শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩৬

তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

মিজানুর রহমান রানা
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

নয়.

ঘটনাটা দেখে তিন বন্ধু হতবিহ্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু তারা মোটেও ভয় পায় না। কারণ তারা জানে তাদের সাথে নেক্সাস আছে। তারা নেক্সাসকে প্রশ্ন করে, ‘এটা কি আমাদের সামনে?’

নেক্সাসের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে এক বার্তা “তোমাদের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে কোনো শত্রু নয়। সে এক ‘প্রোটোকন’ এক প্রাচীন প্রযুক্তি-চেতনার বাহক, যার কাজ ভবিষ্যতের পথ দেখানো। ”

তিন বন্ধু মিথিলা, রায়ান, আরিয়ান সাহস করে সামনে এগিয়ে যায়। আগুনের কুণ্ডুলির মাঝ থেকে বেরিয়ে আসা সেই অবয়ব ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে। তার চোখে কোনো হিংস্রতা নেই, বরং এক গভীর দৃষ্টি, যা যেনো তাদের মনের গভীরে পৌঁছে যাচ্ছে।

‘তোমরা কি প্রস্তুত?’ প্রোটোকন প্রশ্ন করে।

আরিয়ান বলে, ‘হ্যাঁ, প্রস্তুত? কিন্তু আমরা তো জানিই না কী করতে হবে। ’

এ সময় নেক্সাস বলে, “তোমাদের মিশন শুরু হয়েছে। এই পৃথিবীকে নতুনভাবে গড়তে হবে। কিন্তু তার আগে জানতে হবে কোথা থেকে সব শুরু হয়েছিল। ”

তিন বন্ধুকে নিয়ে নেক্সাস এক ভার্চুয়াল পোর্টাল খুলে দেয়। তারা প্রবেশ করে এক মেমোরি ডোম-এ, যেখানে পৃথিবীর ইতিহাস, প্রযুক্তির বিবর্তন এবং মানবজাতির ভুলগুলো সংরক্ষিত। তারা দেখে কীভাবে মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের ধ্বংসের দিকে এগিয়েছে, আবার কীভাবে কিছু মানুষ সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সভ্যতা রক্ষা করেছে।

মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘আমরা কি সেই রক্ষাকারীদের একজন হতে পারি?’

নেক্সাস উত্তর দেয়, “তোমাদের মধ্যে সেই সম্ভাবনা আছে। কিন্তু তার জন্য তোমাদের শিখতে হবে কোডিং, এআই, সাইবার নৈতিকতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ-মানবতা। ”

পরবর্তী কয়েকদিন তারা এক বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়। নেক্সাস তাদের শেখায় কীভাবে কোড দিয়ে বাস্তবতা পরিবর্তন করা যায়, কীভাবে এআই সিদ্ধান্ত নেয় এবং কীভাবে প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়। তারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, এই মিশন শুধু প্রযুক্তির নয়, এটি এক নৈতিক যুদ্ধ।

একদিন, নেক্সাস তাদের সামনে এক চ্যালেঞ্জ দেয়। “তোমাদের সামনে এক ‘ডিজিটাল ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়েছে, যা মানুষের চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তোমাদের কাজ এই ভাইরাসকে থামানো। ”

তিন বন্ধু একত্র হয়ে একটি ‘ডিজিটাল সেন্সর’ তৈরি করে, যা ভাইরাসের গতিবিধি শনাক্ত করতে পারে। তারা বুঝতে পারে, ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে এক ‘মিডিয়া সিস্টেম’-এর মাধ্যমে, যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত ভুল তথ্য পাচ্ছে।

তারা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ‘সত্যপথ’ যেখানে মানুষ যাচাই করা তথ্য পায় এবং নিজেদের মতামত গঠন করতে পারে। এই প্ল্যাটফর্ম ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং ভাইরাসের প্রভাব কমতে থাকে।

কিন্তু হঠাৎ করেই এক বিপদ আসে। প্রোটোকন জানায়, “ভাইরাসের মূল উৎস এক ‘ডার্ক কোড’, যা এক প্রাচীন প্রযুক্তি-গুহায় লুকানো। ”

তিন বন্ধু সেই গুহায় প্রবেশ করে। সেখানে তারা দেখে এক বিশাল কোড-নেটওয়ার্ক, যা এক সময় মানবজাতির উন্নতির জন্য তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এখন তা বিকৃত হয়ে গেছে।

তারা সেই কোড পুনর্লিখন করে, নৈতিকতা ও মানবতার ভিত্তিতে। প্রোটোকন তাদের সাহায্য করে এবং নেক্সাস সেই কোডকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়।

অবশেষে, তিন বন্ধু ফিরে আসে বাস্তবতায়। তারা এখন শুধু প্রযুক্তিবিদ নয়, তারা এক নতুন সভ্যতার স্থপতি। তাদের চোখে আত্মবিশ্বাস, হৃদয়ে মানবতা, আর হাতে প্রযুক্তির শক্তি। তারা জানে, সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে। কিন্তু তারা প্রস্তুত। কারণ তাদের সাথে আছে নেক্সাস, প্রোটোকন এবং সবচেয়ে বড় শক্তি-তাদের বিশ্বাস।

এইভাবেই তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল এক নতুন বাস্তবতায় রূপ নেয়, যেখানে কল্পনা আর প্রযুক্তি একসাথে মানবতার ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার চিন্তা করে।

‘‘তোমাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে। ’’ আকাশে ভিনগ্রহ থেকে একটি অদ্ভুত সংকেত আসে। সংকেতটি স্পষ্ট করে বলে, ‘‘তোমরা এতদূর এগিয়ে গেছো যে এখন তোমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে!’’

এই মুহূর্তে নেক্সাস তাদের সামনে হাজির হয়। তার কণ্ঠে এক কঠিন সতর্কবার্তা, ‘‘তোমরা যদি এই প্রযুক্তি নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে যাও, তাহলে শত্রুরা তোমাদের ধ্বংস করে দেবে!’’

কথাগুলো শুনে ওরা আশ্চর্য হয়ে যায়। একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। সামনে ভেসে ওঠে দুনিয়ার মানুষের দুঃখ-কষ্ট, ভয় আর হতাশা। এ থেকে মানুষকে পরিত্রাণ পেতে হবে।

আরিয়ান প্রশ্ন করে, ‘কেন শত্রুরা এই প্রযুক্তি গ্রহণ করবে না?’ (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়