রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের জয়ে সিরিজে সমতা আনলো বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৫

আশুরার গুরুত্ব ও কারবালার ঘটনা

মুফতি মুহা. আবু বকর বিন ফারুক
আশুরার গুরুত্ব ও কারবালার ঘটনা

আশুরা অর্থাৎ মুহাররম মাসের ১০ তারিখ, ইসলামী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বেদনাবিধুর দিন। এইদিনে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে সর্বাধিক স্মরণীয় ও হৃদয়বিদারক হলো ইমাম হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে শুধু একটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাত ছিল না; এটি ছিল ন্যায় ও সত্যের পক্ষে দঁাড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ। আশুরার দিনে (১০ মুহাররম) ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো ইসলামী ও পূর্ববর্তী নবীদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। নিচে আশুরার কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করা হলো :

আশুরার কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা

১. আল্লাহ তা’আলা মুসা (আ.) ও বনি ইসরাঈলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্ত করেন : আশুরার দিনেই আল্লাহ তা’আলা মুসা (আ.)-কে তঁার অনুসারীদের নিয়ে নীল নদ পার করিয়ে দেন এবং ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনীকে সেখানেই ডুবিয়ে ধ্বংস করেন।

২. আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল হয় : হাদিস ও ইতিহাসবিদদের মতে, আশুরার দিন আল্লাহ তা’আলা আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল করেন।

৩. নূহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ে নোঙর করে : মহাপ্লাবনের পরে নূহ (আ.)-এর কিশতী আশুরার দিন জুদি পাহাড়ে স্থিত হয়।

৪. ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুন থেকে মুক্ত করা হয় : নমরুদের জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ইব্রাহিম (আ.)-কে নিক্ষেপ করা হলে আশুরার দিনেই আল্লাহ তাকে আগুন থেকে নিরাপদ করেন।

৫. ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্ত হন : আশুরার দিন আল্লাহ তা’আলা ইউনুস (আ.)-কে মাছের পেট থেকে মুক্ত করেন।

৬. আয়ূব (আ.)-এর কষ্ট দূর করে আরোগ্য দান করা হয় : বহু বছর কঠিন রোগে ভোগার পর আশুরার দিন আল্লাহ আয়ূব (আ.)-কে সুস্থতা দেন।

৭. ঈসা (আ.) আসমানে উত্তোলিত হন : ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, ইসা (আ.)-কে আশুরার দিন আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং তঁাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করা হয়।

৮. হযরত হোসাইন (রা.)-এর কারবালায় শাহাদাত : ৬১ হিজরির ১০ মুহাররমে কুফার কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে রাসূল (সা.)-এর দৌহিত্র হোসাইন (রা.) ও তঁার ৭২ জন সাথী শহীদ হন। এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, আশুরার দিনটি নবীদের জীবনে বিপদমুক্তি, আল্লাহর করুণা এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শোকের দিন যেমন, তেমনি আত্মনিরীক্ষা, ত্যাগ ও আত্মোন্নয়নেরও দিন।

আশুরার গুরুত্ব ও ফজিলত

১. রোজা রাখার ফজিলত : আশুরার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলোÑএই দিনে রোজা রাখা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : “আশুরার রোজা আগের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।”Ñসহিহ মুসলিম। অর্থাৎ, ১০ মুহাররমে রোজা রাখলে বিগত এক বছরের ছোট ছোট গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

২. রাসূল (সা.) নিজে রোজা রাখতেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর মদিনায় এসে দেখেন, ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। কারণ তারা বিশ্বাস করত, এ দিন মুসা (আ.)-কে আল্লাহ ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তখন রাসূল (সা.) বলেন, “আমরা মুসার চেয়ে বেশি হকদার।” এবং তিনি নিজেও রোজা রাখেন, সাহাবীদেরও নির্দেশ দেন।

৩. রোজা রাখার সুন্নাহ নিয়ম : শুধু ১০ তারিখ নয়, বরং ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মুহাররম একসাথে রোজা রাখা উত্তম। এতে ইয়াহুদিদের সাথে সাদৃশ্য এড়ানো হয়।

