বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫১

রায়পুরে পরিবহন থেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় !

প্রতিবাদ করায় বিএনপি নেতার ওপর হামলা, বিক্ষোভ, দল থেকে বহিষ্কার!

তাবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর
রায়পুরে পরিবহন থেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় !

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে অবৈধ যানবাহন চলাচল বেড়ে চলছে। এসব পরিবহন (অটোবাইক -সিএনজি ও ট্রলি) দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে থানা পুলিশের ডিউটির নামে প্রতিদিন ১৫-২০টি সিএনজি অটোরিকশা আটক করে ২০০ টাকা এবং রায়পুর-চাঁদপুর লাইনের প্রায় ৪০টি সিএনজি অটোরিকশা থেকে ২০-২৫ টাকা করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে লাইন নিয়ন্ত্রণকারী (লাইন ম্যান) শাকিল হোসেনের (৩০) বিরুদ্ধে। এই চাঁদার প্রতিবাদ করায় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে হুমায়ুন লস্করের ওপর হামলা চালানো হয়। তিনিহাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতেই হুমায়ুন লস্কর সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি করেন। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে শহরের প্রধান সড়কে সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবির লস্করের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ২০-৩০ জনের মতো সিএনজি মালিক ও শ্রমিক।

এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (৯ সেপ্টম্বর) রাতে রায়পুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক আহত হুমায়ুন কবির লস্করকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছেন পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নুর-ই আলম মুকুল।

অভিযোগ উঠেছে, রায়পুর শহরের ৮টি রুটের লাইন নিয়ন্ত্রণ করছে বিএনপির কয়েকজন নেতাসহ মাদক ব্যাবসায়ী একটি চক্র। প্রতিদিন রায়পুর-লক্ষ্মীপুর, রায়পুর-হায়দরগঞ্জ, রায়পুর-চাঁদপুর রুট থেকে অবৈধ ৪০টি সিএনজি থেকে ২৫ হাজার টাকা করে মাসে (৩০দিন) ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে অর্ধ কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদাও তোলা হচ্ছে। আর লাইন নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে প্রায় ঘটছে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা।

রায়পুর থানা সূত্র জানা যায়, রায়পুর শহরে তিন ধরনের গণপরিবহনের জন্যে অটোবাইক ও সিএনজির ১৫টি ও বাস-মিনিবাসের রুট আছে ৬টি।। এসব রুটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন (অটোবাইক, সিএনজি ও ট্রলি)। শুধু যে অবৈধ রুট ঘিরে সড়কে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে তা নয়, বৈধ রুটকে ঘিরেও চলছে নানা অনিয়ম।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : রায়পুর থেকে লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালি, বরিশাল-ভোলা, চাঁদপুর, রামগঞ্জ, পানপাড়া, মীরগঞ্জ, কাপিলাতুলি, কাজেরদিঘিরপাড়, হায়দরগঞ্জ, বিরামপুর- গাজিনগর বাজার, বাসাবাড়ী বাজার হয়ে হায়দরগঞ্জ, পাটোয়ারী রাস্তার মাথা হয়ে খাসেরহাট, মোল্লারহাট রুট। অথচ বড়ো ৩ টি রুটে ইচ্ছেমতো দূরত্বে গাড়ি চালানো হচ্ছে। ত্রুটিপূর্ণ এবং রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে প্রায় দশ হাজারের মতো পরিবহন (অটোবাইক, সিএনজি অটোরিকশা ও অবৈধ ট্রলি) ।।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ যানবাহন ও অবৈধ গাড়ি শহরজুড়ে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি সৃষ্টি করছে অসহনীয় যানজট। সড়কগুলোতে আরেক সমস্যা হয়ে উঠছে অবৈধ ব্যাটারি রিকশা। প্রায় ৭ হাজারের মত ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ৫ হাজারের মত সিএনজি প্রধান সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে ও এতে আহতও হচ্ছে। অবৈধভাবে স্ট্যান্ড ও চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশার লাইন নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা তোলার প্রতিবাদ করায় সোমবার বিএনপি নেতা হামলার শিকার হয়।

সিএনজি চালকরা জানান, অবৈধভাবে সড়কে চলাচলের জন্যে নিবন্ধিত সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও সিএনজি তালিকাভুক্ত করতে একবারে তিন হাজার টাকা ও মাসে এক হাজার টাকা এবং দৈনিক ১৫-২০ টাকা করে নিচ্ছেন লাইন নিয়ন্ত্রণকারীরা। এ লাইনে চলাচলকারী সিএনজি চাঁদা না দিলে লাইনম্যান শাকিল ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে। যানবাহনগুলো থেকে মাসে ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠে। ওই টাকার লোভে লাইন নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে উঠে শাকিলের গ্রুপ। গত সোমবার আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা হুমায়ুন লস্কর। গত ২২ আগস্ট রায়পুর উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় এই চাঁদাবাজির বিষয় উত্তাপন করেন সাংবাদিক সুমনসহ কয়েকজন সমাজসেবক।

এ প্রসঙ্গে রায়পুরের ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর শামিম আল মামুন বলেন, রায়পুর শহরে প্রায় ৭ হাজার অটোবাইক এবং প্রায় ৫ হাজারের মত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। গত আগস্ট মাসে প্রায় ১০০টি মামলা দেয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশাগুলো রেলবিট অতিক্রম করলেই মামলা দেওয়া ও জব্দ করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে এ অভিযান চলছে। টোকেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। এটি ট্রাফিক পুলিশের দেখার বিষয় নয়। ফৌজদারি অপরাধের বিষয়গুলো থানা পুলিশ দেখবে।’

আহত বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির লস্কর বলেন, ১৫ বছর ধরে দায়িত্বরত লাইনম্যান শাকিলের চাঁদাবাজি রুখতে গিয়ে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) হামলার শিকার হয়েছি। তার অনিয়ম উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাতেও আলোচিত হয়েছিলো। এসব আলোচনার মাঝেই ঘটনাটি প্রকাশ্য বিরোধে রূপ নেয়। শাকিল গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমল থেকেই প্রভাব বিস্তার করে এখনো তা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি মূলত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পলাতক তানভীর হায়দার রিংকুর ইজারার টোল আদায়কারী হিসেবে এই লাইনে আগমন ঘটে। এখনো বীর দর্পেই কাজ কারবার অব্যাহত রাখছেন'।

শাকিল হোসেন অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

অনিয়মের বিষয়ে লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের উপপরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, ‘ জেলায় প্রায় ৮ হাজার নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক চলাচল করছে। বাকি প্রায় দশ হাজারের মত অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক চলাচল করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে ট্রাফিক পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের অবস্থান হচ্ছে মূল সড়কে। অলিগলিতে আমাদের তেমন অবস্থান নেই। যে কারণে এ সুযোগ নিচ্ছে গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা গুলো। ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অলিগলিতে সিএনজি অটোরিকশাগুলো চলাচল করছে।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়