প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ২২:৩৯
মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির চাঁদপুর জেলা সম্মেলন
বৈষম্য দূর করতে মাঠের আন্দোলন প্রয়োজন, কূটনৈতিক তৎপরতায় দাবি আদায় হবেনা : কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন

'শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি কর, উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ কর' এ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি চাঁদপুর জেলা কমিটির সম্মেলন শনিবার (২ আগস্ট ২০২৫) বিকেল ৩ টায় চাঁদপুর রোটারী ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের চাঁদপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. বিলাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কবি-প্রাবন্ধিক-গবেষক জাহাঙ্গীর হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরে আলম বিপ্লব ও সহ-সভাপতি অমৃত কারণ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল গনি, সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী আক্কাছ, কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক মো. ফয়েজুল হক ফয়েজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির চাঁদপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হোসেন ঢালী। অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. বাকী বিল্লাহ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কে এম ফয়েজুল আলম,
মতলব উত্তর উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন, শাহরাস্তি উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ও জেলা কমিটির নারী বিষয়ক সম্পাদক সেলিনা আফরোজ।
মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক এবং এ যাবৎকালে সংগঠনের যেসব সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের জন্যে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাবুল হোসেন। সম্মেলনের শুরুতে ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
সম্মেলনের আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য সচিব ও জেলা কমিটির সদস্য মো. মাহফুজুর রহমান ও জেলা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ হানিফ।
কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন শাহরাস্তি উপজেলা সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ও সঞ্চালনা করেন জেলা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রতন।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকরাই নয়, শিক্ষার্থীরাও বৈষম্যের শিকার। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও শিক্ষা বে- সরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকিকরণ অবস্থায় রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের বেশিরভাগ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে খুবই অসচ্ছল। এসব অভিভাবক অনেকটাই অসচেতন এবং লেখাপড়া কম জানা। এদের সন্তানদের পাঠদান করতে হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরই। তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণের কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এখনকার বাস্তবতায় হলফ করে বলতে পারি, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া ভালো হয়, নিয়মিত ক্লাস হয়। একই সিলেবাস, একই পাঠ্যপুস্তক, অথচ সরকারি-বেসরকারি বৈষম্যের বাহাস। আমরা শিক্ষক হিসেবে খুবই লজ্জিত যে, এন্ট্রি লেভেলের একজন শিক্ষক ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পায়। এ টাকা দিয়ে ১০ দিন চলাও সম্ভব নয়। ফলে শিক্ষকদের অনেকে প্রাইভেট-টিউশনিতে ঝুঁকে পড়ে। এদেরকে পড়াতেই তাঁরা ক্লান্ত। এর বিরূপ প্রভাব শ্রেণি কক্ষে পড়ে। একটি বিদ্যালয়ে ২/৩ জন শিক্ষক ছাড়া আর কেউই প্রাইভেট পড়ান না। ফলে এসব শিক্ষকের আরও করুণ অবস্থা। অনতিবিলম্বে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে বৈষম্য দূর করতে হবে। দুর্মূল্যের এ বাজারে পে-স্কেল অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, যে সরকারই আসছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবির সাথে সম্পূর্ণ একাত্মতা পোষণ করলেও কাজের কাজ উল্লেখ করার মতো কিছুই না। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে সকল বৈষম্য দূর করতে। অভ্যুত্থানের একবছর গত হলেও শিক্ষকদের বৈষম্য দূর হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য দূর করতে মাঠের আন্দোলন প্রয়োজন। কূটনৈতিক তৎপরতায় দাবি আদায় হবে না। তিনি এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে আগামীর আন্দোলনগুলোতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি মো. নূরে আলম বিপ্লব বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষার শতকরা ৯২ ভাগ দেখেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। দেশের এ বিস্তৃত শিক্ষা ব্যবস্থা যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই অবহেলিত, নিষ্পেষিত। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতার জন্যে এখনও আন্দোলন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। আসলে সরকারে যারা থাকেন তারা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চিন্তা করেন না।
বিশেষ অতিথি অমৃত কারণ বলেন, দাবি আদায়ে সংগঠনের বিকল্প নেই। সহকারীদের জন্যে এ প্লাটফর্মই শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা আন্দোলনের শেষ ঠিকানা। তাই সংগঠনের সকল ইউনিট জবাবদিহিতায় দায়বদ্ধ।
সম্মেলনে সকলের সম্মতিক্রমে মো. বিলাল হোসেনকে সভাপতি, মো. মোজাম্মেল হোসেন ঢালীকে সাধারণ সম্পাদক ও মো. বাবুল হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।