সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুরে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ও বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর কথা
গোলাম মোস্তফা ॥

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট চাঁদপুরের সবেচ’ পুরানো নাট্য সংগঠন বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী। গত ১৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখে সংগঠনটি ৫০ বছরে পদার্পণ করায় সংগঠনটি বেশ চাঙ্গা অনুভব করছে এবং সেহেতু উৎসবমুখরতায় আচ্ছন্ন হয়েছে। নিশ্চয়ই সুবর্ণজয়ন্তী পালনে আজ থেকে ঠিক ৯ মাস ১দিন পর ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট পালন করা হবে বর্ণাঢ্য নানা কর্মসূচি। কিন্তু এই নির্দিষ্ট দিনের ১০ মাস ৬ দিন পূর্বে ১১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী ব্যাপক আয়োজনে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু করে ১১দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। যে উৎসব নিয়ে শুধু চাঁদপুর জেলা, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা কিংবা চট্টগ্রাম বিভাগে নয়, পুরো দেশের নাট্যাঙ্গনে সৃষ্টি হয় ব্যাপক আলোড়ন।

এই নাট্যোৎসবে প্রতিদিনকার নাটক মঞ্চায়নের পূর্বে আয়োজিত আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আমন্ত্রিত সুধী অতিথিবৃন্দের অধিকাংশজন বলেছেন, চাঁদপুরের মতো মাঝারি মানের জেলা শহরে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর মতো সংগঠন মঞ্চ নাটকের দুর্দিনের মধ্যেও নিজেদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড বজায় রেখে অস্তিত্বের সংগ্রামে টিকে থাকাটা যতো বড়ো কৃতিত্ব, তারচে’ বড়ো কৃতিত্ব এটি উদযাপনে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজনের মতো ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। দেশের নাট্যাঙ্গনে বহুল পরিচিত, চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তি, বর্ণচোরার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরীর মতে, রাজধানীর বাইরে চাঁদপুর ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলায় কোনো একক সংগঠনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব আয়োজনের কৃতিত্ব বা সাফল্য নেই। তাঁর এ তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে বলতে হবে, চাঁদপুরের সংস্কৃতির ইতিহাসকেই বর্ণচোরা কেবল সমৃদ্ধ করলো না, দেশের সংস্কৃতির ইতিহাসেও নিজেদের অনিবার্য অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হলো।

১১ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বর্ণচোরার ১১দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে দেশের সাতটি বিখ্যাত নাট্য সংগঠনসহ ভারতের তিনটি নাট্য সংগঠন পূর্ণাঙ্গ নাটক নিয়ে অংশ নেয় এবং চাঁদপুরের ৯টি নাট্য সংগঠন তাদের নাটকের অংশবিশেষ পরিবেশন করে। হলভরা দর্শকে মঞ্চ নাটকের এগারো দিনব্যাপী উৎসবটি অনেক সফল হয়েছে বলে সুধীবৃন্দ সহ সংস্কৃতিবোদ্ধাদের অভিমত।

মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়া তিন নদীর মিলনস্থল ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ হলো সংস্কৃতি চর্চার এক উৎকৃষ্ট স্থান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে একদল সাহসী তরুণ ‘শিল্পের জন্য শিল্প বা নিছক বিনোদনের জন্য নাটক নয়-জীবনের জন্য নাটক’ এ লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট চাঁদপুরে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৪ সালের ৯ অক্টোবর ‘পাপ মৃত্যু’ নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর পথচলা শুরু। সেই থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজও বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী এগিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলা নাট্য সাধনায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে গৌরবের ৪৯ বছর শেষ করে ৫০বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ এই পথ চলাতে স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী ৫২টি নাটক উপহার দিয়েছে। এর মাঝে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর প্রাপ্তি বা উল্লেখযোগ্য অর্জনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অনেক। নিচে ফিরে দেখা যাক সেগুলো--

বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর প্রাপ্তি, অর্জন ও কর্মযজ্ঞ :

