শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ যৌথ বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ৯০ যানবাহনে তল্লাশি।। ১২ মামলায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা, ৬ গাড়ি জব্দ
  •   হরিণা থেকে দু মাদক ব্যবসায়ী আটক
  •   কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩৯ জনের তথ্য চেয়েছে দুদক

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৭

৫ শতাধিক শিক্ষার্থী কচুরিপানা অপসারণে মাঠে নামবে

কচুরিপানা মুক্ত পানিতে স্বস্তি ফিরবে ডাকাতিয়া পাড়ের মানুষের

প্রবীর চক্রবর্তী।
কচুরিপানা মুক্ত পানিতে স্বস্তি ফিরবে ডাকাতিয়া পাড়ের মানুষের

এককালের ভয়াল প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদী দখলে ও দূষণে মৃতপ্রায়। কচুরিপানা জটের কারণে প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ। এর সাথে সাথে যুক্ত হয়েছে বোরোপিট খালসহ চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার শতাধিক খালের দুরবস্থা। সব মিলিয়ে সর্পিলভাবে ফরিদগঞ্জ উপজেলাকে ঘিরে থাকা নদী ও খালগুলো আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বিগত বছরের টানা বর্ষণে ভয়াবহ কৃত্রিম বন্যা যার বড়ো প্রমাণ। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প কৃষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যেই বেশ কিছু খাল সংস্কার করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনেছে। চলতি অর্থবছরেও আরো কিছু খালের সংস্কার হবে। কিন্তু এর বাইরেও সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায় কচুরিপানার সীমাহীন জট। নদী, খাল, বিল সর্বত্রই কচুরিপানার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণে আশেপাশে পরিবেশ বিপর্যয় হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পুরো নদীতে কচুরিপানা জটে নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। নদীতে মাছ ধরে শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজারো জেলে পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘকাল ধরে কচুরিপানা অপসারণের দাবি উপজেলাবাসীর থাকলেও বড়ো অংকের বাজেটের দোহাই দিয়ে এ উদ্যোগ কেউ গ্রহণ করেননি। অবশেষে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের দিয়ে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫শতাধিক শিক্ষার্থী ৫টি স্থানে প্রাথমিকভাবে বোরোপিট খাল থেকে কচুরিপানা অপসারণের কাজ করবে। এর আগে টেস্ট কেস হিসেবে উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গল্লাক বাজার এলাকার বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সফলও হয়েছেন তিনি। তাই বড়ো পরিসরে কাজ শুরু করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মতিন মাওলানা ব্রীজ থেকে ওয়াপদা অফিস পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বোরোপিট খাল পরিষ্কার করবে চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একশত শিক্ষার্থী ও সকদিরামপুর দাখিল মাদ্রাসার ১০জন শিক্ষার্থী। বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের ওয়াপদা অফিস থেকে একতা বাজার পর্যন্ত ৪কিলোমিটার খালের কচুরিপানা অপসারণ করবে বালিথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের একশত ও ইসলামপুর শাহ ইয়াছিন ফাজিল মাদ্রাসার ৪০জন শিক্ষার্থী। শোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ১২০ জন ও শোল্লা দাখিল মাদ্রাসার ২০ জন শিক্ষার্থী একতা বাজার থেকে কামতা বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খাল পরিষ্কার করবে । কামতা ব্রীজ থেকে সুবিদপুর ব্রীজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার খাল কচুরিপানা মুক্ত করবে বাশারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫জন ও কামতা ফাজিল মাদ্রাসার ৪০জন শিক্ষার্থী। সুবিদপুর ব্রীজ থেকে গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ব্রীজ (নারকেলতলা ব্রীজ) পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার খাল কচুরিপানা পরিষ্কার করবে গল্লাক নোয়াব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১শত ও ঘনিয়া মাদ্রাসার ৩০ন শিক্ষার্থী। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও শিক্ষার্থীদের সাথে এই কাজে যোগ দিবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, স্বল্প খরচে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ নৌপথ দিয়ে পণ্য চান্দ্রা, টুবগী, গাজীপুর হয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে আসতো। বর্তমানে এ নৌপথে মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানা জটে নৌপথটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে ট্রলার চালক মফিজ বেপারীসহ বেশ ক'জন বলেন, কচুরিপানার কারণে আমরা আগের মতো নৌপথ ব্যবহার করতে পারছি না। যদি ঠিকই কচুরিপানা অপসারণ করা হয়, তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে নিজের কর্মে ফিরতে পারবো। দুঃখ প্রকাশ করে পরেশ দাস, মো. ইয়াকুব মিয়াসহ আরো ক'জন জেলে বলেন, আমরা আগে নদী ও খালে মাছ শিকার করে সুখে শান্তিতে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কচুরিপানা জটের কারণে আগের মতো মাছ পাচ্ছি না। এতে আমাদের পূর্বের পেশা বদল করে অন্য পেশায় যেতে হচ্ছে। কচুরিপানা সরালে আমরা আগের মতো পরিবার নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন দেখতাম। সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটির সদস্য রহিমা আক্তার কলি বলেন, এ উপজেলার হাজারো পরিবারের মানুষের স্বপ্ন একদিন এ নদী ও খালগুলো কচুরিপানা মুক্ত হবে। সম্প্রতি ইউএনও সুলতানা রাজিয়া যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, আমাদের স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়ন হওয়ার আশা করছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, নদী ও খালে কচুরিপানার কারণে মাছ উৎপাদন কমে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, নদী ও খালগুলোতে কচুরিপানা দেখে আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছিলো। যেখানে মানুষ বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহণ করার কথা, সেখানে তারা ময়লা আবর্জনায় ভরা দূর্গন্ধযুক্ত বিষবাষ্প গ্রহণ করছে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে বড়ো বাজেটের প্রয়োজন, তবে সদিচ্ছাকে পুঁজি করে কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবীরা আমাকে সহযোগিতার যে আশ্বাস প্রদান করেছে, তা অব্যাহত থাকলে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কচুরিপানা মুক্ত হবে ডাকাতিয়া নদী ও খাল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়