সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৯

আলঝেইমার : স্মৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার রোগ

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
আলঝেইমার : স্মৃতি ভুলিয়ে দেওয়ার রোগ

সেপ্টেম্বর হচ্ছে আলঝেইমার রোগের মাস। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের একুশ তারিখ বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। উনিশশো ছয় সালে জার্মান মনোবিজ্ঞানী আলঝেইমার রোগ সম্পর্কে বিশদ ধারণা দেন। এবছর আলঝেইমার দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘ডিমেনশিয়া জানুন, আলঝেইমার জানুন’। সারাবিশ্বে প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়নেরও অধিক রোগী আলঝেইমার্সে ভুগছেন। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বার্ষিক বাজেটের সোয়া বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ আলঝেইমার মোকাবেলায় বরাদ্দ রেখেছে। সাধারণত পঁয়ষট্টি বছর ও তার ঊর্ধবয়সী মানুষেরা আলঝেইমারে আক্রান্ত হতে পারে।

আলঝেইমার হলো মূলত ব্রেইন বা মস্তিষ্কের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয়জনিত রোগ। এতে মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্স ক্ষয় হয়ে যায়। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাল জাইরাস নামের অংশে প্রথম আক্রমণ শুরু হয়। রোগের কারণ নির্ণীত না হলেও এ রোগ বংশগত প্রবাহে জিনের মাধ্যমে বাহিত হয়। রোগের প্রকোপ অনুসারে আলঝেইমার তিন রকমের। মৃদু, মাঝারি ও মারাত্মক। এ রোগের নিরাময় নেই। ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে। উপসর্গ অনুযায়ী এ রোগে স্মৃতি বিলোপ ঘটে, যাকে বলে ডিমেনশিয়া। সুদূর অতীতের স্মৃতি বা শৈশবের স্মৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় না দেহের দরকারি কাজগুলোও। যেমন কীভাবে গ্লাস ধরতে হয়, চামচ ধরতে হয়, পিঠ চুলকোতে হয় ইত্যাদি। কেবল সাম্প্রতিক স্মৃতিগুলো বিলুপ্ত হয়। আক্রান্ত রোগীর কিছু কিছু সূক্ষ্ম কাজে অসুবিধা দেখা দেয়। যেমন : লিখতে গেলে হাত কাঁপে, দাড়ি চাঁছা যায় না, নখ কাটতে গেলে ঠিকমত হয় না ইত্যাদি। কথা বলতে গেলে মুখে শব্দঘাটতি দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগী তার শব্দভাণ্ডার ভুলে যায়। কথা বলতে বলতে মাঝপথে শব্দের অভাবে কথা বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প শব্দ দিয়ে কথা প্রতিস্থাপন করতে পারে না। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয় হয় বিধায় নতুন করে আর ব্রেইনকোষ বা নার্ভ সেল তৈরি হয় না। ব্যক্তির জ্ঞানজনিত ক্ষমতা বিলোপ পায়। তবে স্বাভাবিক কার্যক্রমে তেমন প্রভাব পড়ে না। সদ্য স্মৃতি বিলোপের কারণে সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। ভাত খেলেও মনে করে বৌমা ভাত খেতে ডাকেনি বা দেয়নি। চা আগে পান করলেও স্মৃতিভোলা হওয়ার কারণে দিনে কয়েকবার চা পান করতে চায়। এ নিয়ে বউ-শাশুড়ি, বউ-শ্বশুর দ্বন্দ্ব লেগে যায়। ঔষধ খেতে ভুলে যায় কিংবা একই ঔষধ বার বার খেয়ে ফেলে। ঘর থেকে একবার বের হলে কখনও কখনও ঠিকানা ভুলে যায়। আর মনে করে ঘরে ফিরতে পারে না।

গবেষকরা আলঝেইমারের কারণ অনুসন্ধান করে দুটো প্রোটিনের সন্ধান পেয়েছেন। একটা হলো বিটা-অ্যামাইলয়েড এবং অন্যটা হলো ‘টউ’ প্রোটিন। বিটা-অ্যামাইলয়েড চূর্ণগুলো একত্র হলে প্ল্যাক তৈরি হয় যা মস্তিষ্কের কোষে জমাট হয়ে রক্ত ও পুষ্টি সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। টউ প্রোটিনগুলো নিজেদের আকৃতির বিকৃতি ঘটিয়ে স্নায়ুজালক তৈরি করে যা অভ্যন্তরীণ পুষ্টি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়।

আক্রান্ত রোগীর ঘুমের ধরন পাল্টে যায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে। নিজেকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যায়। অলীক ভাবনা এবং অলীক দর্শন রোগে ভোগে।

এদের জটিলতা অনেক। হাঁটতে গেলে পড়ে যেতে পারে। খাবার গ্রহণের সময় ফুসফুসে খাদ্যবস্তু ঢুকে গিয়ে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া হয়। বেডসোর বা শুয়ে থাকতে থাকতে গায়ে ঘা বা ক্ষত হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের জ্বরে ভুগতে পারে। অপুষ্টি, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। সাধারণত পঁয়ষট্টি বছর-ঊর্ধ নারীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ। যাদের ডাউনস্ সিন্ড্রোম আছে, যারা ফ্যামিলিয়াল জিনগত বিভ্রাটে ভোগে তারাও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ।

আলঝেইমার প্রতিরোধ

* নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম

* স্বাস্থ্যকর আহার

* উচ্চরক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা

* রক্তে চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের আশঙ্কা হতে মুক্ত থাকা

* ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়