প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:০২
গ্রীষ্ম-বর্ষায় মাছির উপদ্রব
কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যে নতুন চ্যালেঞ্জ

গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে মাছির উপদ্রব অনেক বেশি দেখা যায়। এই সময়ে ফলমূল পাকতে শুরু করে, পচা জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ে। ফলে মাছির প্রজননের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়।
মাছি শুধু বিরক্তির কারণই নয়, বরং এটি কৃষি ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যেও মারাত্মক হুমকি। বিশেষ করে ফলের মাছি ও ঘরের মাছি দেশের খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও ফলের ক্ষেতের ক্ষতি করে এবং কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়ার মতো রোগ ছড়ায়।
মাছির জীবনচক্র ও বিস্তার
একটি স্ত্রী মাছি তার জীবনকালে প্রায় ৫০০-৯০০টি ডিম দেয়। পচা খাবার, আবর্জনা, গোবরের স্তূপে তারা ডিম পাড়ে। মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মাছি তৈরি হয়ে যায়। গরম ও আর্দ্র পরিবেশে এদের বিস্তার জ্যামিতিক হারে বাড়ে, যা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে মারাত্মক আকার ধারণ করে।
বাংলাদেশের মাছির প্রজাতি
গ্রামীণ বাংলাদেশে যেসব মাছি বেশি দেখা যায় :
* ঘরের মাছি (Musca domestica)
* ছোট মাছি (Fannia)
* ফলের মাছি (Tephritidae)
* ব্লো ফ্লাই, ফ্লেশ ফ্লাই, নীলমাছি ও কালো মাছি
কৃষি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ফলের মাছি পেঁপে, আম, কাঁঠাল, করলা, বেগুন প্রভৃতি ফসলে ডিম পাড়ে ও লার্ভা জন্ম দেয়, যার ফলে ফলমূল পচে যায় ও বাজার মূল্য কমে যায়। অন্যদিকে ঘরের মাছি পায়খানা ও আবর্জনা থেকে জীবাণু বহন করে রান্নাঘরে এসে বসে। ফলে নানা রোগ ছড়ায়Ñ বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
মাছি প্রতিরোধে কৃষকের করণীয়
মাঠ, খামার ও বাড়ির চারপাশে মাছির উৎপাত রোধে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে :
* পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
* বাসি খাবার ঢেকে রাখা বা দ্রুত অপসারণ
* পশুর গোয়ালঘর ও আবর্জনার স্তূপ নিয়মিত পরিষ্কার
* ময়লা পাত্র ও ডাস্টবিন প্রতিদিন ধোয়া
জৈবিক ও ঘরোয়া পদ্ধতি
* তুলসী, পুদিনা, নিম গাছ লাগানো
* লেবুতে লবঙ্গ গেঁথে ঘরে রাখা
* সিরকা ও ডিশওয়াশ মিশিয়ে মাছি ধরার ফাঁদ তৈরি
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ
* নির্দিষ্ট কীটনাশক (Baygon, Hit) ব্যবহার
* মাছির ফাঁদ (স্টিকি পেপার ও ইলেকট্রিক ফ্লাই কিলার)
পশু খামারে সতর্কতা
* গোবর দ্রুত সরানো
* মাছির প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা
সচেতনতা ও সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি
মাছি নিয়ন্ত্রণে গ্রামবাসী, কৃষক ও স্থানীয় প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে।
পরিচ্ছন্ন পরিবেশ= মাছিমুক্ত গ্রাম=রোগমুক্ত পরিবার।
মনে রাখুন, বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম ও প্রাকৃতিক উপায় মিলিয়ে আমরা মাছির উপদ্রব রোধ করতে পারি। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।