প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪
ব্ল্যাকবোর্ড

ছোট বেলায় সবাই স্কুল ও বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছি। স্কুল ও বিদ্যালয়ে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দঁাড়িয়ে চক দিয়ে লেখার সাহস, ভয়, আনন্দ নিয়ে সবারই কম-বেশি স্মৃতি রয়েছে। স্মৃতি হাতড়াতে গেলে ব্ল্যাকবোর্ডের সাথে সেই অমোচনীয় অংশ মনে পড়ে যায়।
আমার নাম বীর। আমার বন্ধু রুমি। আমরা একসাথে স্কুলে ভর্তি হই। রুমি ছিলো অত্যন্ত মেধাবী এবং তার হাতের লেখা ছিলো সুন্দর। আমরা নিয়মিত একসাথে স্কুলে যেতাম।
ক্লাস চলাকালীন সময় শিক্ষকরা হাতের লেখার ওপর জোর দিতো হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যে। রুমির হাতের লেখা সুন্দর। তাকে গুরুত্ব দিতো ক্লাসের বন্ধুরা এবং ব্ল্যাকবোর্ডের সাথেও তার সম্পর্ক ছিলো বেশ। রুমিকে নিয়ে প্রায়ই শিক্ষকরা ব্ল্যাকবোর্ডে লিখাতেন।
আমার হাতের লেখা ততোটা ভালো ছিলো না। এজন্যে ব্ল্যাকবোর্ডে আমার লেখার সাহস ছিলো না, ভয় পেতাম। কীভাবে লিখবো চক দিয়ে--সহপাঠী বন্ধুরা হাসবে এই ভেবে।
যখন কেউ ক্লাসে থাকতো না, তখন নিজে নিজে লেখার চেষ্টা করতাম এবং মুছে ফেলতাম। কেউ কেউ ব্ল্যাকবোর্ডে বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন মজার মজার কথা বা নাম ব্যঙ্গ করে লিখতো, ছবি অঁাকতো। ক্লাস ক্যাপ্টেন রুমি থাকায় ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করলে তাদের নাম ব্ল্যাকবোর্ডে লেখা হতো। যাদের হাতের লেখা সুন্দর ছিলো না তারাও এই নাম লেখার কাজ করতে চাইতো। মজা লাগতো। এছাড়া ক্লাসে কতজন উপস্থিত হলো, ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা, তারিখ, বিষয় বোর্ডের একপাশে চক দিয়ে লিখতে হতো। অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় আমি সাহস করে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে যাই নি। ভয় পেতাম কোনো স্যার যেন ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে লিখতে ডাক না দেন।
অনেক শিক্ষক পড়া দাগিয়ে দেয়ার জন্যে, কোনো পড়া বা অংক করার জন্যে বোর্ডে লিখতে বলতো। রুমি এবং অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী তা লিখতো। একদিন ভাগ্যক্রমে আমাকেই ডাকলো লিখতে। আমি বললাম, স্যার আমার হাতের লেখা খারাপ...’। আমি সংকোচে বললাম, ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে সমস্যা হয়, আমার লেখা ভালো না। স্যার বললেন, ভয়ের কিছু নেই। লিখতে লিখতে শিখবে। একবার আয়ত্তে আসলে সবই সম্ভব। এটা কোনো প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। তোমরা শিখতে আসছো। সেদিন শিক্ষকের কথায় সাহস পেয়ে লিখেছিলাম এবং কিছুটা ভালো লেগেছিলো। কিন্তু আমার খারাপ লাগছিলো মনে মনে এই ভেবে যে, হাতের লেখা যদি আরো সুন্দর করতে পারতাম। তাহলে রুমির মতো আমাকেও সবাই পছন্দ করতো।
রুমি এখন বড়ো হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রুমি সার্টিফিকেট, চিঠি লিখে দেয় হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার কারণে। আমার হাতের লেখা অতোটা সুন্দর না হলেও একটি স্কুলে শিক্ষকতা করার কারণে সেখানে আমাকেও ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে হয় শিক্ষার্থীদের জন্যে। তখন ছাত্র-ছাত্রীর দিকে তাকালে পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে। আমি চেষ্টা করি তাদের হাতের লেখা সুন্দর করানোর জন্যে। তাদেরকে উৎসাহ দেই। তাদের বলি, তোমরা হাতের লেখা সুন্দর করতে পারলে ব্ল্যাকবোর্ড থেকে শুরু করে শিক্ষা জীবনেও ভালো করতে পারবে। কারণ হাতের লেখা সুন্দর হলে পরীক্ষার খাতায় নম্বর বেশি পাওয়া যায়, বিভিন্ন কাজে সুযোগ পাওয়া যায় চাকুরি থেকে শুরু করে নানা প্রতিষ্ঠানে। তাই ছোট থেকেই হাতের লেখার সৌন্দর্যের চর্চা করতে হবে। যতো চর্চা করবে ততো ভালো করতে পারবে। এমন অনেক ভালো ছাত্র-ছাত্রী আছে, লেখার মান ভালো, হাতের লেখা অসুন্দর হওয়ায় নম্বর কম পায়। তাই বর্তমানে শিশুদের হাতের লেখায় মনোযোগী হতে হবে। পিতা-মাতাকে শিশুদের বুঝাতে হবে হাতের লেখার সৌন্দর্যের গুরুত্ব।