১৯৭৭ সালে ২ জুলাই শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ‘আজকাল’ নাটকে শ্রেষ্ঠ প্রয়োজনার পুরস্কার। ১৯৮২ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা নাট্য প্রতিযোগিতার ‘নিহত সংলাপ’ নাটকে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ। ১৯৮৯ সালে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বর্ষাকালীন নাট্যোৎসবে ‘জমিদার দর্পণ’ নাটকে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার লাভ। ১৯৯০ সালে নাট্যায়ন সিলেট আয়োজিত আন্তঃজেলা নাট্যোৎসবে ‘জমিদার দর্পণ’ নাটকে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ও নির্দেশনায় বিশেষ পুরস্কার লাভ। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি দর্শকদের উপস্থিতিতে ‘সাজাহান’ নাটকটি ধারণ ও প্রচার করা হয়।

২০০১ সালে ‘শান্তির ললিত বাণী শোনাবো জীর্ণ পৃথিবীতে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিনব্যাপী আন্তঃজেলা নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারী জেনারেল লিয়াকত আলী লাকী। একই বছর সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান টিটো বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনায় ১১ জানুয়ারি চাঁদপুরে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ফেডারেশনের সাবেক চেয়ারম্যান নাছির উদ্দন ইউসুফ ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সারা যাকের। ওই দিন বর্ণচোরার নিজস্ব নাটক ‘সাজাহান’ মঞ্চস্থ হয়। একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের আয়োজনে পালন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাঁদপুর পদার্পণ দিবস ও নাট্য জলসা। ২০০৩ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের আয়োজনে পালন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাঁদপুর পদার্পণ দিবস ও নাট্য জলসা। একই বছর ১৭ আগস্ট সংগঠনের ৩০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে ‘চিত্তে মোর নিত্য মাদল বাজে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ৩ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন দেশবরেণ্য নাট্যকার ড. সেলিম আল-দীন। উৎসবের ২য় দিন বরেণ্য নাট্যকার ড. সেলিম আল-দীনের ৫৫ তম জন্মদিবস পালন করা হয়। একই বছরের ৩০ অক্টোবর সংগঠনের তিন সদস্য যথাক্রমে আকরাম খান, শরীফ চৌধুরী ও লিটন ভূঁইয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চাঁদপুরের নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

২০০৪ সালে ভয়াবহ বন্যায় বন্যার্তদের মাঝে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী সপ্তাহব্যাপী খাদ্য সামগ্রী, বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের আয়োজনে পালন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাঁদপুর পদার্পণ দিবস ও নাট্য জলসা। একই বছর সংগঠনের আয়োজনে ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘সকলি সুন্দর হেরি এ বিশ্ব জগতে’ শীর্ষক ৩ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব আয়োজন করা হয়। উৎসবটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ ডাঃ দীপু মনি (পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর-হাইমচর আসন থেকে নির্বাচিত পরপর তিনবারের এমপি, বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী)।

২০০৬ ও ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বর্ণচোরার আয়োজনে পালন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাঁদপুর পদার্পণ দিবস ও নাট্য জলসা। তারপর তিন বছরের বিরতিতে ২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চাঁদপুর পদার্পণ দিবস ও নাট্য জলসা। একই বছর ২৬ জুন ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে দেশের সেরা দল হিসেবে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীকে দেয়া হয় সুবচন প্রবর্তিত আরজু স্মৃতি নাট্য পদক ২০১০। ২০১১ সালের ১৩ মে উদযাপন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঐ দিন মীর মোশাররফ হোসেনের জমিদার দর্পণ নাটকটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চাঁদপুরে মঞ্চায়ন করা হয়। একই বছর ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে ও চ্যানেল আইয়ের সহযোগিতায় ঢাকা মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘ভাঙ্গাগড়া’ নাট্যোৎসবে দেশের ৪৮টি দলের মধ্যে চাঁদপুরের বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীও 'লালননামা' নাটকের অংশ নিয়ে অংশগ্রহণ করে। ২০১৯ সালে ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম বিটিভিতে সংগঠনের ‘বিচ্ছু’ নাটকের অংশবিশেষ রেকর্ডিং সহ-সভাপতির সাক্ষাৎকার রেকর্ডিং করা হয়। একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে ‘বিচ্ছু’ নাটকের পুরো অংশ রেকর্ডিং করা হয়, যা বেশ ক'বার প্রচার করা হয়। ২০২০ সালে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় ৮ দিনব্যাপী আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব।

