মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ২০:৩৪

বাবার বাড়িতে দাফন

হাজীগঞ্জে হত্যার শিকার গৃহবধূ ফাতেমার স্বামী পাসপোর্ট নিয়ে লাপাত্তা

কামরুজ্জামান টুটুল।।
হাজীগঞ্জে হত্যার শিকার গৃহবধূ ফাতেমার স্বামী পাসপোর্ট নিয়ে লাপাত্তা
নিহত গৃহবধূ প্রিয়া ও তার পলাতক স্বামী আল-আমিন।

প্রেম করে প্রবাসী খালাতো ভাইকে বিয়ে করার ৬ বছর পরে সেই স্বামীর হাতেই খুন হন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার প্রিয়া। স্বামীর বাড়ি হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আল-আমিন হচ্ছে ফাতেমা আক্তার প্রিয়ার স্বামী। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মোবাইল ফোন নিয়ে রাতে হাতাহাতিসহ ধস্তাধস্তি হয়। পরে স্বামী আল-আমিন ফাতেমাকে গলা টিপে ধরলে তাতেই মৃত্যু হয় ফাতেমার। এরপরেই আল-আমিনের পরিবার ফাতেমার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। এদিকে ঘটনার দিন রোববার (১৩ জুলাই ২০২৫) বিকেলে আল-আমিন তার নিজ বাড়িতে গিয়ে পাসপোর্টসহ রিটার্ন বিমান টিকেট নিয়ে এলাকা ছাড়ে। সকলের ধারণা সে দ্রুত দেশ ছেড়েছে বা ছাড়বে।

এদিকে সোমবার (১৪ জুলাই) ময়নাতদন্ত শেষে বাদ জোহর ফাতেমাকে তার বাবার বাড়ি হাটিলাতে দাফন করা হয়েছে। শুরু থেকেই ফাতেমার বাবাসহ তার আত্মীয়রা দাবি করে আসছেন, ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশের অপমৃত্যু মামলা ছাড়া নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি।

আল-আমিনের গ্রাম তথা ফুলছোঁয়া গ্রামের একাধিক সূত্র জানায়, কিছু একটা বিষয় নিয়ে শনিবার (১২ জুলাই) রাতে স্বামী আল-আমিন ও স্ত্রী ফাতেমা আক্তার প্রিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। স্বামী-স্ত্রীর কথা কাটাকাটিতে আগুনে ঘি ঢেলেছে আল-আমিনের বাড়িতে থাকা বোন। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আল-আমিন ফাতেমার গলা টিপে ধরলে তাতেই ফাতেমা মারা যায়। পরের দিন যারা ফাতেমাকে দেখেছে, সবাই তার গলার দাগ প্রত্যক্ষ করেছে, আর এ থেকেই স্থানীয়রাসহ তার পরিবার নিশ্চিত হয় ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের সূত্রে আরো জানা যায়, রোববার ভোর হতেই আল-আমিন স্ত্রীর লাশ বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। দুপুরের কিছু পরে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ফাতেমার লাশ ময়না তদন্তের জন্যে নিয়ে যাওয়ার অনেক পরে সে ফের বাড়িতে এসে পাসপোর্ট ও বিমানের রিটার্ন টিকেট নিয়ে বাড়ি ছাড়ে।

স্থানীয়রা আরো জানান, পাসপোর্ট আর টিকেট নিয়ে যখন বাড়ি ছেড়েছে, তখন নিশ্চিত সে জরুরি ভিত্তিতে টিকেট কেটে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ ত্যাগ করবে।

ফাতেমার বাবা নুরুল ইসলাম জানান, শনিবার দিবাগত রাতে ফাতেমা ফোন করে আমাদেরকে ফুলছোঁয়া বাড়িতে আসতে বলে। এরপর থেকে ফাতেমার মোবাইল ফোন ও জামাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন সকাল ৯টার দিকে ফোন করে আমাদেরকে জানানো হয়, ফাতেমা স্ট্রোক করে মারা গেছে। এরপরেই আমরা এ বাড়িতে এসে দেখি ফাতেমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের দাগ। আমরা নিশ্চিত তারা আমার মেয়েকে মারধর করে হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, ময়না তদন্ত শেষে ফাতেমার লাশ তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

উল্লেখ্য, হাজীগঞ্জের হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলামের কন্যা ফাতেমা আক্তার প্রিয়ার সাথে ৬ বছর পূর্বে প্রেমের সূত্র ধরে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আপন খালাতো ভাই বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আল-আমিনের। বিয়ের পর আল-আমিন জীবিকার তাগিদে বিদেশ চলে যায়। তাদের ঘরে কোনো সন্তানাদি না থাকার কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ১৫/১৬ দিন হবে আল-আমিন বাড়িতে এসেছে। বাড়িতে আসার পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়