প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:২৯
কবরেও শান্তি নেই : নূরাল পাগলার লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা কী বার্তা দেয়?

রাজবাড়ির গোয়ালন্দে তথাকথিত ইমাম মাহাদী দাবিদার নূরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সমাজের গভীর ক্ষতগুলোকেই সামনে এনেছে। একজন মৃত মানুষের প্রতি এমন নির্দয়তা কেবল অমানবিকই নয়, এটি আমাদের মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়েরও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
গত ২৩ আগস্ট নূরাল পাগলের মৃত্যুর পর তার পরিবার তাকে নিজ বাড়ির সামনে একটি উঁচু কাঠামোর ভেতরে কবর দেয়। এরপর সেই কবরকে কাবা শরীফের আদলে রঙ করা এবং 'হযরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ' নামে ব্যানার টানানোর মতো কিছু বিতর্কিত কাজ করা হয়। এসব কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়ার কারণ ছিল। কিন্তু সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যেভাবে ঘটলো, তা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
যখন তথাকথিত 'তৌহিদী জনতা' কবর ভেঙে লাশ বের করে প্রকাশ্য রাস্তায় পুড়িয়ে দেয়, তখন তারা নিজেদেরকে কিসের ভিত্তিতে ধার্মিক বা মুসলমান বলে দাবি করে? ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা হলো ক্ষমা, ধৈর্য এবং অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এমনকি একজন মৃত ব্যক্তির প্রতিও সর্বোচ্চ সম্মান বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। সেখানে, নূরাল পাগলের লাশ পুড়িয়ে ফেলা শুধু ধর্মীয় শিক্ষার লঙ্ঘনই নয়, এটি মানব সভ্যতার মৌলিক নীতিগুলোকেও পদদলিত করেছে।
এই ঘটনা আমাদের সমাজে ছড়িয়ে থাকা অসহিষ্ণুতা এবং বিচারহীনতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। যখন মানুষ নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয় এবং উন্মত্ত জনতায় পরিণত হয়, তখন রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, আমরা একটি মানবিক ও সহনশীল সমাজ গঠনে এখনো অনেক পিছিয়ে আছি।
প্রশ্ন থেকে যায়, কেন এমন ঘটনা ঘটলো? এর পেছনে কি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টিই দায়ী, নাকি এর আড়ালে আরও গভীর কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতা কাজ করছে? কারা এই ধরনের ঘটনার উস্কানি দিচ্ছে এবং কেন প্রশাসন সময় মতো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি।
নূরাল পাগলের লাশ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাটি আমাদের সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি শুধু একটি ব্যক্তির শেষ যাত্রার অমর্যাদা নয়, বরং এটি আমাদের মানবিক বোধ ও নৈতিকতার এক করুণ পরাজয়। এই অমানবিকতার কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ফিরিয়ে আনা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। নইলে এমন ঘটনা আবারও ঘটবে, এবং আমরা শুধু আফসোস করে যাবো, কারণ মৃত মানুষও যেখানে শান্তিতে থাকতে পারে না, সেখানে জীবিত মানুষ হিসেবে আমাদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?
লেখক : সাংবাদিক,প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।
What's app number:
+8201083727906
ভাইস-চেয়ারম্যান (কোরিয়া বাংলা-প্রেসক্লাব)