শুক্রবার, ০৯ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫, ১২:৪৯

শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার ও প্রতিষ্ঠান

রাশেদা আতিক রোজী
শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে পরিবার ও প্রতিষ্ঠান

কথা হলো একটি শিল্প বা আর্ট। আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন হলো শিক্ষা। আমরা আমাদের জীবনে অনেক মানুষকে দেখেছি যারা জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের সঠিক ভাবে উপস্থাপন ও প্রকাশ করতে পারে না। এমনকি শিক্ষাজীবনে এমন অনেক শিক্ষককে দেখেছি যাদের পড়া আমাদের বুঝতে বেশ কষ্ট হয়ে যেত। নিসন্দেহে তারা অনেক জ্ঞানী কিন্তু ঘাটতি ছিল তাদের উপস্থাপনের। স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার কৌশল জানা। এজন্যই মনীষীরা বলেন কথা বলা শিখতে লাগে দুই বছর, কিন্তু গুছিয়ে কথা বলা শিখতে লাগে সারা জীবন। শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলা কাজটা খুব কঠিন কিছু নয়। শিশুরা বেড়ে উঠে তার পারিবারিক শিক্ষার মাধ্যমে। যে পরিবারে যে শিশু সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে, তার সুন্দর আচরণগুলো প্রভাব বিস্তার করে সারাজীবন সকল কাজে। সে জন্য ছোটবেলা থেকে শিশুকে সুন্দরভাবে কথা বলা, অন্যের সামনে কোন কিছু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা শিখাতে হবে পরিবারের মতো বিদ্যালয়েও। এই দুর্লভ কাজগুলো করবেন আমাদের শিক্ষকগণ বিভিন্ন উপায়ে, বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে।

আমরা সকলেই মানুষ। এই দাবি মানুষদের মতো হাত পা, মুখ নাক, কান চোখ ইত্যাদি আছে বলে করা যায় কিন্তু মানুষের কঁাধে কঠিন এক দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে। দিয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই। সে দায়িত্ব পালন করে আমরা কে কতখানি মানুষ? সৃষ্টিকর্তা চান, মানুষ প্রকৃত মানুষ পরিচয়ের মর্যাদা অটুট রাখার চেষ্টা করবে। সেজন্যেই তিনি মানুষদের বিবেক, বিচার বোধ, জ্ঞান অর্জনের সাধ্য দিয়েছেন। জ্ঞান অর্জনে আগ্রহী থাকা, বিশ্বাসী হওয়া, সত্যের পথে চলা, কল্যাণকামী হওয়া কর্তব্য জানান দিয়েছেন।

মিথ্যা বলো না, প্রতারণা করো না, ঘৃণা ছড়িও না, তোমাদের দ্বারা যেনো অন্েযর অনিষ্ট না হয় এ রকম বহু বার্তা সৃষ্টিকর্তা কেবল মানুষদের জন্যই পাঠিয়েছেন। মানুষ খুবই অদ্ভুত, অত্যন্ত অনিশ্চিত স্বভাবের। মানুষদেরকে উদার হওয়ার উপকারিতা বুঝিয়েছেন। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় উদারতায় সন্তুষ্ট না হয়ে সংকীর্ণতা, হীনমন্যতা প্রকাশ করে মানুষ উঁচুদরের আরাম পায়। অর্থাৎ মার্জিত বচনের ঘাটতি থাকে, যেটা গড়ে উঠে শিশুর পরিবার থেকে।

