শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ২০:২৬

আবাসনের অধিকার আদায়: জবি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে

কাকরাইলে কান্নার রোল, ঘরে ফেরার স্বপ্ন: জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফল

জবি শিক্ষার্থীদের জয়: সরকার দাবি মেনে নিয়েছে, অচিরেই রোডম্যাপ

মো. জাকির হোসেন
কাকরাইলে কান্নার রোল, ঘরে ফেরার স্বপ্ন: জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফল
ছবি : সংগৃহীত

“শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। অচিরেই বাস্তবায়ন শুরু হবে”— এমন আশ্বাসে শেষ হলো টানা ৫০ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ও গণ-অনশন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস. এম. এ. ফায়েজ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তিনি বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল দাবি মেনে নিয়েছে। খুব শিগগিরই আমরা একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করব।”

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তিনটি প্রধান দাবির ভিত্তিতে এই কর্মসূচি শুরু করেন:

  1. আবাসন সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান
  2. নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা
  3. বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামো ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা

দাবিগুলোর প্রতি সরকারের সদিচ্ছার কথা জানানোর আগে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পেজে লেখেন, “আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জবির সমস্যার সমাধান নিয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানানো হবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট দ্রুতই সমাধান হোক।”

গণ-অনশনের সূচনা ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

শুক্রবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে জবির ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণ–অনশনের ঘোষণা দেন। বিকেল ৪টা থেকে শিক্ষার্থীরা না খেয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন।

আন্দোলনস্থলে উপস্থিত একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল “শৃঙ্খলাপূর্ণ, পরিণত ও যৌক্তিক”

ইউজিসি চেয়ারম্যানের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত

ইউজিসি চেয়ারম্যানের সরাসরি উপস্থিতি ও বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। অনেকেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “আমরা রাজপথে না এসে উপায় দেখিনি। আবাসন নিয়ে আমাদের দুর্ভোগ সরকার অবশেষে বুঝেছে।”

আন্দোলনের মুখপাত্র মাহমুদুল হাসান জানান, “আমরা সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত বাসা ভাড়া নিয়ে জীবনযুদ্ধে লিপ্ত। ক্যাম্পাস-সংলগ্ন কোনো আবাসন নেই। এই রোডম্যাপ দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন আবার শুরু হবে।”

পূর্ব ইতিহাস: দীর্ঘমেয়াদী অবহেলা ও ক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হলেও একটি আবাসিক হলও প্রতিষ্ঠিত হয়নি এতদিনে। বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৫ সালে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ছাত্রদের আবাসন সুবিধা নিয়ে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতি মাসে বাসা ভাড়া, খাবার, পরিবহনসহ প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয় একজন শিক্ষার্থীর। গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের পক্ষে তা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

সরকারি রোডম্যাপের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা

সরকারের পক্ষ থেকে একটি 'স্পষ্ট রোডম্যাপ' ঘোষণার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, শিক্ষার্থীরা চাইছেন দ্রুত সময়সীমা নির্ধারণ করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ। তারা বলছেন, “শুধু ঘোষণা নয়, চাই দ্রুত বাস্তবায়ন।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন দেশের উচ্চশিক্ষার খরচ, অবকাঠামোগত সংকট এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ইস্যুকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।

শেষ কথা: প্রত্যাশা বাস্তবায়নের

জবির শিক্ষার্থীদের এই জয় শুধু একটি আন্দোলনের সফল সমাপ্তি নয়, বরং এটি উচ্চশিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো— সরকারি রোডম্যাপ কবে আসবে, আর কবে তার বাস্তব প্রয়োগ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়