বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ০৯:৫০

ঐতিহ্যবাহী দ্বারকানাথ হাই স্কুলের ১০৫ বছরের গৌরবময় পথচলা

আলআমিন হোসাইন
ঐতিহ্যবাহী দ্বারকানাথ হাই স্কুলের ১০৫ বছরের গৌরবময় পথচলা

১০৫ বছরের পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারকানাথ (ডি.এন.) হাই স্কুল। এটি চাঁদপুর শহরের হাজী মহসিন রোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯২০ সালে বাবু বিষ্ণুচরণ পাল এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বাবু বিনোদ বিহারী দত্ত। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ হোসেন।

দ্বারকানাথ (ডি.এন.) হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড-সব ক্ষেত্রেই এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঈর্ষণীয় সাফল্য বয়ে আনছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৬০ জন। রয়েছে ১৬টি শ্রেণিকক্ষ।

ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন অনেক কৃতী মানুষ। তাঁদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমার যুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. শহীদ উল্যা জাবেদ, চাঁদপুরের প্রথম শহিদ সুশীল ও শংকর, ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু আবদুল মালেক, বিশ্বখ্যাত সাঁতারু অরুন কুমার নন্দী, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ জিয়াউর রহমান রাজু, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ মজুমদার এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ, জাতীয় ফুটবলার আবুল হোসেন ও ডা. এএসএম শহীদ উল্লাহ অন্যতম।

বিদ্যালয়সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, গত তিন বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঈর্ষণীয়। ২০২২ সালে ৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ জন উত্তীর্ণ হয়, পাসের হার ৯৫.৩১ শতাংশ। ২০২৩ সালে ৮০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৬ জন, পাসের হার ৭৮.৭৫ শতাংশ। ২০২৪ সালে ৫৫ জন অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৪৮ জন, যার পাসের হার ৮৭.২৭ শতাংশ।

শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও রয়েছে এই বিদ্যালয়ের সুনাম। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, ক্যারম, কাবাডি ও বাস্কেটবল সব খেলাতেই অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত হয় সাংস্কৃতিক চর্চা, পালিত হয় জাতীয় দিবস, বৈশাখী উৎসব, শিক্ষা সফর, সরস্বতী পূজা ও বার্ষিক মিলাদ। পাশাপাশি স্কাউটিং, রেডক্রিসেন্ট, বিতর্ক, বিজ্ঞান, সাহিত্যসহ নানা ক্লাবের মাধ্যমে চলে সহশিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্মদিনে প্রাত্যহিক সমাবেশে অভিনন্দন জানানো হয় এবং প্রতিদিন ৫টি করে বাংলা ও ইংরেজি শব্দের অর্থসহ একটি করে বাক্য শেখানো হয়। সে আলোকে সারা বছর মূল্যায়ন করে বছর শেষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী ঘোষণা ও পুরস্কার দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আহমেদ রোহান বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠান-আমার ভালোবাসা’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডি.এন. হাই স্কুল। বিদ্যালয়ের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ চমৎকার। শিক্ষকরা খুবই আন্তরিকভাবে আমাদের পাঠদান করেন। শুধু বইয়ের পড়া নয়, আমরা শিখি কীভাবে ভালো মানুষ হতে হয়।

সহকারী শিক্ষক উম্মে হাবিবা বলেন, যোগদানের পর থেকে দেখছি, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পাঠদান চলছে। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত চেষ্টায় বিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, বিদ্যালয়ের অতীত ঐতিহ্য আবারও ফিরে আসুক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কাজ করছি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে। এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করছেন। একশতকের বেশি সময় ধরে এই বিদ্যালয় গড়ে তুলেছে সৎ, দক্ষ ও আদর্শ নাগরিক। আমাদের অঙ্গীকার এই ধারা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যতেও গুণী মানুষ তৈরি করা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়