কাউকে বড় ভাবা, কাউকে ছোট করে দেখার প্রবণতা প্রকটভাবে কেবল মানুষদের মধ্যেই রয়েছে। ও মরুক, সে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক, তার সর্বনাশ হোকÑএরকম হাজার হাজার অসভ্য চাওয়া কেবলমাত্র মানুষের মনেই খই ফোটার মত ফুটফাট করে ফুটতে থাকে। মানুষ যা নয়-ভাব দেখিয়ে, ভুলভাল বকে টকে তা প্রমাণের চেষ্টা করে। অনেক মানুষ অহরহই প্রমাণ দিতে চায়Ñসে ধর্মপ্রাণ। বলে বলেই প্রমাণ দিতে চায়Ñতাদের বলার সাথে করার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ঠিক একই কায়দায় বহুজন প্রমাণ দিতে চায়, অতি বড় আকৃতির দেশপ্রেমিক তারা। এই অতি প্রমাণ করতেই চাওয়াতেই বাধে যতরকমের বিপত্তি। সে কারণেই মানুষ আনন্দ পায় ভাগের কথা ভেবে, ভাগের কথা বলে। কত কায়দায় ভাগের কথা বলে। ইনিয়ে বিনিয়ে বলে, কঠিন ভাষায় বলে। গড়ার চেয়ে ভাঙায় যেনো অশেষ সন্তোষ, আনন্দ। মানুষ বলে দেশে শান্তি বিরাজ করুকÑকিন্তু মানুষই উঁচুদরের অশান্তির একমাত্র বিশ্বস্ত আমদানিকারক।

শত্রু শত্রু খেলাটা খুব ভালোবাসে মানুষ। ভালোবাসে এবং উপভোগও করে। মানুষ হয়েও বুঝতে পারে না বা উপলব্ধি করে না, আমি মানুষÑএই পরিচয়টা টিকিয়ে রাখতে পারাটা মানুষের জন্য সবচেয়ে জরুরি ও সম্মানের। সবকিছু সৃষ্টি করে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, কেবল যাদেরকে পেয়ারা বান্দা হিসাবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, ভালো করেই অবগত তিনিÑতঁার প্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টার চেয়ে এরা নিজেদের প্রিয় হওয়ার বাসনায় অহরহই প্রবলভাবে “মত্ত থাকিবে”। সব জেনে বুঝেই তাই তিনি কেবলমাত্র তঁার পেয়ারা বান্দাদের জন্য সদা সতর্কতা জারি রেখেছেন। নানাভাবে কেবল ‘তাহাদেরকেই’ মনে করিয়ে দেয়া হয়Ñহে মানুষ, সত্য ও সুন্দরের পথে থাকো। তাই এই ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেতে সবার আগে দরকার সুন্দর উপস্থাপন, বাচন ভঙ্গি, কথা বলার ঢংয়ের বৈচিত্রতা।

একটি শিশু স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে তার পরিবারের সকল সদস্যদের সান্নিধ্যে। তাই পরিবারের সকলের সদাচরণ, মার্জিত বচন এবং সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তা শিশুর বেড়ে উঠায় প্রভাব ফেলে। শিশুর বিকাশ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে বংশগতি (জিন) এবং পরিবেশ (পরিবেশগত উপাদান) একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই দুটি উপাদানের মিথস্ক্রিয়া শিশুর শারীরিক, বৌদ্ধিক, ভাষাগত, এবং সামাজিক-সংবেদনশীল বিকাশকে প্রভাবিত করে। শুধু বংশগতি বা জীন নয়, পারিবারিক শিক্ষার ভূমিকাও ব্যপক। শিশুর বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বংশগতি :

* বংশগতি বলতে বোঝায় পিতামাতা থেকে জিনগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য যা শিশুরা উত্তরাধিকার সূত্রে পায়।

* শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন উচ্চতা, গায়ের রং, চোখের রং এবং কিছু রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বংশগতির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

* কিছু মানসিক বৈশিষ্ট্য যেমন মেজাজ, বুদ্ধি এবং প্রতিভা বংশগতির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

পরিবেশ :

* পরিবেশ বলতে বোঝায় শিশুর চারপাশের সবকিছু Ñতার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, বিদ্যালয়, সংস্কৃতি এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

* শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আবেগিক বিকাশে পরিবেশের একটি শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে।

* একটি পুষ্টিকর খাদ্য, উদ্দীপক শিক্ষা এবং স্নেহপূর্ণ যত্ন শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

* বিপরীতে, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, সহিংসতা বা অবহেলামূলক পরিবেশ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া

