বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ২১:৪১

রায়পুরের মেঘনার চরের জমির ধান ঘরে তুলতে এবার ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মালিক-চাষিরা একতাবদ্ধ

প্রতিরোধ কমিটি গঠন

তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর থেকে।
রায়পুরের মেঘনার চরের জমির ধান  ঘরে তুলতে এবার ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মালিক-চাষিরা একতাবদ্ধ
বক্তব্য রাখছেন জাতীয় সংসদের উপ-সচিব হায়দরগঞ্জবাসী মো. আজিজুল হক।

গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার দখলে ছিলো লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনার ১২শ' একর জমি। গত ৫ আগস্টের পর সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা দখলে নিয়ে সয়াবিন তুলে নিয়ে যায়।

অবশেষে গত ২৮ মে সকালে মিলাদ ও দোয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মালিক ও চাষিরা ধান রোপণ করেন। মঙ্গলবার (২৪ জুন ২০২৫) দুপুরে হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া মঞ্জিল মাঠে জাতীয় সংসদের উপ-সচিব আজিজুল হক ও মুফতি তাহের ইজ্জুদ্দিন জাবেরির নেতৃত্বে প্রায় ২০০ মালিক-চাষির অংশগ্রহণে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় বক্তব্য রাখেন কানিবগার চরের জমির মালিক জাকির হোসেন, মিজান গাজি, সাইফুল ইসলাম, খোরশেদ আলম খোকন, হানিফ মাতাব্বর, দুলাল মাতাব্বর, মাইনুদ্দিন প্রমুখ।

বিশেষ সভা ও দোয়া শেষে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কমিটি এবং মালিক-কৃষকদের নিয়ে সমিতি করা হয়। এতে মুফতি মাওলানা তাহের ইজ্জুদ্দিনকে সভাপতি ও সমাজ সেবক টিটু হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

মেঘনার চরের জমি দখল নিয়ে তিনবার সরেজমিন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উপ-সচিব আজিজুল হক বলেন, মালিক পক্ষের ঐক্যবদ্ধ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। চরের সয়াবিন লুট হয়েছে, কিন্তু ধান যেন মালিকপক্ষ পেতে পারে, সামাজিক সুবিচার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আইনি পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক ব্যাবস্থাগ্রহণের জন্যে সকলে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থাকবেন। প্রয়োজনে একতাবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবেন। সভায় সকল মালিক ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনার পতনের পর প্রায় ৯ মাস রায়পুরের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চরের জমি প্রভাবশালীদের দখলে ছিলো। মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার ভিটামাটি হারানো হাজারও মানুষ একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিলো দুর্গম চরাঞ্চলে।

কৃষক লিটন হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, ২০২৪ সাল পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনার চরে গত ১৭ বছর সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ মাস্টারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাদের দখলে ছিলো প্রায় ৬ হাজার সরকারি খাস জমি। এসব জমি উদ্ধারে প্রকৃত মালিকরা অনেক চেষ্টা করলেও দেওয়া হয়নি। গত ৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক কবিরাজ ও উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব শামীম গাজী গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে সাইজ উদ্দিন নামে এক বিএনপি কর্মী প্রাণ হারান। তার ৭দিন পর আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জসিম উদ্দিন বেপারী ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায মারা যান।

উল্লেখ্য, রায়পুরের উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের মেঘনার চরাঞ্চলের এসব জমিতে ভূমিহীনদের সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা থাকলেও পুনর্বাসনের নামে এক শ্রেণির অসাধু ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই ভূমি চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে।এই জমি উদ্ধারে জমির মালিকরা বিক্ষোভ, সভা-সবাবেশ, থানা, সেনা ক্যাম্প, ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও আদালতে আবেদন ও মামলা করেন।

দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরাজি ও উত্তর চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর দুলাল হাওলাদার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ১৭ বছর এই জমি আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার দখলে ছিলো। গত ৫ আগস্টের পর চরের ৬ হাজার একর জমি বিএনপি নেতাদের দখলে। তার মধ্যে মাত্র ১২শ' একর জমি প্রকৃত জমির মালিকরা দখলে নিয়ে ধান চাষ শুরু করেছেন।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম মিঠু ও সদস্য সচিব শফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, মেঘনার নদীতে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর চরের জমি যাদের দলিল আছে, তারাই ভোগ দখল করবেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী অন্যায়ভাবে জড়িত থাকলেই দলীয়ভাবে ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ওই ইউনিয়নের বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার জানান, শুধুই রায়পুরের মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর নয়, চারটি উপজেলার আওতাধীন চরগুলো প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে--এমন অভিযোগের ভিত্তিতে চরগুলোতে পরিদর্শনে যাবো। চরাঞ্চলে সরকারের যে খাস সম্পত্তি, কোনো ব্যক্তি অনুমতি ছাড়া ভোগ দখল করতে পারবেন না। করলেই আইনি ব্যাবস্থা।।

গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রায়পুর উপজেলার মেঘনার চর, মাছঘাট ও বাজার দখলকে কেন্দ্র করে তিন দফায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শামিম গাজীসহ তার অনুসারী এবং উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ফারুক গাজীসহ তার অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দলীয় কার্যালয়, মাছের আড়ত, বসতঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। একই সঙ্গে দুটি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় ২২ ডিসেম্বর রায়পুরের সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়ার নির্দেশে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলন করে উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনের সকল কমিটি বিলুপ্ত করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়