প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৩:৩৫
রায়পুর পৌরসভার সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে বেহাল, দুর্ঘটনায় আহত, চরম ভোগান্তি

দু বছরের বেশি সময় ধরে টিএন্ডটি সড়ক ও মহিলা কলেজ সড়ক এবং গত দুদিন ধরে রায়পুর- হায়দরগঞ্জ সড়কের সরকারি মার্চ্চেন্টস একাডেমির সামনে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভা। তবে ধীরগতির কাজ ও বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কষ্টে আছেন এলাকাবাসী।
|আরো খবর
শুক্রবার দুপুরে মার্চ্চেন্টস একাডেমির সামনের সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এক বৃদ্ধ নারী ড্রেনে পড়ে মারাত্মক জখম হয়েছেন। এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।তাৎক্ষণিক নবাগত ইউএনও ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে ড্রেনের কাজ বন্ধ করেন।
রায়পুর প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার কয়েকটি এলাকা এখন দুর্ভোগের আরেক নাম। প্রায় প্রতিটি সড়কেই চলছে পৌরসভার প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি। কিছু সড়ক আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ, কোথাও বিশাল খননযন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে আর কোথাও ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করা হলেও পিচঢালাই নেই। ফলে বাসিন্দা ও পথচারীদের জন্যে চলাচল হয়ে উঠেছে কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ।
জানা গেছে, দু বছরের বেশি সময় ধরে নতুন বাজার ও মহিলা কলেজ সড়ক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে রায়পুর পৌরসভা। তবে ধীরগতির কাজ ও বারবার সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কষ্টে আছেন এলাকাবাসী। এ আবাসিক এলাকায় বিদ্যালয়, মাদরাসা, সরকারি অফিস ও হাসপাতাল আছে। বর্তমানে এ এলাকায় হাজারও মানুষ বসবাস করছেন।
নতুনবাজার এলাকার পিয়েল হোসেন নামের এক শিক্ষক বলেন, বড়ো বড়ো গর্তের পাশাপাশি ভাঙ্গা আছে অনেক স্থানে। পিচঢালাই না থাকায় যান চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা মোটরসাইকেল চালান, তারা কোমর ও পিঠের সমস্যায় ভুগছেন। রিকশাচালকেরাও এই সড়কগুলোতে বাড়তি ভাড়া চান।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ১১তলা গাজী কমপ্লেক্সের রাস্তা, পৌরসভার দেনায়েতপুর, কাঞ্চনপুর গ্রামের টিএন্ডটি সড়ক ও রায়পুর থেকে হায়দরগঞ্জ সড়কের ট্রাফিক মোড় থেকে মডেল মসজিদ পর্যন্ত ও মধুপুর গ্রামসহ সব সড়কই খানাখন্দে ভরা। পৌরসভার প্রকল্পের কাজের জন্যে মহিলা কলেজ সড়ক পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চারটি সড়কের একাংশ বন্ধ। ক'টি এলাকায় প্রবেশের সড়কও বেহাল।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই মাসের দিকে কয়েকটি এলাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু করে পৌরসভা । এর আগেও সড়কগুলোতে প্রায়ই পানি উঠতো। তবে ওই সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির পর এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাড়তি দুর্ভোগ। পানি কম উঠলেও ভাঙ্গা রাস্তায় চলা মুশকিল। দূর থেকে শিক্ষার্থীদেরও হেঁটে আসতে হয়। বিকল্প পথ দিয়ে ঘুরে আসতে সময় বেশি লাগে।
২০২৩ সালে 'পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন পায় একনেক সভায়। এরপর আরও কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছে পৌরসভা। পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে পুরো শহরকে ছয়টি অঞ্চল বা ক্যাচমেন্টে ভাগ করা হয়। শহরের ১১তলা বিশিষ্ট গাজি কমপ্লেক্সের রাস্তার কাজ, দেনায়েতপুর (পোস্ট অফিস সড়ক), কাঞ্চনপুর (টিএন্ডটি সড়ক), মধুপুর (মহিলা কলেজ সড়ক) সহ কয়েকটি ক্যাচমেন্টের আওতায় এলাকা। মহিলা কলেজ সড়কের প্রায় পুরোটা বন্ধ করে চলছে পৌরসভার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ। এতে যাতায়াতে ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।।
খুবই ঢিলেঢালাভাবে গাজি কমপ্লেক্সের রাস্তার কাজ চলছে, মহিলা কলেজ সড়ক একদিকে বন্ধ, অন্যদিকে রায়পুর- হায়দরগঞ্জ সড়কের মডেল মসজিদ পর্যন্ত ভাঙ্গা সড়কে সরকারি মার্চ্চেন্টস একাডেমি, সেনা ক্যাম্প, পীর বাড়ি, উপজেলা পরিষদ গেইট পর্যন্ত করুণ অবস্থা। গত ক'দিন ধরে সড়কের বাম পাশে বরাবর খোঁড়াখুঁড়ি করেছে পৌরসভা। সরেজমিন ঘুরে ক'টি সড়কে একই দশা দেখা গেছে। এর মধ্যে পৌরসভার ৬ নাম্বার ওয়ার্ডের টিএন্ডটি সড়কের অবস্থা খুবই করুণ ও খানাখন্দময়।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত ক'দিনের টানা বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটু পানিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় । তবে নতুন ভোগান্তি পাঁচটি সড়কে এ খোঁড়াখুঁড়ি। হুটহাট দেখা যায় সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্য সড়ক ধরে ঘুরে আসতে সময় লাগে বেশি। মসজিদ, হাসপাতালে যাওয়ার সড়কগুলোর অবস্থাও বেহাল। অন্তত সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
নতুনবাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম ও বিল্লাল হোসেন বলেন, রায়পুর থেকে হায়দরগঞ্জ সড়কের শহরের গাজি কমপ্লেক্স রাস্তা, পৌরসভার অংশে ও মহিলা কলেজ ও মধুপুর এলাকায় বড়ো বড়ো গর্ত, এটি সত্য। তবে ভাঙ্গা আছে অনেক স্থানে। পিচঢালাই না থাকায় যান চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যারা মোটরসাইকেল চালান, তারা কোমর ও পিঠের সমস্যায় ভুগছেন। রিকশাচালকেরাও এলাকায় আসতে বাড়তি ভাড়া চান।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। শহরের গাজি কমপ্লেক্স রাস্তা, মহিলা কলেজ সড়ক, টিএন্ডটি সড়ক ও মধুপুর এলাকায় কাজ শেষ হতে আরও ৬-৭ মাস সময় লাগবে। তবে আমরা কিছু সড়ক সংস্কার করে দিয়েছি, যাতে নাগরিক সমস্যা না হয়। তবে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প একসঙ্গে চলমান থাকায় এখনই বড়ো ধরনের সড়ক সংস্কারে হাত দিচ্ছি না । জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্যে কয়েকটি সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এসব কারণে কয়েকটি সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এ মুহূর্তে বড়ো ধরনের সংস্কার করা যাচ্ছে না।
পৌরসভার নতুন প্রশাসক (ইউএনও) মেহেদি হাসান কাউছার বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তাছাড়া যতটুকু জেনেছি বর্ষার জন্যে কয়েকটি কাজ বন্ধ আছে। বর্ষা শেষ হলেই কাজ করা হবে। যেসব সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করেছে, সেগুলোও পিচঢালাই দেওয়া হবে।