* শিশুর বিকাশ কেবল বংশগতি বা পরিবেশের উপর নির্ভর করে না। বরং এটি এই দুটি উপাদানের জটিল মিথস্ক্রিয়ার ফল।

* বংশগতি শিশুর সম্ভাবনা নির্ধারণ করে, তবে পরিবেশ সেই সম্ভাবনাকে কতটা বিকশিত করতে পারে তা প্রভাবিত করে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন শিশু হয়তো সঙ্গীত প্রতিভার জিনগত প্রবণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে, কিন্তু যদি তার সঙ্গীত শেখার সুযোগ না থাকে, তবে তার প্রতিভা সম্পূর্ণরূপে বিকশিত নাও হতে পারে। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, “প্রকৃতি বনাম প্রতিপালন” দ্বন্দ্বের বদলে এই দুয়ের মিথস্ক্রিয়াই মুখ্য। জিনগত সম্ভাবনা এবং পরিবেশগত সুযোগের সমন্বয়েই শিশুর সর্বোত্তম বিকাশ নিশ্চিত হয়।

শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিতামাতা, শিক্ষক এবং সমাজের সকলেরই উচিত শিশুদের একটি নিরাপদ, সহায়ক এবং উদ্দীপক পরিবেশ প্রদান করা, যাতে তারা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে।সুতরাং সৎ হই, সুন্দর থাকি। কারো জীবন চলার পথে আগাছা না হয়ে ফুল হয়ে ফুটি -সুন্দর কথা বলায়।

কথায় বলে কথা কম, কাজ বেশি। কিন্তু এই কথা বলা যত সহজ, করা তত কঠিন। যারা বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান, তারা জানেন কীভাবে জিহ্বাকে সামলে চলিতে হয়। কথায় নয়, কাজেই মানুষ বড় হয়। ভাষণে নয়, অ্যাকশনেই দক্ষ মানুষের পরিচয়। এই জন্য কবি কুসুমকুমারী দাশ তার ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’।

কথা বুলেটের মতো। একবার মুখ হইতে বের হয়ে গেলে তা আর ফিরিয়ে আনা যায় না। অনেক সময় কথার পরিণতি ও ফলাফল হয় বিপজ্জনক। এমনকি এটা একসময় জাতীয় সংকটের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। এই জন্য মানুষের অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে হস্ত ও জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ সবচাইতে জরুরি। বিশেষ করে, জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই জন্য মহানবি (স.) বলেছেন: যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অঙ্গ (জিহ্বা) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব (বুখারি)।তাই নিজস্ব বিবেচনায় সর্বদাই গুছিয়ে কথা বলার অভাস চর্চা করতে হবে। এই সুঅভ্যাস গুলো বিদ্যালয়ে সুন্দর, আন্দন ঘন পরিবেশে শিক্ষকগণ শিশুদের সাথে চর্চা করবেন।শিশুর কাছে বিদ্যালয় সব সময়েই আনন্দের হতে হবে।বিদ্যালয়ের সুন্দর শিশুতোষ পরিবেশের আকর্ষণ শিশুকে সর্বদাই কাছে টানবে।

শিশুকে গুছিয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করতে চাইলে কিছু ধাপে এগোতে পারেন, যাতে শিশুটি স্বাভাবিকভাবে ও আনন্দের সঙ্গে এই দক্ষতা অর্জন করতে পারে। নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দিলাম:

১. নিজে উদাহরণ দিন

Ñআপনি নিজে গুছিয়ে ধীরে এবং স্পষ্টভাবে কথা বললে শিশুও আপনাকে অনুসরণ করবে।

Ñআপনার প্রতিটি কথার মাঝে ছোট বিরতি দিন, যেন শিশুটি বুঝতে পারে এবং শেখে।

২. ধৈযর্য ধরে শুনুন

Ñশিশুর কথা মাঝপথে থামাবেন না।

Ñমনোযোগ দিয়ে শুনুন, যাতে সে বুঝে যে তার কথা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. খেলাধুলার মাধ্যমে চর্চা করান

Ñগল্প বলা, রোল-প্লে (যেমন দোকানদার-ক্রেতা), পাপেট শো ইত্যাদি গেম খেলুন।

Ñএতে শিশুর ভাষা দক্ষতা ও গুছিয়ে বলার অভ্যাস বাড়ে।

৪. প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন

Ñযেমন : “আজ স্কুলে কী কী করেছো?” অথবা “তোমার প্রিয় খাবার কোনটা? কেন ভালো লাগে?”

