠোফোনে। আমরা নিজেরাও পড়তে ভুলে গেছি বা যাচ্ছি। আবার শিশুরাও যে পড়বে, সেটিও হয়ে উঠছে না। আমরা তো আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের হাতে বই দেখেছি। আর এখনকার বাচ্চারা বড়দের হাতে সকাল, দুপুর, বিকেল, রাতে শুধু মুঠোফোন দেখছে। তাদের ধারণা জন্মাচ্ছে, এভাবেই বুঝি জীবন গড়তে হয়। কোনো কিছুতেই দীর্ঘক্ষণ মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা আমরা হারাচ্ছি। জনসচেনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সময়ের দাবি।

জীবনে উন্নতি সাধন করার জন্য দেহকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি আমাদের মনকেও সুস্থ রাখা প্রয়োজন রয়েছে; যে কাজটি আমরা সহজেই করতে পারি ধ্যানের মাধ্যমে। মেডিটেশন হলো মনের এমন এক অবস্থা, যখন আমাদের মস্তিষ্ক অপ্রয়োজনীয় সব কিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে নিমগ্ন হয় এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করতে শেখে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের থেকে শুরু করে নোবেল বিজয়ী, বিজ্ঞানী বা লেখকদের অনেকের মধ্যেই একটি অভ্যাস খুবই সাধারণ, আর তা হলো মেডিটেশন। দৈনিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেডিটেশন পড়াশোনা ও কর্মে একাগ্রতা আনয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবেই।

কৃতজ্ঞতা হলো একটি মানবীয় গুণ, যা সুখী ও সফল হওয়ার জন্য একান্ত অপরিহার্য। কৃতজ্ঞতা মানুষকে ইতিবাচক আবেগ অনুভব করতে সহায়তা করে। সুন্দর অভিজ্ঞতা উপভোগ, প্রতিকূলতার সঙ্গে মোকাবেলা এবং মানুষে-মানুষে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে কৃতজ্ঞতা, ভক্তি বা শ্রদ্ধার জুড়ি মেলা ভার। যখন আমরা নিজেরা কৃতজ্ঞ হই- মনের ভেতরে এক অনাবিল তৃপ্তি এবং শান্তির অনুভূতি আসে, যা আমাদের মনঃসংযোগকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

জীবনে সফলতা লাভের জন্য শারীরবৃত্তীয় জৈব প্রাণরস বা হরমোনের সঠিক মাত্রায় নিঃসরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এন্ডোরফিন, সেরোটনিন, ডোপামিন এবং অক্সিটোসিন হরমোনের সঠিক মাত্রায় নিঃসরণ মানুষকে প্রাণবন্ত ও একাগ্রচিত্তের অধিকারী করে। এগুলোর সঠিক নিঃসরণের জন্য মানবজীবনে খেলাধুলা ও ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। আর ডোপামিন হরমোন নিঃসরণে সূর্যালোকের উপস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যালোক থেকে যে ভিটামিন-ডি আমরা পাই, সেই ভিটামিন-ডির সঙ্গে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সূর্যের আলো ভিটামিন-ডির প্রধান উৎস। শরীরে ভিটামিন-ডির ঘাটতি হলে মনের একাগ্রতা বা মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়। কারণ শরীরে ভিটামিন-ডির ঘাটতিতে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরেও অলসতা ও ক্লান্তিবোধ ভিটামিন-ডির অভাবেই হয়। অকারণে ক্লান্তিভাব, ঝিমুনি এবং শুয়ে থাকার ইচ্ছা হতে পারে শরীরে ভিটামিন-ডির অভাবে।

মনঃসংযোগের ঘাটতিতে জীবন হতে পারে অসফল। তাই জাতি গঠনে সর্বাগ্রে প্রাধান্য পাক মনঃসংযোগের নিরন্তর চর্চা।

লেখক : উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়