এছাড়াও ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি শুক্রবার আগরতলা নাট্যভূমির সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসবে সংগঠনের সভাপতি শুকদেব রায় ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করে নাট্যভূমির কর্মকর্তা ও কলাকুশলীদের সাথে মতবিনিময় করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার 'নাটক বিনিময়ে মৈত্রীর বন্ধন' এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর আমন্ত্রণে কলকতার গোবরডাঙ্গা নকশা ‘কোনো গৃহবধূ’-এর ২টি প্রদর্শনী এবং শব্দ নাট্যচর্চা, ঢাকার ‘বীরঙ্গনার বয়ান’-এর ১টি প্রদর্শনী চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন করে। ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে শরীফ চৌধুরীর নির্দেশনায় মলিয়ের-এর কমেডি ‘বিচ্ছু’ নাটকের অংশবিশেষ রেকর্ডিং করা হয়। পরবর্তীতে তা প্রচার করা হয়। বিশ্ব নাট্য দিবস উপলক্ষে ২৭ মার্চ বুধবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী অরুণ সরকারের রচনা ও শরীফ চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘ছিঃ’ নাটকটির ২টি প্রদর্শনী মঞ্চায়ন করে এবং ৩ মে শুক্রবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল হলে সংগঠনের ৫১তম প্রযোজনা ‘ছিঃ’ নাটকের মঞ্চায়ন করা হয়।

২০২০ সালের ২৪-৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৮ দিনব্যাপী আন্তঃজেলা নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে চাঁদপুর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জের নাট্যদল নাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করে। একই বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজন এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় 'জঙ্গি-অবক্ষয়-দুর্নীতি/মানবে না এ সংস্কৃতি' শীর্ষক ৬৪ জেলায় জাতীয় নাট্যোৎসবের চাঁদপুর ভেন্যুতে সংগঠনের নিজস্ব নাটক অরুণ সরকারের রচনা ও শরীফ চৌধুরীর নির্দেশনায় ‘ছিঃ’ মঞ্চস্থ করা হয়। একই বছর ৫ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত সংগঠনের উদ্যোগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনের ৪৮ জন সদস্য অংশ নেন।

২০২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় করোনাকালীন স্বল্প জায়গায় স্বল্প খরচে ৩টি স্থানে নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা ২০২১-এ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। ‘সম্প্রীতির বন্ধন’-২০২২ নামক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে খোয়াবখোয়া নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। এছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কুমিল্লায় ৩ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে খোয়াবখোয়া নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।

চাঁদপুর পৌরসভার ১২৫ বছর পূর্তিতে সাংস্কৃতিক পক্ষ, ২০২২-এ ২৭ সেপ্টেম্বর বর্ণচোরার নিজস্ব নাটক জিয়াউল আহসান টিটোর রচনা ও নির্দেশনায় ‘লালননামা’ মঞ্চায়ন করা হয়। মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় ২৭ ডিসেম্বর ‘বিচ্ছু’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। ২০২৩ সালে নারায়ণগঞ্জ সংশপ্তক নাট্যদলের নাট্যোৎসবে নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে ৩ ফেব্রুয়ারি ‘বিচ্ছু’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। স্বরলিপি নাট্যগোষ্ঠীর ৫ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিচ্ছু’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়। মুন্সিগঞ্জ হিরণ-কিরণ থিয়েটারের ৪ দিনব্যাপী জাতীয় নাট্যোৎসবে ২২ জুলাই ‘বিচ্ছু’ নাটক মঞ্চায়ন করা হয়।

করোনাকালে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়। সংগঠনের দুঃস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রায় প্রতিবছরই বিভিন্নভাবে সংগঠনের দুঃস্থ সদস্যদের পড়ালেখা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়।

বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর সদস্যরা পথ নাটক, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস, ত্রাণ বিতরণ, মাদক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের সকল কর্মকাণ্ডসহ সরকারি সকল কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশ থিয়েটার প্রযোজনা হিসেবে গণহত্যা নিয়ে ‘মধ্যরাতের মোলহেড’ নাটক ৩০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে মঞ্চায়ন করা হয়েছে। এ নাটকে বর্ণচোরার ১৪জন মঞ্চ শিল্পী অংশগ্রহণ করেন।

বর্ণচোরার বিগত ৪৯ বছরে সম্পাদিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে চলতি ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত আয়োজিত ১১দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের সাফল্য সকল কিছুকে ছাপিয়ে বস্তুত অনেক জ্বলজ্বল করছে। দেখার অপেক্ষা, নয় মাস পর বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী নিজেদের ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে কী চমক দেখায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়