বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৮

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে এমনটিই করা দরকার

অনলাইন ডেস্ক
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে এমনটিই করা দরকার

শাহরাস্তির ঐতিহ্যবাহী চেড়িয়ারা স্কুল এন্ড কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে শ্রেষ্ঠত্বের ধারা অব্যাহত রেখেছে। কলেজ সূত্রে জানা যায়, এ বছর (তৃতীয় ব্যাচ) এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার ছয়টি কলেজের মধ্যে চেড়িয়ারা স্কুল এন্ড কলেজ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এ কলেজ থেকে ৫৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩৪ জন কৃতকার্য হয়েছে। পাসের হার শতকরা ৫৫.৫৬ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন শিক্ষার্থী। গত বছরও (দ্বিতীয় ব্যাচ) এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার ছয়টি কলেজের মধ্যে এই কলেজ প্রথম স্থান অধিকার করে। গত বছর ৬৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬৩ জন কৃতকার্য হয়েছে। পাসের হার শতকরা ৯৬.৯২ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে (প্রথম ব্যাচ) এ কলেজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার ছয়টি কলেজের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। তখন পরীক্ষায় ৬৩ জন অংশ নিয়ে ৫৮ জন কৃতকার্য হয়েছে। পাসের হার শতকরা ৯২.০৬ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১জন।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার এই ধারাবাহিক সাফল্য/ভালো ফলাফল হওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নতুন কলেজ হওয়ায় ভালো শিক্ষার্থী তেমন ভর্তি হয় না। তারপরও গাইড শিক্ষক দিয়ে নিয়মিত তদারকি, চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে পড়াশোনার তদারকি করতে সন্ধ্যার পর শিক্ষার্থীদের বাড়িতে অধ্যক্ষ সমেত শিক্ষকদের গমন, নিয়মিত টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া, কলেজের বিভিন্ন পরীক্ষা সঠিক সময়ে নেয়া, ভালো ফলাফলকারীকে পুরস্কৃত করা, প্রতি মাসে কলেজের সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন ও পুরস্কারের ব্যবস্থা, অভিভাবক সমাবেশ, সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম নিয়মিত আয়োজন, কলেজের দাতা সদস্য ইকবাল হোসেন ভূঁইয়ার সার্বিক সহযোগিতা, পুরাতন ও নতুন পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের দিকনির্দেশনা এবং শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভালো ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।

চেড়িয়ারা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম যে প্রক্রিয়ায় এইচএসসির ভালো ফলাফলে শাহরাস্তি উপজেলায় শ্রেষ্ঠত্বের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়াস চালিয়েছেন, তেমনটি অন্যান্য স্কুল ও কলেজে খুবই কম দেখা যায়। যেমন ধরুন, এ অধ্যক্ষ প্রতি মাসে সেরা শিক্ষার্থী নির্বাচন ও পুরস্কার প্রদান এবং নিয়মিত টিউটোরিয়াল পরীক্ষার যে ব্যবস্থা করে থাকেন, সেটা রাজধানী সহ দেশের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানসমূহেই দেখা যায়। আবার চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বে পড়াশোনার তদারকি করতে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে গমন, সেটাও বিরল ঘটনা। দূর অতীতে শিক্ষকতাকে যারা নিতান্তই পেশা হিসেবে না নিয়ে ব্রত হিসেবে নিতেন, তাঁরা ভোরে ও রাতে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে ও হোস্টেলে গিয়ে তাদের পড়াশোনার তদারকির কাজটি নিবিড়ভাবে করতেন। এতে তাঁরা পাবলিক পরীক্ষা ও বৃত্তি পরীক্ষায় শুধু নিজ এলাকায় নয়, সারাদেশেই নিজ প্রতিষ্ঠানের সাড়া জাগানো ফল অর্জনের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে অভিভাবক মহলসহ সাধারণ্যে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। এঁদের মধ্যে মতলব জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কালজয়ী প্রধান শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ পাটোয়ারী এবং হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুলের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী বজলুল হকের নাম উচ্চারণ করতে হবে অবধারিতভাবে। তাঁরা ইতিহাসের পাতায় অমর ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা দরকার যে, চেড়িয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া ডিগ্রি কলেজে রসায়নবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে তাঁর শিক্ষকতা জীবনের পুরো সময়টাই কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সক্রিয়তা ও আত্মনিবেদনে তাঁর কর্মকালে তিনি সূচীপাড়া ডিগ্রি কলেজের সুনামকে শুধু পরীক্ষার ফলাফলের দিক দিয়ে নয়, অন্যান্য দিক দিয়েও ধারাবাহিক রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু তিনি শীর্ষ পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সাময়িক দায়িত্বপালনের সুযোগ পেলেও নানা কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিয়োগ পাননি। সরকারি নিয়মে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সূচীপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে অবসর নিলেও তাঁকে শাহরাস্তি উপজেলার চেড়িয়ারা স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের কলেজ সেকশনের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এটা যে তারা ভুল করেন নি সেটা মো. আবুল কালাম গত তিন বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে প্রমাণ করেছেন। তাঁর স্ত্রীও অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষিকা। বড়ো ছেলে সরকারি ডাক্তার ও ছোট ছেলে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক। পারিবারিকভাবে সফল এ মানুষটি শিক্ষকতা জীবনেও সফল-এটা এখন প্রমাণিত সত্য। তিনি পেশাগত জীবনের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেও তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলি প্রদর্শন করেছেন, তিনি শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে সে দায়িত্বও সুনামের সাথে পালন করেছেন। তিনি চলতি বছরই সস্ত্রীক হজ্বব্রত পালন করেছেন। এমন বহু গুণের অধিকারী মানুষদের যদি অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান করা যেতো, তাহলে পাবলিক পরীক্ষা সহ অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলে আশাব্যঞ্জক প্রাপ্তিই শুধু হতো না, শিক্ষার্থীরা নিতান্ত পরীক্ষার্থী না হয়ে ভালো মানুষও হতে পারতো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়