প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ১০:৫৮
নিউইয়র্কে সিরাজুল আলম খানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ পালন করা হবে

৯ জুন ২০২৫ ছিলো মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীন বাংলার অন্যতম সংগঠক, স্বাধীন বাংলার নিউক্লিয়াসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ২য় মৃত্যুবাষিকী । এ উপলক্ষে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে আজ রোববার (২২ জুন ২০২৫) বিকেল সাড়ে ৬টায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদ নিউইয়র্কের উদ্যোগে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে । খবর বাপসনিউজ। এতে সভাপতিত্ব করেন সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদ নিউইয়র্কের আহ্বায়ক ডা. মজিবুল হক ও সভা পরিচালনা করবেন সংগঠনের সদস্য সচিব শাহাব উদ্দীন। উক্ত অনুষ্ঠানে সকল প্রবাসীকে সংগঠনের পক্ষ থেকে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচিত সিরাজুল আলম খান নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৫৭-১৯৬০ সাল মেয়াদে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (সভাপতি : রফিকুল্লাহ চৌধুরী) এবং ১৯৬০-৬৩ সাল মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এই কমিটিতে শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ওই কমিটিতেই প্রথমে সদস্য, পরে ১৯৬১ সালে সহ- সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান সিরাজুল আলম খান। সিরাজুল আলম খান ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। থাকতেন ফজলুল হক হলে। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাংলাদেশের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে, তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এলে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন প্রশ্নে মতভেদ দেখা দেয়। গড়ে তোলেন একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘অভ্যুত্থান’-এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আর এই দুটি বৃহৎ ঘটনার নায়ক ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের। যদিও তৎকালীন জাসদের অনেক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তাকে না জানিয়ে তৎকালীন ক’জন অতি উৎসাহী নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তাহেরের পরিবারের লোকজন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে জিম্মি করতে গিয়ে খুন হয়। জাসদের নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বেশিরভাগ বিষয়ে তৎকালীন শীর্ষ নেতারা এসব জানতেই না।
সিরাজুল আলম খান ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় সাত বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষ দিকে গ্রেফতার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানে শাসন আমলে আবার গ্রেফতার হন এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। ১৯৯২ সালে বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেফতার করা হলে চার মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান।
সিরাজুল আলম খান ৯ জুন ২০২৪ ইন্তেকাল করেন।