মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   উত্তরায় স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
  •   উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে নিহত ১৯, জানালো ফায়ার সার্ভিস
  •   উত্তরায় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
  •   চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
  •   রোগীর চাপে বেসামাল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল!

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৬

পৃষ্ঠপোষকতা ও উপকরণের অভাবে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে নেই জমজমাট অবস্থা

ক্রীড়াকণ্ঠ প্রতিবেদন
পৃষ্ঠপোষকতা ও উপকরণের অভাবে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে নেই জমজমাট অবস্থা

চাঁদপুর শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠ। এটি ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রাচীন একটি মাঠ। এক সময় এই মাঠটি খুব ব্যস্ত সময় পার করতো। একটি টুর্নামেন্ট শেষ না হতেই আরেকটি টুর্নামেন্টের আয়োজন চলতো। ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল টুর্নামেন্টের আয়োজন চলতো সিজনভেদে।

টুর্নামেন্টে নিজেদের দলকে ফিট রাখার জন্যে এবং নিজেদের ক্লাবকে প্রতিষ্ঠিত করা ও ভালো খেলোয়াড় তৈরি করার জন্যে প্রতিদিন প্রশিক্ষণসহ শারীরিক কসরতের আয়োজন চলতো মাঠের প্রতিটি কোণে। সংগঠনগুলোর এমন তৎপরতায় তৈরি হতো নতুন নতুন খেলোয়াড়। একটি সময় এই মাঠের এবং এখানকার খেলোয়াড়দের ভালো সুনাম ও ঐতিহ্য ছিলো, যা এখন শুধুই স্মৃতি। বর্তমান সময়ে মাঠটি ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এবং বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের ওয়াজ মাহফিল আয়োজনে।

শনিবার (১৯ জুলাই ২০২৫) বিকেলে বাবুরহাট মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মাঠের ঘাসগুলো অনেক বড়ো হয়ে গেছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় মাটি নরম হয়ে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বাবুরহাট মাঠের খেলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে মাঠের ক’জন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়ের সাথে কথা হয়। তারা জানান এ ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার নানা কারণ। তারা বলেন, বাবুরহাট মাঠে খেলাধুলা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ কারণেই বর্তমানে তেমন কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন হচ্ছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান হলে এই সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে। কয়েকজন আবার বলেন, বাবুরহাট এলাকায় যে ক’টি ক্লাব রয়েছে, প্রত্যেকটি ক্লাবেই নির্দিষ্ট কোনো আয়ের সুযোগ না থাকায় ক্লাবগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্লাবগুলো থেকেও কোনো খেলার আয়োজন হচ্ছে না। এদিকে বাবুরহাটের একমাত্র নিবন্ধিত ও প্রতিষ্ঠিত একাদশ ক্লাবটিও এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন কোনো ধরনের খেলার আয়োজন করছে না। একাদশ ক্লাবটিতে নতুন সদস্য না নেয়ার কারণে পুরানো সদস্যরা বয়োবৃদ্ধি বা বার্ধক্যহেতু খেলাধুলার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে জানান ক’জন।

তারা আরো জানান, এই অঞ্চলে কোনো ক্রীড়া একাডেমী না থাকায় নতুন খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। ফলে দিন দিন মাঠের খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারা আরো জানান, আমাদের মধ্যে খেলা কমে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, প্রত্যেকেরই নিজ নিজ পরিবার রয়েছে, আর আমাদের এখানকার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবারের দায় তাদের উপরও আসে। যার ফলে অনেকেই খেলা পুরোপুরি বাদ দিয়ে বিভিন্ন কর্মে জড়িয়ে পড়ছে, আবার অনেকে প্রবাসে গমন করছে। যাদের পরিবার মোটামুটি বিত্তশালী, তাদের মা-বাবা চায় না যে তাদের সন্তান মাঠে খেলাধুলা করুক। তারা মনে করে এতে সময় নষ্ট হবে। খেলার সময় তারা বিভিন্ন কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

তারা জানায়, আমাদের মধ্যে যারা বর্তমানে মাঠে খেলাধুলা করছি, তাদের অধিকাংশই নিজের বডি ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যে বা খেলার প্রতি আসক্তি থাকার কারণেই খেলছি। মাঠে যে ক’জন খেলছেন তারা খুব দুঃখের সাথে জানান যে, তারা খেলাধুলায় উপকরণহীনতায় ভুগছেন। মাঠের ঘাসগুলো কাটার জন্যে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

শনিবার মাঠের এক কোণে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জন যুবক সকলে বসে মোবাইলে অনলাইনে গেমস খেলছে। এ মোবাইলে আসক্তির কারণেও মাঠে দিন দিন খেলাধুলা ও খেলোয়াড় কমে যাচ্ছে।

তারা আরো জানান, এই অঞ্চলে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থাকার পরেও এ প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো খেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটিতে বার্ষিক যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় তা শুধুমাত্রই ক’দিনের জন্যে। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে যদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরি হবে ও মাঠ সবসময় জমজমাট থাকবে।

বাবুরহাট অঞ্চলে খেলাধুলা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে এ অঞ্চলের সমাজ সচেতনগণ যা মনে করছেন, তা হচ্ছে : পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা, ক্রীড়া উপকরণ না থাকা, কোনো ধরনের ক্রীড়া একাডেমী না থাকা, বর্তমানে এর মাধ্যমে কোনো ধরনের কর্মের ব্যবস্থা না থাকা, ক্রীড়াচর্চায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগহীনতা আর ক্রীড়া সংগঠনগুলোর নিষ্ক্রিয়তা।

বাবুরহাট অঞ্চলের খেলাধুলার মান বজায় রাখার জন্যে ও এ অঞ্চলের বর্তমান প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিতে প্রশাসনের সহযোগিতা এবং বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ সহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী ও সমাজ সচেতনগণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়