প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:১০
স্ত্রীকে তালাকের জেরে বাড়িছাড়া প্রবাসী

স্ত্রীর একাধিক অনৈতিক সম্পর্কের ভুরি ভুরি প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর সন্তানদের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নেন প্রবাসী বুলবুল আহমেদ (৫৪)। কিন্তু কোনোভাবেই স্ত্রী ফাহিমা আক্তার (৩৫)কে বাগে আনতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তালাক দেন। এরপর থেকে সেই নারী আত্মহত্যা করে স্বামীকে দোষারোপ করবে, ২০ লাখ টাকা দাবি, হত্যা ও মিথ্যা মামলার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, যে কারণে প্রবাসী নিজেই এখন ঘর-বাড়ি ছাড়া। বর্তমানে ফাহিমা সন্তানদের নিয়ে সেই স্বামীর ঘরে বসবাস করছেন ও বাড়ি ছাড়ছেন না। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস-দরবার, পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ, সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়ে বিচারের অপেক্ষায় দিন গুণছেন সেই প্রবাসী। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের ৬ নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামের মিজি বাড়ি প্রকাশ্য পাথুরিয়া বাড়ির।
|আরো খবর
বুলবুল আহমেদ জানান, ১৩ বছর ধরে তিনি ব্রুনাই প্রবাসী ছিলেন। স্ত্রীর এহেন কার্যক্রমের কারণে গত ৯ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ২১ বীর আর্মি ক্যাম্প হাজীগঞ্জ, ১২ মে লিগ্যাল নোটিস ও গত ২৭ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি আরো জানান, প্রবাসে থাকতে তিনি চারবার ছুটিতে দেশে আসেন। তার প্রবাসে থাকার সুযোগে তার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িত হয়ে অসামাজিক ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। বিষয়টি জানতে পেরে ২০২০ সালে তালাকনামা পাঠান, কিন্তু সন্তানদের কথা চিন্তা করে স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেন। পরে তিনি ছুটিশেষে প্রবাসে চলে যাওয়ার পর আবারো পরকীয়া ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তার স্ত্রী। যার স্বীকারোক্তিসহ প্রমাণাদি রয়েছে।
সর্বশেষ বিষয়টি জানতে পেরে গত ২১ এপ্রিল নোটারী পাবলিকের (রেজি. নং-৩৪৮) মাধ্যমে স্ত্রী ফাহিমা আক্তারকে তালাক দেন। এসব ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে তাকে অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করেন তার স্ত্রী ফাহিমা। ফাহিমার সব অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। এদিকে তালাকের কপি স্ত্রীর বাবার বাড়ির ঠিকানায় এবং ইউপি চেয়ারম্যান ও তার নিজ এলাকার ইউপি সদস্যের কাছে একাধিকবার ডাকযোগে পাঠানো হয়।
তালাকের পরেও ফাহিমা আক্তার তার স্বামীর বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাচ্ছেন না না। উল্টো তিনি আত্মহত্যা করবেন, স্বামীকে দোষারোপ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, হত্যা ও মিথ্যা মামলার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমনকি তার স্ত্রীর ভাই সোহেল আহমেদ, ভায়রা হেলাল উদ্দিনও তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আর স্ত্রী ও তার স্বজনদের নির্যাতন এবং হুমকির ভয়ে গত পাঁচ মাস ধরে নিজ বাড়ি-ঘর ছাড়া বলে জানান বুলবুল আহমেদ নিজে।
তিনি আরো বলেন, না জানি কোনো অঘটন ঘটিয়ে আমার ওপর দায়ভার চাপায় কিংবা আমাকে মেরে ফেলে। এই ভয়ে এবং নিরাপত্তার হুমকিতে আমি আমার নিজ বাড়ি-ঘর ছাড়া। আমি তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তারা আমার বাড়ি-ঘর জোরপূর্বক দখল করে আছে। তাই, আমি পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশি তদন্তে সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও আমি বাড়িতে যেতে পারছি না। পরবর্তীতে আমি উকিল নোটিস (লিগ্যাল নোটিস) ও আর্মি ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়েছি। এখন আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে আমি ন্যায়-বিচার চাই।
স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে তার (ফাহিমা আক্তার) স্বীকারোক্তি সহ অসংখ্য তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু তথ্য ও রেকর্ড সংগৃহীত রয়েছে।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ফাহিমা আক্তার বলেন, গত দু বছর ধরে আমি ও আমার সন্তানদের ভরণ-পোষণের খরচ না দিয়ে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সর্বশেষ গত ৭ মাস আগে দেশে এসেছেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না এসে আমার নামে নানা কথা রটাচ্ছেন। আর থানা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ কতো লোককে বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। আমি গত ২০ বছর ধরে সংসার করি। আমার উপযুক্ত দু সন্তান আছে। কথা নেই, বার্তা নেই, তালাক দিলেই হবে? আত্মীয়-স্বজন ও দেশের লোকজন আছে। সবাইকে নিয়ে বসুক। এ সময় তিনি তার ভাই সোহেল আহমেদকে ফোন দেন। তখন সংবাদকর্মীরা তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি তার বোনের মাধ্যমে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং সংবাদকর্মীদের নাম-পরিচয় রাখার জন্যে বলেন।
বুলবুল আহম্মদের বাড়ির চাচাতো ভাই ও ভায়রা ভাই হেলাল উদ্দিন বলেন, ফাহিমা-বুলবুল দুজন আমার আত্মীয়। আমি কার পক্ষে যাবো? আর কাকেই হুমকি-ধমকি দেবো? তবে আমি চাই, বিষয়টির সমাধান হোক।
ইউপি সদস্য হাছান খাঁ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এছাড়া বুলবুল তালাকের কাগজ আমাকে দেখিয়েছেন। তবে ডাকযোগে পাঠানো তালাকের কপি এখনো পাইনি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত রয়েছে। সেখানে অভিযোগ দিলে বিষয়টি বিধি অনুযায়ী চেয়ারম্যান দেখবেন।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, এসপি স্যারের কার্যালয়ে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উভয় পক্ষকে আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এখন যদি তিনি (বুলবুল আহম্মেদ) নিরাপত্তার হুমকি মনে করেন, তাহলে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।