রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৩

লক্ষ্মীপুরে মব সৃষ্টি করে জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাধা, ভিডিও ভাইরাল

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরে মব সৃষ্টি করে জুমার খুতবায় বিএনপি নেতাদের বাধা, ভিডিও ভাইরাল
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ ভূইয়া ও থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত সোহেল।

লক্ষ্মীপুরে জুমার নামাজের খুতবায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে ঘটনাটি ঘটে। হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মহি উদ্দিন হাসান পার্শ্ববর্তী নোয়াখালীর বাসিন্দা। তিনি ওই জেলার চাটখিল জামায়াতে ইসলামের আমীর। অভিযুক্তরা হলেন চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ ভূইয়া ও থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত সোহেল।

এদিকে বয়ান চলাকালীন বাধা দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান অনেকেই। ভাইরাল হওয়া ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে বিএনপি নেতাদের বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘জাতীয় বেঈমান, এটাতো এ্যানী চৌধুরী (বিএনপি নেতা) অন্য একটি দলের নেতারে নিয়ে বলছে। এটা কি মসজিদে আলোচনার বিষয়? আপনি কোরআন থেকে কথা বলেন। জাতীয় বেঈমান শব্দতো কোরআনে নাই। আপনি একদলকে হাইলাইটস করছেন, আরেক দলকে পচাচ্ছেন। যেটি আপনি করছেন, এতে সমাজ ভাগ করছেন। আপনিতো ইমাম, সকলের নেতা আপনি। কিন্তু একটি দলকে উপস্থাপন করছেন। আপনি জামায়াত নেতা। মসজিদে জামায়াতের ওয়াজ করছেন।

এ সময় খতিব বলেন, ইমান নিয়ে মসজিদের মধ্যে আলোচনা হবে। আর আমি কোনো ব্যক্তিকে বেঈমান বলিনি। এছাড়া কোনো দলকে মসজিদে রিপ্রেজেন্ট করি নি। আপনারা বসেন। আমার বক্তব্য শুনেন এবং নোট নেন। অন্য আরেক বিএনপি নেতা বলেন, এ্যানী চৌধুরী কি বলছে, ওই বক্তব্য এখানে দেওয়ার দরকার নাই। আপনি সকলের ইমাম। মসজিদে এমন কোনো বক্তব্য দিবেন না, যাতে করে সকলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, খতিব সাহেব ‘জবানের হেফাজত’ বিষয়ক আলোচনা করছেন তাঁর বয়ানে। এ সময় চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির এম ইউসুফ ভূইয়া ও যুবদল নেতা আবদুল মুকিত সোহেল আলোচনায় বাধা দেন। সঙ্গে তাদের কয়েকজন অনুসারীও ছিলো। উপস্থিত অন্যান্য মুসুল্লিরা বিএনপি নেতাদের শান্ত করেন। ওই খতিবের পিছনে অভিযুক্তরা ও অন্যান্য মুসল্লিরা জুমায় নামাজ আদায় করেন।

হানিফ মিয়াজীর হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি (উন্নয়ন কমিটি) আবদুল কাদের বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মহিউদ্দিন হুজুর জুমার নামাজ পড়ান। কখনো এ ধরনের সমস্যা হয়নি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ বিএনপির নেতারা সন্ত্রাসী কায়দায় হুজুরের বয়ানে বাধা দেয়। এটি তারা পরিকল্পিতভাবে করেছেন। কারণ, ওনারা এই মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি নয়। তাদের বাড়ি অন্য এলাকায়। যদি খতিবের আলোচনায় ভুল থাকে। তাহলে সেটি শালীন ভাষায় বলা যেতো। মসজিদ কমিটিকে বলতে পারতো। কিন্তু বিএনপি নেতারা সেটি না করে মসজিদের ভেতরে উশৃঙ্খল আচরণ করেছেন। শীঘ্রই মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের সমন্বয়ে সভায় বিষয়টি নিয়ে কি করা উচিত। সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত চন্দ্রগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর মুকিত সোহেল বলেন, মব-টব বুঝি না। জুমার বয়ানে বিএনপি ও এ্যানী চৌধুরীকে নিয়ে আকার-ইঙ্গিতে খতিব কথা বলেছেন। এজন্যে প্রতিবাদ করেছিলাম। তবে হুজুর সরাসরি এ্যানী ভাই কিংবা বিএনপির নাম নেয়নি। গণঅভ্যুত্থানের পরে খতিব সাহেব বিএনপিকে ইঙ্গিত করে কথা বলেছেন। কিন্তু জামায়াতকে নিয়ে বলে না। ওনি মসজিদে জামায়াতের পক্ষ হয়ে কথা বলেন। এখন যেভাবে ওয়াজ করেন, ৫ আগস্টের আগে কখনো এভাবে বলেননি তিনি।

মাওলানা মহি উদ্দিন হাসান বলেন, জবানের হেফাজত নিয়ে আলোচনা করছি। এতে কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নেয়নি। তবুও বিএনপির নেতারা মসজিদে মব সৃষ্টি আমাকে হেনস্তা করে। বিষয়টি মসজিদ কমিটি সুষ্ঠু সমাধান না করলে। আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। জুমার আলোচনায় কোনো দল কিংবা ব্যক্তির নাম নেয়নি। তবুও বিএনপি নেতারা মব সৃষ্টি করে আমাকে হেনস্তা করে। বিষয়টি মসজিদ কমিটি সমাধান করবেন বলেছেন। যদি তারা সমাধান না করে তাহলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

বাংলাদেশ মসজিদ মিশন জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন, ইমামরা মিম্বারে দাঁড়িয়ে হক কথা বলেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাজটি করেন। কিন্তু চন্দ্রগঞ্জের একটি মসজিদে গতকাল, একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জুমার বয়ানে বাধা দিয়েছেন। মব সৃষ্টি করেছেন। এটি দুঃখজনক। এ ঘটনার নিন্দা জানাই আমরা। কথা বলে থাকেন। চন্দ্রগঞ্জের গতকালকের ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা এর নিন্দা জানাই।' মসজিদে ইমামগণ কোরআন-হাদিসের অনুযায়ী আলোচনা রাখেন। তখন অনেকেই ভেবে থাকেন, হুজুর তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। বিষয়টি তা নয়। যারা মসজিদে ইমামদের আলোচনায় বাধা দেয়। তাদের হেদায়াতের জন্যে আমরা সকল আলেম দোয়া করবো। তাতেও সংশোধন না হলে, ওদেরকে সমাজের সকলের বয়কট করা উচিত।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম ইউসুফ ভূইয়া ও থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুকিত সোহেল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়