রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৪

২০২৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষিত বিদ্যালয় ভবনের নূতন ভবনের প্রস্তাব এখনও পাঠানো হয় নি!

অনলাইন ডেস্ক
২০২৪ সালে পরিত্যক্ত ঘোষিত বিদ্যালয় ভবনের নূতন  ভবনের প্রস্তাব এখনও পাঠানো হয় নি!

‘পরিত্যক্ত ভবন, পাশে পুকুর ও সিঁড়ি ঘেঁষে সড়ক : শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কাজির কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এটি কিন্তু সচিত্র একটি সংবাদের শিরোনাম। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ও ছবিতেই বোঝা যায় প্রকৃত পরিস্থিতি। মো. মঈনুল ইসলাম কাজল পরিবেশিত সংবাদটির গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, শাহরাস্তি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ কাজির কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একদিকে পরিত্যক্ত ভবন, পাশেই পুকুর ও মাঝখানে সড়ক। ত্রিমুখী এমন সমস্যার মাঝেই প্রতিদিনের পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছাদের নিচে বসেই অফিস করছেন শিক্ষকগণ। বিভিন্ন সময় পলেস্তরা খসে আহত হয়েছেন অনেকেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সরজমিনে এসে ২০২৪ সালে বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে যান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুবিধার্থে পুকুর পাড়ে একটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে টিনের ঘরটি পুকুরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই পাঠদান অব্যাহত রেখেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিদ্যালয় ভবনের পাশ দিয়ে গেছে ঠাকুর বাজার-কাজির কামতা সড়ক। বিদ্যালয় ভবনের সিঁড়ি ঘেঁষে সড়কটির অবস্থান হওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হামিদা বেগম জানান, স্কুলটি এক শিফটের হলেও কক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়েই আমরা দু শিফটে চালু করেছি। তিনি আরো বলেন, ভবনের জন্যে প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিন আতংকের মধ্যে থাকি কখন ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে। সহকারী শিক্ষকা হাসিনা আক্তার জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে বসে অফিস করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ছে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টি নিয়ে আমরা মহাসমস্যায় পড়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান অব্যাহত থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এলাকাবাসীরা জানান, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর না থাকায় যে কোনো সময় শিক্ষার্থীরা পুকুরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি বিদ্যালয় ঘেঁষে চলা যানবাহনের ধাক্কায় আহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নতুন ভবনের জন্যে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমি স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক ২০২৪ সালে কাজির কামতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পর পুকুর পাড় ও সড়ক ঘেঁষে একটি টিনের ঘর নির্মাণের মধ্য দিয়েই যেন তাঁর অনেক বড়ো দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলো। তাঁর মনিটরিংয়ের অভাবে নূতন ভবনের প্রস্তাব এখনও যায় নি মন্ত্রণালয়ে, যেটা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে। এ হলো আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। ঢিমেতালে চলছে অনেক কিছুই। এ বিদ্যালয়টি একটি নমুনা মাত্র। এমন নমুনা জেলাতে আরো আছে।

আমাদের দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠানে বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই বড়ো কর্তাদের হুঁশ হয়। আর পানি নিচের দিকে গড়ানোর সূত্রে ঊর্ধ্বতনরা শাস্তির মুখোমুখি না হলেও অধস্তনরা শাস্তির মুখোমুখি হন। আমরা কাজির কামতায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির প্রেক্ষিতে বড়ো কর্তাদের মানসিকতা কি সেটা জানি না। এমন পরিস্থিতি নিরসনে দীর্ঘসূত্রিতার জন্যে কে বা কারা দায়ী সে বিষয়ে জানতে চাই-জেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন, না উপজেলা শিক্ষা প্রশাসন? তবে এমন জানার কৌতূহলের চাইতে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি কামনাটাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়