রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ০০:০০

উপজেলার সংগঠন হলেও জেলা সদরে বেশ সমাদৃত ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক ॥
উপজেলার সংগঠন হলেও জেলা সদরে বেশ সমাদৃত ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ

গত প্রায় দেড় দশক সময় ধরে চাঁদপুর জেলা সদরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সাথে সমানতালে মান বজায় রেখে অনুষ্ঠান করে দর্শক-শ্রোতাদের মন জয় করে চলছে উপজেলা পর্যায়ের একটি সংগঠন, যার নাম ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ। তবে এটি উপজেলা সদরেও অবস্থিত নয়, এটির অবস্থান উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে। সে উপজেলাটি হচ্ছে কচুয়া এবং এ উপজেলার বিখ্যাত ও আলোচিত সংগঠনই হচ্ছে ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ। কালিয়াপাড়া-কচুয়া সড়কের পাশে প্রসিদ্ধ রহিমানগর বাজারে সংগঠনটির কার্যালয়।

'সংস্কৃতি সুন্দর মনের বিকাশ ঘটায়’ এই স্লোগানকে ধারণ করে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ( পয়লা বৈশাখ) রহিমানগর পনশাহী রোডে নূর ম্যানশনের নিচতলায় ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘের যাত্রা শুরু হয়। তখনকার সময় দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো। কচুয়া উপজেলার জন্যে একটি নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক সংগঠন গঠন করার সেটিই ছিলো উপযুক্ত সময়। কচুয়ায় যখন যে সরকার থাকে তাদের দলের লোকজনকে প্রাধান্য বা মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যে কোনো সংগঠন করাটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। এতে সংগঠন নিরপেক্ষতা হারাতো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকায় সেই রেওয়াজ উপেক্ষা করে নিরপেক্ষ সংগঠন হিসেবে ঝিলমিলের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। তৎকালীন কচুয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন সৈয়দ নুরুল বাসির। তিনি এই সংগঠনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে একটি কথা বলেছিলেন উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে--আমি আজকের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি বসে একজন অন্যজনকে সম্বোধন করে কথা বলছেন। আমার জানা মতে, অতীতে নির্দলীয় রূপের অভাবে কচুয়ায় কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন বেশিদিন স্থায়িত্ব পায় নি। যেহেতু ঝিলমিলের দাওয়াতে এলাকার সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছেন, তাই আমার মনে হয় এই সংগঠনটি সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

প্রধান অতিথির এই মন্তব্যটি সংগঠনটি পরিচালনায় অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। আজ ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ ১৬ বছর অতিক্রম করে ১৭ বছরে পদার্পণ করেছে। গত ১৪ এপ্রিল ২০২৪ (পয়লা বৈশাখ ১৪৩১) নবম মেয়াদের জন্যে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে সাংবাদিক ফরহাদ চৌধুরী আবারো সভাপতি ও ৩য় মেয়াদের জন্যে সাংবাদিক আহসান হাবীব সুমন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার রাকিবুল হাসান ফারুক।

সংস্কৃতি চর্চার ধারাবাহিকতায় কচুয়া উপজেলা প্রশাসনের বই মেলা, বিজয় মেলা, কচুয়া ও হাজীগঞ্জে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান, হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে চড়ুইভাতি, কচুয়া উন্নয়ন মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ। বিটিভির আয়োজনে উপজেলা পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বাঙালি সাংস্কৃতিক মঞ্চের চাঁদপুর জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ, ক্লোজআপ ওয়ান, পাওয়ার ভয়েসসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এই সংগঠনের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছে।

ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘের সুখ্যাতি কচুয়া ও হাজীগঞ্জের সীমানা ছাড়িয়ে জেলা সদরেও পৌঁছে যায় প্রতিষ্ঠার স্বল্প সময় পর থেকেই। সে কারণে চাঁদপুর জেলা সদরে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা, চতুরঙ্গের ইলিশ উৎসব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন বাঁশি স্মৃতি সংসদের 'চিরঞ্জীব '৭১' চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে এই সংগঠনটিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্যে বারবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। চাঁদপুর কণ্ঠের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান (২০১৯) এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বৈশাখী মেলা (২০২৪)তেও আমন্ত্রিত হয়ে সংগঠনটি বেশ সুনামের সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

শুধু সংগীত ও নৃত্যেই ঝিলমিলের শিল্পীরা পারদর্শী নয়, কৌতুক, একক অভিনয় ও বিভিন্ন নাটকেও তারা অভিনয় করেন। এমনকি খেলাধুলাও করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান 'বিটা'র অর্থায়নে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সেবামূলক কার্যক্রমের ওপর নাটক, চাঁদপুর বিজয় মেলায় 'রাজাকারের ফতুয়া', কচুয়ার বই মেলায় 'রক্তের দামে কিনেছি বাংলা', নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ জিন্দাপার্কে ‘আবার তোরা মানুষ হ' প্যাকেজ নাটক, 'কিন্জস'সহ অনেক জনপ্রিয় নাটকে ঝিলমিলের অভিনয় শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। স্থানীয়ভাবে ফুটবল আয়োজনেও রয়েছে ঝিলমিলের ভূমিকা। এছাড়া প্রতি বছর পবিত্র ঈদে ঈদ আনন্দ উৎসব, সকল শিল্পীকে নিয়ে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করে থাকে।

ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ অন্যের আয়োজনেই কেবল অংশ নেয়, তা কিন্তু নয়। নিজেরাও বড়ো আয়োজন করে নিজ জেলা ও দেশের বিভিন্ন স্থানের সংগঠনকেও তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফলতা অর্জন ও আলোচনায় এসেছে ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ১৪টি পিঠা উৎসব/পৌষ মেলা উদযাপন করে। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জনপ্রিয় সংগঠনগুলো প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক পরিবেশন করে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কুইজ প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। প্রতিদিনের অনুষ্ঠান রহিমানগর ক্যাবল টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ঝিলমিল সাংস্কৃতিক সংঘ পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নানা বৈচিত্র্য-নূতনত্ব সম্বলিত আকর্ষণ থাকে বলে সহজে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করতে পারে। সেজন্যে এ সংগঠনটির পরিচিতি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে। দক্ষ নেতৃত্ব ও সমন্বয়ও এই সংগঠনের উল্লেখযোগ্য দিক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়