রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্ট স্টেশনে অজ্ঞাত বৃদ্ধের মৃত্যু
  •   চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের নেপথ্যে--
  •   হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ক্ষমতার দাপটে বিচার পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্তরা

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ০১:০৮

হৃদয়বতী

মিজানুর রহমান রানা
হৃদয়বতী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

চার.

কলাপাড়া বীচ, কক্সবাজার।

বড়োই উদ্বিগ্ন রাসেল। সে তার ‘বড়োভাই’ হরকতের দিকে তাকিলে বললো, ‘ভাইজান, ৫ আগস্টের পর সব ধান্ধায় ভাটা পড়ছে। মানুষজন এখন এদিকে কম আসে। দোকানে, হোটেলে মানুষ নাই। ইয়াবার ব্যবসাও এখন নাই বললেই চলে। গত ছয় মাস ইনকাম না থাকায় টাকাকড়ি একদম নাই। এখন কী করা যায়? নতুন কোনো ধান্ধা বাইর করো ভাই। নাইলে পোলাপান না খাইয়া মইরা যাইবো।’

হরকত রাসেলের কথা ভাবতে বসে। চুপচাপ ভাবতে থাকে।

‘কী অইলো ভাইজান। চুপ থাকলো তো অইবো না। ধান্ধা করতে অইবো। ধান্ধা ছাড়া চলা যাইবো না। মুখ দিয়া কিছু একটা বাইর করো।’ রাসেল তাড়া দেয়।

‘আরে ব্যাটা, চুপ থাক না। মাথায় তো বুদ্ধির পোকাগুলারে আইতে দিবি। হেরপর ওইগুলারে চালান দিয়া তোরে আমি বুদ্ধি বাতায়ে দিমু। চুপ কর।’

আবার ভাবনায় বসে হরকত। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ‘শোন। বুদ্ধির পোকাগুলো আমরা কইলো, এমন একটা নতুন ধান্ধা করা যায়, যেটা করতে মাল লাগবো না। শুধু একটুখানি রিস্ক লইতে অইবো। বুঝলি?’

‘কী ধান্ধা ভাই বলে ফেলো। শুরু কইরা দেই? চকচইক্কা বান্ডিল দরকার। এখোন চলতে অইলে অল্প পয়সায় চলা যায় না। ঢেল মাল লাগে।’

‘যখন দরকার তখন হুনবি। এখন চুপ থাক। মুরগি পাইয়া লই। হেরপর তোরে কমু।’

‘ভাই, এগুলা আমারে দিয়া অইবো না। বদি ভাইয়ের শিষ্য ছিলাম। তিনি এখন জেলে থাকায় মালের ধান্ধা বন্ধ হওয়ায় তুমি এখন আমারে মুরগির দোকানদার বানাইবা, এগুলা আমারে দিয়া অইবো না ভাই।’

‘আরে ব্যাটা, বদি ভাই নাই তো কী অইছে? হরকত ভাই আছে না? এই মুরগি হেই মুরগি না রে, এটা অইলো অন্য মুরগি। তুই শুধু আমি যা বলমু তাই করবি। দেখবি দুই দিনেই রাজা।’

‘কী কন ভাইজান?’ অবাক হয় রাসেল। ‘দুই দিনেই রাজা অয় ক্যামনে? মগের মুল্লুক নাকি?’

‘হ, এহোন মগের মুল্লুক। দেশে সরকার নাই। দেখভালের মানুষ নাই। পুলিশ এখন ডাকলেও আহে না। বাইরে যাইতে ডরায়। এই সুযোগেই আমরা মুরগি পাইলে ওগোরে ভুলাইয়া-ভালাইয়া বিদেশে চাকরির লোভ দেহাইয়া বেইচ্ছা দিমু। একটা মুরগি পাইলো তো দেড় দুই লাখ পামু? বুঝলি?’

