প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১০
চাঁদপুরে তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা
বিজয় দিবসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক আয়োজন

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে আয়োজনের অংশ হিসেবে চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনদিনব্যাপী বিজয় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয় মেলার মঞ্চে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কালজয়ী গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি ও মুখাভিনয়ের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা তুলে ধরেন একাত্তরের ইতিহাস ও আত্মত্যাগের গল্প।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ আয়োজন চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে এক প্রাণবন্ত আবহ তৈরি করেছে।
তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনের প্রথম দিন ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর দলীয় ও একক পরিবেশনায় একে একে উঠে আসে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের গান। জাসাস পরিবেশন করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলীয় সংগীত। গোলাম মোস্তাফা রতন, সুদ্রা, অপর্ণা, দীপা রায় চৈতি, কৃষ্ণকলি, অর্পিতা ঘোষ, প্রান্তিক ও রাজীবের একক কণ্ঠে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান দর্শক-শ্রোতাদের আবেগে আন্দোলিত করে।
দলীয় সংগীত ও নৃত্যে অংশ নেয় ত্রিনদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থা, সপ্তসুর, নতুন কুঁড়ি, চাঁদপুর মঞ্চ, মোহনা শিল্পীগোষ্ঠী এবং সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়। নৃত্য পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা ইতিহাস ও বিজয়ের আনন্দ ফুটে উঠে।
নাট্য ও আবৃত্তিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে বহুবচন একাডেমি ও বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী। বহুবচন একাডেমির মূকাভিনয় ও বিদ্রোহী কবিতার আবৃত্তি দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। নাট্যমঞ্চের নৃত্য পরিবেশনায় সবুজের বুকে লালের প্রতীকী উপস্থাপনা প্রশংসিত হয়।
দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে দলীয় সংগীত ও নৃত্যের পাশাপাশি নাট্য পরিবেশনা বিশেষ গুরুত্ব পায়। হিলশা ও প্রতিভা সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক দলীয় সংগীত। নৃত্যধারা ও নতুন কুঁড়ির নৃত্য পরিবেশনায় দেশপ্রেম, প্রকৃতি ও মানবিক আবেগ ফুটে উঠে।
এদিন বঙ্গজের শিল্পীরা একক কণ্ঠে পরিবেশন করেন লোকজ ও ভাবধর্মী গান। সুরসাধনের দ্বৈত সংগীত পরিবেশনা অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এরপর বর্ণমালা থিয়েটারের নাটক দর্শকদের গভীর বার্তা দেয় সমসাময়িক বাস্তবতা ও মানবিক সংকট নিয়ে।
মেলার তৃতীয় ও শেষ দিনে লোকসংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যের সমন্বয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানমালা। ত্রিনদীর একক কণ্ঠে লোকগান, সানজিদা আলম সাঙ্গু, অর্পিতা সিংহ রায়, সাফানা নামরিন হোসেন মেধা, অপর্ণা ও দীপা রায় চৈতির পরিবেশনায় মঞ্চজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সুরের মূর্ছনা।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় নৃত্যাঙ্গন, সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়, শিশু থিয়েটার ও বাঁধন সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদের পরিবেশনায় গ্রামীণ জীবন, নারী শক্তি ও লোকজ ঐতিহ্য ফুটে উঠে। বহুবচন একাডেমির আবৃত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। গম্ভীরা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর আবহে।
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজন চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়ের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও জীবন্ত করে তোলে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পরিবেশনার মাধ্যমে বিজয় দিবসের তাৎপর্য নতুন করে অনুভব করেন দর্শক-শ্রোতারা।