৪. এই দিনে অনেক নবীর প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হয়েছিল : যেমন : মুসা (আ.)-কে নাজাত, নূহ (আ.)-এর নৌকা স্থির হওয়া, ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুন থেকে মুক্তি ইত্যাদি।

৫. এই দিনে কারবালার শহীদদের স্মরণ : আশুরা একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেয় ইমাম হোসাইন (রা.) ও তঁার সাথীদের আত্মত্যাগের কথা, যারা সত্য ও ইনসাফের জন্য প্রাণ দেন। কারবালার ঘটনা জানার পূর্বে খিলাফতের বিবরণ জেনে নেই।

খিলাফতের বিবরণ ও খলিফাগণের ইন্তেকালের কারণ : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর খিলাফতের সময় শুরু হয়। প্রথম চার খলিফা ‘খুলাফায়ে রাশেদীন’ নামে পরিচিত। তারা ছিলেন যথাক্রমে : আবু বকর (রা.) (৬৩২-৬৩৪ খ্রি.) : সাহাবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম খলিফা। ইসলামের অস্থিতিশীল সময়ে অত্যন্ত দৃঢ় নেতৃত্ব দেন। ৬৩৪ খ্রি. অসুস্থতাজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন।

উমর ইবন খাত্তাব (রা.) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.) : ইসলামী খেলাফাত ও সাম্রাজ্যকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেন। নামাজরত অবস্থায় এক পারস্য দাস ‘আবু লুলু’ তাকে ছুরিকাঘাত করে, যার কারণে তিনদিন পর ইন্তেকাল করেন।

উসমান ইবন আফফান (রা.) (৬৪৪-৬৫৬ খ্রি.) : তঁার আমলে কুরআনের একক মোসহাফ সংকলিত হয়। বিরোধীদের বিদ্রোহের মুখে নিজের বাসভবনে অবস্থানকালে শহীদ হন।

আলী ইবন আবু তালিব (রা.) (৬৫৬-৬১১ খ্রি.) : ইসলামের অন্যতম জ্ঞানী সাহাবী ও প্রথম শিশুমুসলিম। তঁার খিলাফতকাল ছিল গৃহযুদ্ধ ও নানা রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে। এক খারেজি তঁাকে কুফায় ফজরের নামাজের সময় ছুরিকাঘাত করে, যার ফলে তিনি শহীদ হন।

ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.)-এর মর্যাদা

ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র। তঁারা ছিলেন তঁার কন্যা ফাতিমা (রা.) ও আলী (রা.)-এর সন্তান। রাসূলুল্লাহ (সা.) তঁাদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি বলতেন, “হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের নেতা।” তঁাদের আদর্শ ও চরিত্র মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয়। ইমাম হাসান (রা.)-এর সময়ে মুসলিম সমাজে বিভক্তি দেখা দেয়। তিনি নিজ ইচ্ছায় খিলাফতের দাবী ছেড়ে দেন এবং মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান-এর সাথে সন্ধি করেন, যেন রক্তপাত বন্ধ হয়। এক পর্যায়ে বলা হয়, তঁার স্ত্রীকে ঘুষ দিয়ে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে শহীদ করা হয়।

কারবালার পটভূমি ও হোসাইন (রা.)-এর অবস্থান

ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার খিলাফত শুরু হয় ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে। এটি ছিল বংশানুক্রমিক রাজনীতির সূচনা, যা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থী। ইয়াজিদ নিজে চরিত্রহীন, ইসলামী মূল্যবোধবিরোধী কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই অনেক সাহাবী ও তাবেঈন তার বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু সে তার নেতৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য করত। ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ ও আদর্শবান মানুষ। ইয়াজিদ যখন জনগণকে নিজের প্রতি বায়আতের জন্য বাধ্য করতে থাকে, তখন হুসাইন (রা.) মদিনা ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান। এরপর কুফার বহু মানুষ তঁাকে চিঠি লিখে জানায় যে, তারা তঁাকে নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত। তিনি তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু পরিবারসহ কারবালার দিকে রওনা হন।

কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা

কূফাবাসীর আমন্ত্রণ : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র, ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রা.) ছিলেন ইসলামের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের একজন। ৬০ হিজরিতে ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া খেলাফতের দাবিদার হলে ইমাম হোসাইন (রা.) তার বায়আত (শপথ গ্রহণ) প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ ইয়াজিদ ফাসিক, অত্যাচারী ও খলিফাতুল মুসলিমীন হবার অযোগ্য ছিলেন। তৎসময়ে কূফার লোকেরা ইমাম হোসাইন (রা.)-কে আমন্ত্রণ জানিয়ে বহু সংখ্যক চিঠি পাঠায় এবং তাকে তাদের খলিফা হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুতির কথা জানায়। তারা চিঠিতে উল্লেখ করেÑ“আপনি কূফায় আসুন, আমরা আপনার হাতে বায়আত করব এবং আপনাকেই নেতা হিসেবে মেনে নেব।”

মুসলিম ইবনে আকিলের প্রেরণ : ইমাম হোসাইন (রা.) কূফাবাসীদের আমন্ত্রণ যাচাই করতে তার চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিল-কে কূফায় পাঠান।

মুসলিম ইবনে আকিলের কূফা গমন ও শাহাদাত : মুসলিম ইবনে আকিল কূফায় পেঁৗছে হাজার হাজার মানুষের বায়আত গ্রহণ করেন। কিন্তু খুব শিগগিরই কূফার গভর্নর উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ইয়াজিদের পক্ষ থেকে নিযুক্ত হয়ে পরিস্থিতি পালটে দেয়। ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকিতে কূফাবাসীরা মুসলিমকে একা ফেলে দেয়। তিনি ধরা পড়েন এবং ৮ জিলহজ ৬০ হিজরিতে শহীদ হন। মৃত্যুর পূর্বে মুসলিম ইমাম হোসাইন (রা.)-কে কূফা না আসার বার্তা পাঠাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি।

ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা : মুসলিম ইবনে আকিলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার আগেই ইমাম হোসাইন (রা.) মক্কা থেকে ৭০–৮০ জন পরিবার-পরিজন ও সাথীদের নিয়ে কূফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি কূফাবাসীর প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যান।

কারবালায় অবস্থান : ৬১ হিজরির ২ মহররম তারিখে ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবার ফুরাত নদীর তীরে কারবালা নামক স্থানে পেঁৗছেন, যেখানে ইয়াজিদের বাহিনী পথ রুদ্ধ করে দেয়। ইবনে জিয়াদ সেনাপতি ওমর ইবনে সাদ-কে পাঠিয়ে হোসাইন (রা.)-কে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চায়।

১০ মহররম ৬১ হিজরি (৬৮০ খ্রি.) : ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ৭২ জন সঙ্গী (তঁার পরিবারসহ) যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তঁারা কেবল ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বের হয়েছিলেন। ইয়াজিদের বিশাল সেনাবাহিনী চারদিক থেকে অবরোধ করে। পানি বন্ধ করে দেয়। পিপাসার্ত শিশু, নারী ও সাহাবিদের তৃষ্ণা দিন দিন বাড়তে থাকে।

হৃদয়বিদারক ঘটনা

একে একে তার ভাই আব্বাস ইবনে আলী, ছেলেরা আলী আকবর ও আলী আসগর, ভাগিনা কাসিম, এবং পরিবারের বহু সদস্য শাহাদাত বরণ করেন। শেষ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (রা.) একাই যুদ্ধ করেন এবং অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।

শিশু আলী আসগরের শাহাদাত : মাত্র ৬ মাস বয়সী সন্তান আলী আসগরের গলায় তীর বিদ্ধ করে হত্যা করে ইয়াজিদের সৈন্য হারমালা।

যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থা : ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরিবারবর্গÑনারী ও শিশুদের বন্দি করে কূফায় নিয়ে যাওয়া হয়। তঁাদের সম্মানহানি করা হয় এবং শৃঙ্খলিত অবস্থায় দামেস্ক (সিরিয়া) ইয়াজিদের দরবারে পেশ করা হয়।

