রবিবার, ১১ মে, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০

বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা হোক ডাকাতিয়াকে
অনলাইন ডেস্ক

গতকাল ৫ জুন ছিলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আর গতকালই চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে ‘ডাকাতিয়ায় কচুরিপানার জটে পরিবেশ বিপর্যয়’ শীর্ষক সংবাদটি। এ সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদী আজ মরা ডাকাতিয়া নদীতে পরিণত হয়েছে। এই নদীটি উপজেলার হাজার হাজার জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কচুরিপানা জটে এর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় মাছের আবাসস্থল ধ্বংসের পথে। কোথাও কোথাও কচুরিপানার জট এতোটাই বেশি যে, অনায়াসে এর উপর দিয়ে হেঁটে নদীর এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়। তার উপর জন্মেছে পরগাছা। পানি নষ্ট ও দূষিত হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। অথচ সরকার প্রতি বছর দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে লাখ লাখ টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত করছে।

জানা যায়, চাঁদপুর জেলা শহর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর নৌপথের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। পুরো নৌপথটি ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি বেড়িবাঁধের ভেতরের অংশে পড়েছে। এক সময়ে ডাকাতিয়া নদীতে নৌযান চলাচল করতো। পাশাপাশি নদীতে কার্প ও দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে হাজার হাজার জেলে পরিবার জীবিকা নির্বাহ করতো। এ নদীর সুস্বাদু মাছের চাহিদা ছিলো দেশের সর্বত্র। ডাকাতিয়ায় এক সময় দেশীয় প্রজাতির বিশেষ করে পাবদা, সরপুঁটি, বোয়াল, শিং, মাগুর, কই, শৈল, বাইলা, চিতল মাছ প্রচুর পরিমাণে আহরিত হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হতো। কিন্তু গত এক দশক ধরে ধীরে ধীরে পুরো নদীটিকে কচুরিপানার জটে গ্রাস করেছে। ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথ। নদীর পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেছে জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের পথ।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর প্রায় সব স্থানে কচুরিপানার ভয়াবহ জটে পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে। পানির পচা গন্ধে নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া কষ্টকর। ডাকাতিয়া নদী দূষণমুক্ত রাখা, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা এবং জেলেদের জীবিকা নির্বাহ অব্যাহত রাখতে কচুরিপানা পরিষ্কার করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই বলে মনে করেন মৎস্যজীবীরা। ধানুয়া ও গাজীপুর এলাকার জেলে স্বপন কৃষ্ণ দাস (৪৫), তপন দাস (৬০), হারাধন দাস (৪৮), আলমগীর (৪০)সহ বেশ ক’জন জানিয়েছেন, হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যচাষী এ নদীতে মাছ শিকার করে একসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু বর্তমানে কচুরিপানার কারণে মাছ শিকার করতে পারেন না তারা। কচুরিপানা সরালে পূর্বের ন্যায় আবারো তারা মাছ শিকার করতে পারবে।

নৌপথে ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাঝি মোঃ ইব্রাহিম (৬০), আব্দুল খালেক (৫২), ফারুক হোসেন মাঝিসহ ক’জন জানান, শতাধিক নৌকা এ পথে চলাচল করলেও কচুরিপানার কারণে এখন তারা নৌকা চালানো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। নৌপথটি পুনরুদ্ধার হলে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জে বিভিন্ন ব্যবসায়িক মালামাল কম খরচে পরিবহন করতে পারবে এ অঞ্চলের মানুষ। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা বলেন, এ উপজেলাতে নদীতে মাছ উৎপাদনে অনেক সুনাম ছিলো। কিন্তু ডাকাতিয়া নদীতে কচুরিপানার কারণে এখন আর মাছ চাষ করা যায় না। মাছ চাষের উপযোগী করতে কচুরিপানা অপসারণ করা প্রয়োজন। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছেন।

ডাকাতিয়া নদী ফরিদগঞ্জকে দিয়েছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খ্যাতি ও বহু সমৃদ্ধি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কারণে ডাকাতিয়ার মিঠা পানি ব্যবহারে ফরিদগঞ্জে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও এই নদীকেন্দ্রিক হাজার হাজার জেলের জীবিকা নির্বাহ সহ আরো অনেক কিছুই ব্যাহত হয়েছে। এর পেছনে এই নদীর প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমূহের অমার্জনীয় উদাসীনতা যে অনেক বেশি দায়ী সেটি বলা যায় অকপটেই। আমাদের দেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও ফরিদগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীকে কচুরিপানার জট থেকে রক্ষায় নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো প্রকল্প। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবে না জনপ্রতিনিধরা সহ আরো অনেকেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়