Ñএভাবে প্রশ্ন করলে সে চিন্তা করে উত্তর গুছিয়ে বলার অভ্যাস গড়ে তোলে।

৫. গল্প বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন

Ñশিশুকে ছোট ছোট গল্প বলতে বলুনÑসে নিজের অভিজ্ঞতা বা কল্পনার কিছু বলতেই পারে।

Ñগল্প বলা শেখার মাধ্যমে গঠনমূলকভাবে বলার দক্ষতা বাড়ে।

৬. ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিন

Ñযখনই সে ভালোভাবে কথা বলতে পারে, প্রশংসা করুন।

Ñউৎসাহ পেলে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে।

৭. ভাষা বিকাশে সহায়ক বই পড়ান

Ñশিশুদের জন্য গল্পের বই পড়ে শোনান এবং পড়া শেষে কিছু প্রশ্ন করুন।

শিশু তখনি স্কুলে যাবে, যখন প্রাথমিক বিদ্যালয় কোমলমতি শিশুদের বাড়ির চেয়ে নিম্নলিখিত অনুসঙ্গগুলো বিদ্যালয়ে নিশ্চিত থাকে/নিশ্চিত করা যায়।

আধুনিক অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা : স্কুলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, বিদ্যুৎ ,পাখা,বেঞ্চ-টেবিল, হোয়াইট বোর্ডসহ প্রবেশ-বাহিরের পথসহ ডিসএ্যাবলদের জন্য র‍্যাম থাকতে হবে।

রঙিন ও সৃজনশীল ক্লাসরুম : চিত্রাঙ্কন, রঙিন কার্টুন, শিক্ষামূলক পোস্টার ও শিক্ষামূলক ছবি, বর্ণমালা ও সংখ্যাযুক্ত দেয়াল সজ্জা,শিশুদের অঁাকা ছবি ও হাতের কাজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা ইত্যাদি দিয়ে সজ্জিত ক্লাসরুম শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

খেলার সুযোগ : নিরাপদ খেলার মাঠ, সুইং, স্লাইড, স্লিপার ইত্যাদি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। ফুটবল, ক্রিকেট,ব্যাটমিন্টন ইত্যাদি প্রচলিত খেলা ছাড়াও দড়ি লাফ,দোলনা, স্লিপার, মেরি-গো-রাউন্ডের মতো খেলার মাঠের উপকরণ।বিভিন্ন ধরনের ব্লক, পাজল ও শিক্ষামূলক খেলনা।স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খেলার সামগ্রী, যেমনÑলাটিম

গাছপালা ও বাগান : স্কুলের পরিবেশ প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুদের মানসিক প্রশান্তি বাড়ায়। ফুল ও সবজির বাগান, যেখানে শিশুরা নিজেরাই চাষাবাদে অংশ নিতে পারে।ইদানীং স্কুলে ছাদ বাগান ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা : স্বাস্থ্যকর ও পরিষ্কার ইনক্লুসিভ টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, এবং বজর্য ব্যবস্থাপনা শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্কুলে।

শিশুকে শেখার প্রতি আগ্রহী করার জন্য প্রয়োজন মজাদার শিখন পদ্ধতি এবং নমনীয় ও শিশুকেন্দ্রিক কৌশলঃ

সহজবোধ্য ও মজাদার শিখন পদ্ধতি :

* গেম-ভিত্তিক শিক্ষা: গণিত বা ভাষা শেখার জন্য খেলা, পাজল, বা ইন্টারেক্টিভ অ্যাক্টিভিটির ব্যবহার।

* পাঠে শিশুকে বেশি বেশি সম্পৃক্ত করে শিশুর জীবন অভিজ্ঞতার আলোকে শিখন পরিচালনা করা।

