প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১১
ঘাটে ও ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের চরাঞ্চলে যাতায়াত

পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মিলন স্থলে অবস্থিত চাঁদপুর নদী বন্দর এবং দেশের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজার। নদীকে ঘিরে চাঁদপুর ও শরীয়তপুর জেলার ৮ থেকে ১০টি চর এলাকা রয়েছে। এ চরাঞ্চলে হাজার হাজার পরিবারের বসবাস এবং রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, হাট বাজারসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এসব এলাকার অর্থাৎ চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান বাহন নৌকা বা স্টিল বডি ট্রলার। প্রতিদিন চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যসহ মৎস্য বিক্রি এবং চিকিৎসা সহ অন্যান্য জরুরি কাজে চরাঞ্চলবাসীকে আসতে হয় শহরে। এজন্যে নদীপথে চাঁদপুর নদী বন্দর থেকে অসংখ্য ট্রলার যাত্রী পারাপার এবং পণ্য পরিবহনে চলাচল করছে। শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি না থাকলেও বর্ষায় পদ্মা ও মেঘনা নদীর উত্তাল রূপ হয়ে দাঁড়ায় ট্রলার যাত্রীদের জন্যে ভয় এবং আতঙ্কের। তীব্র স্রোতময় নদী পাড়ি দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া যাত্রীদের নানা ঝুঁকি ও সমস্যাতো রয়েছেই।
ট্রলার চালকরা বলছেন, চাঁদপুরের ঘাটগুলোতে ট্রলারে পণ্য এবং যাত্রী উঠানামায় তেমন কোনো সুবিধাই তারা পাচ্ছেন না। যাতায়াতকারী যাত্রীরাও নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরেছেন। চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর চেম্বার এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ঘাটগুলোতে সিসি ব্লকবাঁধ থেকে সিঁড়ির ব্যবস্থা করে দিচ্ছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহর রক্ষাবাঁধের এলোমেলো ব্লকের ওপর দিয়ে যাত্রীরা এবং শ্রমিকরা ব্যবসায়ীদের পণ্য ট্রলারে নিয়ে উঠানামা করছে।
সরজমিনে দেখা যায়, চাঁদপুর নদী বন্দর এলাকায় দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অসংখ্য ট্রলার মালামাল এবং যাত্রী নিয়ে চলাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাচ্ছে, আবার সেখান থেকে ফিরেও আসছে। ট্রলারগুলো যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়মনীতি মানছে না।
ট্রলার চালক বসু গাজী জানান, শরীয়তপুরের মাস্টারঘাটে সকাল ৭টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পারাপারে প্রতিবারে জনপ্রতি ভাড়া নিচ্ছেন ৪০ টাকা। মোটরসাইকেল কিংবা অন্য ছোট যানবাহনের ওপরও পরিবহন খরচ যোগ করেন। আর ঘাট ব্যবহারে দিচ্ছেন ৮০ টাকা। তবুও কোনো সেবা না পাওয়ায় আক্ষেপ তার।
ট্রলার চালক নাদিম জানান, ট্রলার ঘাটে ভিড়লেই টাকা দিতে হচ্ছে। প্রতি ট্রলারে শুধুমাত্র যাত্রী ও যানবাহন পারাপারই নয়, একটি বস্তাভর্তি মালামাল ওঠালে তার জন্যেও ১৫/২০ টাকা তারা ভাড়া নেন। মদিনা মসজিদ ঘাট হতে চরাঞ্চলের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে ১ থেকে দেড় ঘন্টা। আর এ সময় ট্রলারের যাত্রীদের জন্যে কিছু লাইফ জ্যাকেট রাখলেও তারা সেগুলো ব্যবহার করতে না চাওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি তো থাকেই। তবে বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় চলন্ত ট্রলারে যাত্রীদের জন্যে ত্রিপল টানানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে যাত্রী সাধারণ বলছেন, শরীয়তপুর ও চাঁদপুরের মধ্যে কোনো সেতু না থাকায় এক প্রকারের বাধ্য হয়েই উত্তাল নদীতে ঝুঁকি জেনেও স্টিলবডি ট্রলারে করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। একটি ট্রলারে ৩০/৪০ জন নিলেই ট্রলার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেক সময় ট্রলার চালকরা ৮০ থেকে ১শ’ জনও ট্রলারে তুলছে। এরপরেও অনেক সময় কাঠের ট্রলারে করে অন্যত্র থেকে আচমকা চলন্ত স্টিলবডি ট্রলারে আরো নারী-পুরুষসহ যাত্রীদের তুলে সবার জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে।
সুমাইয়া নামে এক নারী যাত্রী বলেন, চাঁদপুরে মূলত চরাঞ্চলের মানুষ বাজার সদাইসহ নিত্যদিনের কেনাকাটার জন্যে বেশি আসা যাওয়া করেন। তাই যাত্রীর চাপ সামলাতে সেতু নির্মাণ কিংবা দ্রুত কার্যকর বিকল্প পদক্ষেপ দেখতে চাই। এখানে ঘাটে যাত্রী ছাউনি না থাকা, টয়লেট না থাকা, দৃশ্যমান ঘাট না থাকা, ট্রলারগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়াসহ নানা অনিয়মের কিছুই যেনো কেউ দেখছে না। মানুষ পারাপার অনুযায়ী ট্রলারগুলোতে লাইফ জ্যাকেট একেবারেই কম। তার ওপর এগুলো ছেঁড়া ও পুরাতন এবং পরার অনুপযোগী হওয়ায় কেউই এগুলো পরতে চায় না। দ্রুত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়ে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক বছির আলী খান বলেন, ট্রলার ঘাটগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।