সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ২১:৩৪

‘রাজনীতির বিকৃত চর্চা’

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
‘রাজনীতির বিকৃত চর্চা’

'রাজনীতি' জনসেবার সর্বোচ্চ মাধ্যম। এটা এমন এক মাধ্যম, যাতে  সমাজের সর্বোচ্চ থেকে সর্ব নিম্ন পর্যায়ে অবাধে যাওয়া যায়, ভালো-মন্দ সব খোঁজ খবর নেয়া যায়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে রাজনীতির কালচারটা পরিবর্তন এবং অনেক ক্ষেত্রে বিকৃত হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির অবস্থা হচ্ছে, ধনী আরো ধনী হবে, গরিব অসহায় আরো নিঃস্ব হবে। যে জনগণ রাজনীতির মূল উৎস, রাজনীতিকরা দেয় না তাদের মূল্য। জনগণ যদি তাদের মূল্য বুঝতো, তাহলে তারা তথাকথিত ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে ভোটদানে বিরত থাকতো। মহামূল্যবান জনগণকে পুঁজি করে রাজনীতি করে বেহুদা বাহাদুরি করে আর আমজনতা হয় পণ্য।

বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই এমনই রাজনীতির নামে অপকাণ্ড ঘটে চলেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে বা ক্ষমতায় থাকার জন্যে মূল্যবান জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতার সিঁড়ি বানানো হচ্ছে। এ ধারা যতোদিন চলবে, ততোদিন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হতে থাকবে। এটাকেই বলা যেতে পারে বিকৃত রাজনীতির চর্চা। 

চাঁদপুরেও এমন একটি বিকৃত রাজনীতির চর্চা সর্বমহলের অগোচরে সুকৌশলে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা দিবালোকের মতো সত্য। চাঁদপুরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্যে ৩ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রি. তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের চাঁদপুরের নেতৃবৃন্দ শহরের ট্রাক রোডস্থ পোদ্দার বাড়ির সামনে একটি টিনের ঘরে গোপনে বোমা বানাচ্ছিল। তখন একটি বোমা অসাবধানতাবশত টেবিল থেকে পড়ে বিস্ফোরিত হয়ে ৪জন ছাত্র নেতা অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম শহিদ হিসেবে চাঁদপুরবাসীর কাছে স্বীকৃতি লাভ করেন। যেখানে বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিলো, সেখানে পোদ্দার বাড়ির লোকজন মহান শহিদদের নামে একটি স্মৃতি ফলক তৈরি করার জন্যে কয়েক শতাংশ ভূমি দান করেন। যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন বিনম্র শ্রদ্ধায় তাঁদের নামগুলো নতুন প্রজন্মকে স্মরণে রাখার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করা হলো--কালাম, খালেক, সুশীল ও শংকর। এই মহান শহিদদের স্মরণে নির্ধারিত স্থানে একটি স্মৃতিফলক স্বাধীনতার ৩৫ বছরে নির্মাণ না করায় স্থানটি বেদখল হয়ে বর্জ্য ভাগাড়ে পরিণত হয়। অতঃপর ২০০৩ সালে চাঁদপুরের প্রগতিশীল বিএনপি নেতা, বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিম  চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে উল্লেখিত স্থানে মহান শহিদদের স্মরণে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণের প্রস্তাব করলে সভায় উপস্থিত তৎকালীন চাঁদপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আনম এহছানুল হক মিলন, চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএ সুলতান টিটু, চাঁদপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত এমএ মতিন, চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নূরুল হুদা এবং স্বনামধন্য ব্যবসায়ী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বর্তমান চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ তৎকালীন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সভায় উপস্থিত সম্মানিত সদস্যগণ সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। 

চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক  আ. রব হাওলাদারকে নির্মাণ কমিটির সভাপতি ও অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়। বর্ণিত নির্মাণ কমিটির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে বরাদ্দকৃত ভূমি উদ্ধার করে উক্ত স্থানে 'মুক্তি সৌধ' নামে একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়। যা চাঁদপুর ট্রাক রোডে আজও কালের সাক্ষী হয়ে দণ্ডায়মান আছে। উক্ত মুক্তিসৌধের বাউন্ডারী দেয়ালে নির্মাণ কমিটির নামে মার্বেল পাথরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে একটি ফলক এখনো বসানো আছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিকৃত রাজনীতির শিকার হলেন ক্ষুদ্র একজন রাজনৈতিক কর্মী, যার নামটি মার্বেল পাথর থেকে মুছে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই মার্বেল পাথরটি কাছ থেকে পরখ করলে একেএম সলিম উল্যাহ সেলিমের নামটি বুঝতে অসুবিধা হয় না।

অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিম শুধু 'মুক্তি সৌধ'ই নির্মাণ কাজের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাঁর উদ্যোগে ও প্রস্তাবনায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। উক্ত শহিদ মিনার নির্মাণ কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. তাহেরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিম। এছাড়া চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্যোক্তাদের অন্যতম সদস্য অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিম। যিনি পরবর্তীতে দীর্ঘ ১২ বছর একাধারে মেলার মহাসচিব এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩ বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করাকালীন তৎকালীন ফ্যাসিবাদী ডা. দীপু মনির বিকৃত মানসিকতায় বিজয় মেলার মূল থিম পাল্টিয়ে সর্বদলীয় প্রতিষ্ঠানটিকে দীপু মনির প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্যে মেলার আঙ্গিনা থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি, ব্যানার, ফ্যাস্টুন নামিয়ে একদলীয় বিজয় মেলায় রূপান্তরিত করলে সাথে সাথে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মেলার চেয়ারম্যান থেকে জনাব সেলিম পদত্যাগ করেন। যা চাঁদপুরের সকল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিমের প্রতিবাদটি সর্বমহলে সমাদৃত হয়। সত্যিকার অর্থে আমরা যতটুকু জানা যায়, তা হলো এই অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম ১৯৭৯ সাল থেকে অদ্যাবধি দীর্ঘ বছর চাঁদপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন নিরঅহংকারী, বিনয়ী, সৎ জনবান্ধব, স্পষ্টভাষী নির্ভীক সক্রিয় কর্মী। যার কোনো উচ্চাভিলাষ নেই ও ছিলো না। এজন্যেই চাঁদপুর জেলা বিএনপির জননন্দিত নেতা শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক তাঁকে দলের জেলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করে নিজেই নন্দিত হয়েছেন সর্মমহলে। অতএব, কেউ যেনো ভবিষ্যতে রাজনীতিতে বিকৃত মানসিকতার পরিচয় না দেয় এবং বিকৃত রাজনীতির চর্চা না করে--সেটি সুধীজনের প্রত্যাশা।   

অ্যাড. একেএম সলিম উল্যাহ সেলিমকে এ সকল বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার মতো ক্ষুদ্র লোকের নাম মার্বেল পাথরে শোভা পায় না। এ জন্যে বন্ধুরা আমার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। এতে আমি খুশি হয়েছি। তিনি আরো বলেন, সর্ব কিছুতে আমিত্ব বাদ দিয়ে আমরা শব্দটি ব্যবহার করা উচিত। যারা বিকৃত রাজনীতির চর্চা করে তাদের প্রতি আমার অনুরোধ : স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সততার ভিত্তিতে ইনসাফভিত্তিক দুর্নীতিমুক্ত থেকে মানবিক কাজ করে আমরা সবাই যেনো রাজনীতিকে মানুষের কাছে জনসেবার উত্তম মাধ্যম হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়