বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:১৭

হারানো গৌরবে ফিরলো বাবুরহাট

তারুণ্যের উৎসবে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে জয় কলেজ ফুটবল দলের

পলাশ দে
তারুণ্যের উৎসবে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে জয় কলেজ ফুটবল দলের

পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন। ডিজিটাল যুগে যখন তরুণরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও খেলাধুলা থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন, ঠিক সেই সময় বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা আয়োজন এবং কলেজের চ্যাম্পিয়ন হওয়া যেন হঠাৎ কোনো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার মতো।

তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ১ ডিসেম্বর ২০২৫ (সোমবার) বিকেল ৩টায় চঁাদপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫-এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হয় ২৬ নভেম্বর ২০২৫। উদ্বোধনী ম্যাচেই বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফুটবল দল ৩-০ গোলে মতলবের কেএফটি কলেজিয়েট স্কুলকে হারিয়ে জয়ের সূচনা করে। সেই ধারাবাহিকতায় ফাইনালেও টাইব্রেকারে জিতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি অর্জন করে কলেজের তরুণ ফুটবলাররা। বিজয়ী দলকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, কলেজ শাখা প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো আন্তঃকলেজ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তঁাকে ভীষণ আনন্দিত করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় দক্ষ করতে চেয়েছিলেনÑএই সাফল্য সেই স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন। তিনি আরও বলেন, বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠটি চঁাদপুরের অন্যতম উপযোগী খেলার মাঠ, যেখানে প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন খেলায় অংশ নেবেÑএমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সহকারী প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, শৈশব-কৈশোরের অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই বিজয় তার কাছে এক বিশেষ আনন্দের।

ফুটবল টিমের ম্যানেজার, প্রভাষক মাহফুজুর রহমান বলেন, টিম গঠনে অধ্যক্ষের সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক রাসেল মিয়া শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাবেক সেরা ফুটবলার ইউসুফ বকাউল সফলভাবে কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এলাকাবাসী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মতে, বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফুটবল টিম এভাবেই আরও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। ২০২৫ সাল কলেজ ফুটবল দলের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ গৌরবময় আয়োজনের জন্যে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয় চঁাদপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল ইসলাম সরকারকে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ১৮ দিনের মাথায় তিনি ঝামেলামুক্ত, সুশৃঙ্খল ও নান্দনিকভাবে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. আফাজ উদ্দিন এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানানো হয়।

ফুটবলের এ সাফল্য বাবুরহাট মাঠের হারানো গৌরব তথা অতীতে খেলাধুলার প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ সময়কে ফিরিয়ে দিয়েছে।

১৯৮০-৯০ এ দশকে বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ ছিলো ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র। একসময় এখানে খেলতে আসতেন যুবক ও শিক্ষার্থীরা। বাবুরহাট হাই স্কুল থেকে জাতীয় ফুটবলে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়ও তৈরি হয়েছে। এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছিলÑযা নবাগত জেলা প্রশাসকের আগ্রহে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএমের সময়েও এ মাঠে মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়, যা ছিলো স্মরণীয়। এবারও জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় ফুটবলপ্রেমীরা আবার মাঠমুখী হয়েছেন।

ফাইনাল খেলার আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সহকারী অধ্যাপক সবিতা বিশ্বাসের নেতৃত্বে সংগীত দল।

প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক তঁার বক্তব্যে বাবুরহাট কলেজ ফুটবল দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি খেলোয়াড়দের আরও টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ফাইনালে বাবুরহাট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ টাইব্রেকারে মতলব উত্তরের শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন, সদর ও মতলব উত্তরের ইউএনও, জেলা ক্রীড়া অফিসার মো. আফাজ উদ্দিনসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। ধারাভাষ্যে ছিলেন লক্ষ্মণ সরকার ও ফয়সাল আহমেদ। ম্যাচ রেফারি ছিলেন মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাসুম বেপারী, নূরে আলম নয়ন ও ইমরান হোসেন রানা। ম্যাচ কমিশনার ছিলেন জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী।

ফুটবলপ্রেমীরা জানান, কলেজ পর্যায়ের এ ফুটবল আয়োজন অত্যন্ত সফল হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিপথগামী হওয়া ও মাদক থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। সাবেক ফুটবলার ও রেফারি কাকন খান বলেন, জেলা প্রশাসক যেহেতু খেলাধুলাপ্রেমী, তাই তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন আরও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আয়োজন হবে বলে তার প্রত্যাশা।

টিমের অধিনায়ক রাকিব মিজি জানান, প্রথমবার কলেজ টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়া তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় ঘটনা। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগেও চ্যাম্পিয়ন হতে চান এবং একদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে চান।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা নাঈম কাজি বলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তটি কখনো ভুলবো না। তিনি প্রতিদিন সকাল-বিকেল কোচ ইউসুফ বকাউলের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরেক খেলোয়াড় রাকিব বলেন, ২০২৫ সালকে তিনি মনে রাখবেন, কারণ এ বছরেই বাবুরহাট কলেজ জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

ফুটবল টিমের সদস্যরা হলেন : শ্রীকান্ত বঁাশফোর (গোলকিপার), রাকিব মিজি (অধিনায়ক), ইউসুফ মজুমদার, গাফফার হোসেন, নাঈম কাজি, সাব্বির হোসাইন, সূর্য চন্দ্র গোস্বামী, সাত্তার মাল, মেহেরাজ হোসেন, মারুফ হাসান, আবু বকর ভূঁইয়া, রনি প্রধানিয়া, রায়হান মৃধা, আব্দুর রহমান, নাঈম উদ্দিন, সিয়াম, আজমুল হাসান, তানভীর, নূরে আলম, শিশির, রাইয়ান, কাউছার ও হাসিব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়