গল্প ও গানের মাধ্যমে শেখা : নৈতিক শিক্ষা বা বিজ্ঞানকে গল্প বা সংগীতের মাধ্যমে উপস্থাপন।

হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা : বিজ্ঞান প্রজেক্ট, আর্ট-ক্রাফট, বা বাগান করা ইত্যাদি কার্যক্রম।

শিক্ষণীয় উপকরণ : বর্ণমালা ও সংখ্যার ফ্ল্যাশকার্ড।

বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ও মডেল।স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি শিক্ষণীয় উপকরণ।

নমনীয় ও শিশুকেন্দ্রিক রুটিন :

* খেলার সময়ের সমন্বয়: পড়াশোনার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিরতি ও খেলার সময় দেওয়া।

* নিজস্ব গতিতে শেখার সুযোগ: প্রতিটি শিশুর শেখার গতি অনুযায়ী সহযোগিতা।

সামাজিক সম্পর্ক ও সম্প্রদায়ের অনুভূতি :

* বন্ধুত্বের পরিবেশ : গ্রুপ ওয়ার্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্লাস ডে, পিকনিক, বা দলগত খেলার মাধ্যমে শিশুরা বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।

* সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:গান, নাচ, ছড়া ও গল্প বলার আসর। বিশেষ দিবসগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপনে শিশুদের অংশগ্রহণ।

* শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্ক : শিক্ষকদের স্নেহপূর্ণ আচরণ, সহানুভূতিশীল ও উৎসাহদানকারী শিক্ষকরা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

* সামাজিক অনুষ্ঠান: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক উৎসব, বিভিন্ন দিবস উদযাপন বা অভিভাবক-শিক্ষক মিটিং ইত্যাদি আয়োজন করা।

* মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ : নিয়মিত আপডেট, স্কুল ইভেন্টে অভিভাবকদের আমন্ত্রণ।

স্বীকৃতি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা :

* ছোট সাফল্যের প্রশংসা : স্টিকার, ব্যাজ,স্মাইলি বা সার্টিফিকেটের মাধ্যমে শিশুদের প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন।

* প্রদর্শনীর সুযোগ : শিশুদের অঁাকা ছবি বা প্রজেক্ট ক্লাসরুমে প্রদর্শন করা।

সুবিধা ও সম্পদের প্রাপ্যতা :

* লাইব্রেরি ও মাল্টিমিডিয়া রুম : মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে রঙিন বই, অডিও-ভিজ্যুয়াল এডুকেশনাল টুলস ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের প্রবেশগম্যতা।

* সৃজনশীল উপকরণ : মাটির ও কাগজের খেলনা, ব্লক, বা কালার পুতুল দিয়ে খেলার ব্যবস্থা।

নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা :

* বুলিং প্রতিরোধ : মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মশালা এবং কাউন্সেলিং সুবিধা।

* অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ : জাতি,ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ও সামাজিক পটভূমির শিশুদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ।

অর্থনৈতিক সহায়তা :

* বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তি : সরকারি বিদ্যালয়ে বই বিতরণ এবং দরিদ্র পরিবারের জন্য উপবৃত্তি ব্যবস্থা অভিভাবকদের আর্থিক চাপ কমায় ।

* পুষ্টিকর খাবার : বাড়িতে অপুষ্টির ঝুঁকি থাকলে স্কুলে খাদ্য সুবিধা শিশুদের আকর্ষণ করে।

এই অনুসঙ্গগুলো শিশুদের স্কুলকে একটি নিরাপদ, মজাদার এবং উদ্দীপক স্থানে পরিণত করবে, যেখানে তারা বাড়ির তুলনায় নিজেকে বেশি মুক্ত ও সুখী মনে করবে।

আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করবো প্রতিটা বিদ্যালয়ে যাতে উপরোক্ত বিষয় গুলো সুচিন্তায় রেখে কাজ করে। তা হলেই প্রতিটা শিশু চলনে , বলনে, আচরণে, সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

রাশেদা আতিক রোজী : ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, হাজীগঞ্জ, চঁাদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়