আকাশ থেকে পড়লো যেনো রাসেল। আসলে এই ইঙ্গিতটা তো সে বুঝতেই পারেনি। কথাটা মন্দ নয়। দুইদিনেই রাজা হয়ে যাওয়া যাবে। মনে মনে সে আনন্দে আছে। আজ দু দিন ইয়াবা খায় নি। খুশির আনন্দে বের হয়ে গেলো ইয়াবার খেঁাজে।

রাসেলের বের হওয়া দেখে মনে মনে হরকত খুশি হয়। আনন্দে তার মন ভরে গেছে। যাক ছেলেটারে একটা নতুন ধান্দায় নামিয়ে তারও তিনগুণ লাভ হবে। কাজ করবো রাসেল, তিনগুণ লাভ হবে তার। মনে মনে মুরগির ঘ্রাণ পায় সে। মুরগি দরকার। তারপর পটিয়ে-পাটিয়ে বিদেশে চালান করে দিবে সাম্পানে করে। এরপরই টাকা আর টাকা।

হরকত ভাবতে থাকেÑ এভাবে অঢেল টাকা আসলে সে এখানেই একা ফাইভস্টার হোটেল করে ফেলবে। তারপর সেখানে দামী নামী ‘মুরগি’র আগমন ঘটবে। ইয়াবা বিক্রি হবে। লাভ আর লাভ। কী চাই এই জীবনে আর?

ঠিক সেই সময়ই রাসেলের কল আসে। হরকত কল রিসিভ করে প্রশ্ন করে, ‘কি কী খবর তর? মুরগি পাইছস নাকি?’

উৎফুল্ল রাসেল বলে, ‘ভাই একটা ছেলে আর তিনটা মেয়ে এই মাত্র ট্রেন থেকে নামলো। মনে হয় মুরগিগুলো ছেলেটার সাথের না। অন্য কেউ। ওগো পিছনে কি লাগমু?’

‘লাগ, লাইগা থাক। দেখ, কোনহানে যায়। খবরাখবর আমারে জানাইস।’

‘ঠিক আছে ভাইজান। লাগলাম তাগো পিছে। কষ্টটা যেনো না হয় মিছে।’

হরকতের সাথে কথা শেষ করে রাসেল ওদের পেছন পেছনে যায়। তারপর দেখতে থাকে ওরা কোথায় যায়।

একসময় যুবক ও তিন তরুণ কলাতলী বিচে এসে বসে। তারপর যুবক মেয়েদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা, এবার বলো তোমাদের কাহিনি। কেনো তোমরা একেলা এভাবে পাড়ি দিয়েছো অজানায়?’

যুবক ইরফানের কথায় উত্তর দেয় তাসফিয়া। সে তাদের কাহিনী বর্ণনা করে।

রাসেল পেছনে থেকে সবকিছু শোনো। তারপর সে খুশি হয়। যাক, এগোরে দিকভ্রান্ত করা সহজ। এরা ঘর ছেড়ে কাউকে কিছুই না বলে হতাশায় বের হয়েছে, কোথায় যাবে, কী করবে তা তারা জানে না। এদেরকে প্রলোভন দিয়ে কার্য হাসিল করা সহজ বিষয়। শুধু যুবকটাকে খসাতে পারলেই হয়। এটারও ব্যবস্থা আছে। তাদের বাহিনীর কাছে খবরটা পেঁৗছে দিতে হবে। তারপর ওরাই এসে যুবকটাকে ‘চোর-ডাকাত’ বলে ধরে নিয়ে থাপড়াইতে থাপড়াইতে থানায় নিয়া ঢুকাইবো। আর এদিকে মেয়েগুলারে উদ্ধারের বাহানায় হোটেলে নিয়া যাবে। বাহ, বেশ সুন্দর। মেয়েগুলোর চেহারাও চমৎকার, আধুনিক। বেশ টাকায় বিক্রয় করা যাবে।

মনে মনে খুব খুশি হয় রাসেল। তারপর একটু দূরে দিয়ে হরকতকে কল করে। কয়েকবার রিং হয়, কিন্তু হরকত কল রিসিভ করে না। এদিকে যুবক ইরফান তরুণীদের আরও নিকটবর্তী হয়, তারপর তারা কী নিয়ে যেনো হাসতে থাকে।

‘আরে বস, কলটা ধরো’। পাখিগুলো তো উইড়া যাইবো’। রাসেল চিন্তিত, পায়চারী করছে বালুতে। এদিকে আবারও কল করে রাসেল, কল করতেই থাকে...। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়