ইয়াজিদের অবস্থা : ইয়াজিদ বাহ্যিকভাবে বিজয়ী হলেও ইতিহাস তাকে “ফাসিক, জালিম, লানতপ্রাপ্ত” হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল ইমাম, তাবেয়ী ও মুহাদ্দিসগণ তাকে অভিশপ্ত ও অবৈধ খলিফা হিসেবে গণ্য করেছেন। হাদিস শরীফে রাসূল (সা.) ইমাম হোসাইন (রা.)-কে ভালবাসাকে ঈমানের অংশ বলেছেন।

দামেস্কে হোসাইনের মাথা ও পরিবার : হোসাইন (রা.)-এর মুবারক মাথা একটি পাত্রে রেখে ইয়াজিদের সামনে আনা হয়। ইয়াজিদ প্রথমে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করলেও পরে জনরোষ ও সাহাবিদের ধিক্কারে নরম হতে বাধ্য হয়। ইমাম হোসাইনের বোন জায়নাব (রা.) অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে ইয়াজিদের দরবারে ভাষণ দিয়ে তাকে লজ্জিত করেন।

কারবালার ঘটনার কারণ

কারবালার ঘটনার মূল কারণ ছিল : বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রচলন: ইসলামে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয় পরামর্শ ও মেধার ভিত্তিতে। ইয়াজিদ ক্ষমতা লাভ করে রাজতান্ত্রিক ধারা চালু করে।

ইসলামী আদর্শচ্যুতি : ইয়াজিদ ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে জীবনযাপন করতেন, যা ইমাম হোসাইন (রা:) মেনে নিতে পারেননি।

ধর্ম ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা : হোসাইন (রা.) চেয়েছিলেন উম্মাহর মাঝে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে।

কারবালার শিক্ষা

কারবালার ঘটনা থেকে আমরা বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি : সত্যের জন্য জীবন উৎসর্গ : হুসাইন (রা.) প্রমাণ করেছেন যে, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া কখনো নিরর্থক যায় না।

আদর্শিক অবস্থান : কেবল আত্মরক্ষা নয়, আদর্শ রক্ষা করাই একজন মুসলমানের প্রধান দায়িত্ব।

পরিবারের ত্যাগ : ইমাম হোসাইনের পরিবার থেকে বোঝা যায়, ইসলামের জন্য পরিবারসহ আত্মত্যাগের প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করতে হবে।

জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দঁাড়ানো : ন্যায়বিচার ও শাসকের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দঁাড়ানো ঈমানের আলামত।

আমাদের করণীয়

ইমাম হোসাইনের শাহাদাত শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, বরং একটি চলমান বার্তা, যা আমাদের সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।

আমাদের করণীয় হতে পারে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রে অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা : ইমাম হোসাইন (রা.) ও তঁার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা।

সাম্প্রদায়িক বিভেদ দূরীকরণ : কারবালার ঘটনা নিয়ে অনেক মতপার্থক্য থাকলেও, এটি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।

আদর্শ সমাজ গঠন : ইসলামী মূল্যবোধ অনুসরণ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা।

আশুরার দিনে আত্মসমালোচনা : এদিন শুধুমাত্র কান্না বা শোক প্রকাশ নয়; বরং আমাদের নিজেদের চরিত্র পরিশুদ্ধ করা ও সত্যের পথে চলার প্রতিজ্ঞা নেওয়া উচিত।

পরিশেষে বলবো, আশুরা ও কারবালার ঘটনা শুধুমাত্র ইতিহাস নয়, এটি একটি চেতনার নাম। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর জীবন ও শাহাদাত আমাদের শেখায় যে, অন্যায়ের সাথে আপোস নয়, বরং ন্যায়ের পথে জীবন উৎসর্গ করাই ঈমানদার মানুষের পরিচয়। আজকের দিনে আমাদের দায়িত্ব হলো এই আদর্শকে ধারণ করে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে সত্য, ইনসাফ ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।

মুফতি মুহা. আবু বকর বিন ফারুক : লেখক, ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চঁাদপুর সদর, চঁাদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়