প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮
এই সপ্তাহের লেখক
লেখার মাধ্যমে মানুষ ও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই

কোন বিষয় আপনাকে লেখক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে?
ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি একটা আগ্রহ ছিল। সারাদিনের ছুটোছুটি, খেলাধুলা, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ও টিভি দেখার পাশাপাশি বই পড়ার আগ্রহটা নিজেকে জাগিয়ে রাখতো। আমি লিখতে পছন্দ করতাম। কোনো বিষয় পেলে সেটাকে নিয়ে ভাবা তারপর ডায়েরিতে লিখে রাখা। সেই ডায়েরি লেখা থেকেই একটা সময় উদ্বুদ্ধ হই নিজের লেখাকে যাচাই করা অন্যের মাধ্যমে আর তখন থেকেই শুরু হয় লেখক হওয়ার যাত্রা।
সম্প্রতি কী কী বিষয় নিয়ে লিখছেন?
আমার লেখা অনেকগুলো কবিতাকে কাব্যগ্রন্থের রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে। পথশিশুর থিম নিয়ে একটি উপণ্যাস গড়ার প্রচেষ্টায় কাজ করছি। পথশিশুরা সমাজের অমানবিকতাকে কীভাবে সহ্য করে, প্রতিকূল পরিবেশে তারা কীভাবে টিকে থাকে। এই পথশিশুদের মাঝে যাদের জন্ম-পরিচয়টা নেই তারা তার আশপাশের পরিবেশ থেকে কতটা অমানবিক খরতাপ সহ্য করে বেঁচে থাকে সেটাই উপণ্যাস আকারে প্রকাশ করার প্রয়াস রয়েছে। পথশিশুদের প্রতি আমাদের করণীয় বা দায়বদ্ধতা কী, ওরা আমাদের সমাজে ও পরিবেশে কী প্রভাব ফেলে, তাদের কীভাবে গুছিয়ে নেয়া যায় সে সবকিছুর একটি মিশ্র রসায়ন উপণ্যাসে ছড়িয়ে যাবে।
আপনার প্রকাশিত বইগুলো সম্পর্কে বলুন।
আমার বইয়ের মধ্যে প্রকাশিত দুটি উপণ্যাস রয়েছে যার প্রথমটি ‘নিশিকুমারী’। এটি একটি ছিন্নমূল নারীকে কেন্দ্র করে প্রতীকী রূপ দেয়া। নিশিকুমারীর মাধ্যমে একটি ছিন্নমূল নারী তার ব্যক্তিসত্তা প্রকাশ করে। সমাজ শত পণ্যের মাঝে মানুষকেও একটি পণ্য বানিয়ে রাখে সে অভিমানটুকু তুলে ধরেছে সে। আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় নিশিকুমারী সমাজের দুটি অংশকে দেখিয়ে দেয় যার একটি অংশকে সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে সাবলীলভাবে আর অন্য অংশকে সেই ভদ্র সমাজের মানুষগুলোর বিষাক্ত প্রয়োজন গড়ে তোলে পণ্য রূপে। এটা এমন এক পণ্য যাকে ব্যবহার করা যায় কিন্তু গ্রহণ করা যায় না। অথচ সমাজের সেই শ্রেণিটারও ইচ্ছে আছে, অনুভূতি, মায়া, পাওয়া না পাওয়ার অভিমান ইত্যাদি সব আছে। সর্বোপরি সমাজের সভ্য শ্রেণির মানুষগুলোর মতো তারও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচার আকুতি আছে আর সে অনুভবগুলোই প্রজ্জ্বলিত হয়েছে উপণ্যাসে।দ্বিতীয় উপণ্যাস ‘নিকুঞ্জ নিকেতন’ যা একটি বাড়ি হলেও এটি একটি প্রজন্মের অনুভূতি ও বয়সের শেষ ধাপে বেঁচে থাকা মানুষগুলোর আত্মমর্যাদার লড়াই। একটি প্রজন্মের সাথে আরেকটি প্রজন্মের ব্যবধান, মনস্তাত্বিক ও স্নায়বিক যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়গুলো প্রকাশ পায় এখানে। সারাজীবন বীর যোদ্ধার মতো লড়ে যাওয়া মানুষটা শেষ বয়সে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে সেটা তুলে ধরা হয়েছে কিছু চরিত্রের মাধ্যমে। নিজেরাই জীবনের একটি মূলমন্ত্র গঠন করে কীভাবে পুনরায় বেঁচে থাকার প্রয়াস করে এবং পথ খুঁজে নেয় আর অন্যদেরও উৎসাহিত করে সে বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একটি বাড়ি পর্যায়ক্রমে কীভাবে অঘোষিত বৃদ্ধশ্রমে পরিণত হয় এবং প্রবীণদের প্রতি নবীনদের দায়বদ্ধতা ও গুরুত্ব সে বিষয়টা বোঝানো হয়েছে। একটা সময় জীবনের যুদ্ধ থেমে যায় কিন্তু জীবন নয়Ñতাই বয়সের ভারে নুয়ে পড়া প্রবীণ শ্রেণির মানুষদের শেষ জীবনে ঝিমিয়ে না পড়ে পুনরায় বেঁচে ওঠার প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের সমাজের প্রবীণ শ্রেণিকে মোটিভেট করার প্রয়াসই উপণ্যাসের মূল উপজীব্য।
সর্বশেষ কী বই পড়েছেন? ছোটবেলার মতো এখন সেই সময়টুকু আর হয়ে ওঠে না বই পড়ার। জীবনের যান্ত্রিকতা ও দায়িত্ববোধ আমাদের সময়গুলোকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তারপরও মনের খোরাকে যতটুকু সময় করে নিতে পারি। তিন প্রজন্মের মিশ্র রসায়ন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘দূরবীন’ ২য় বার পড়া শেষ করেছি। তারপর একটি এক্সপেরিমেন্টাল বই গাজী মনসুর আজিজেরÑ‘পাখির খোঁজে বাংলা জুড়ে’ বইটি শেষ করেছি। হুমায়ুন আহামেদের পাশাপাশি সমরেশ মজুমদারও আমার প্রিয় একজন লেখক তাই তার লেখা ‘কালপুরুষ’ পুনরায় শুরু করেছি।
লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? লিখতে চাই, লিখবো আর লিখে যাবো। লেখা এমন একটি মাধ্যম যা বদলে দিতে পারে, গড়ে তুলতে পারে, গুছিয়ে নিতে পারে। লেখার মাধ্যমে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। যদিও মানুষের মনস্তাত্বিক পরিবর্তন বা সমাজের বিবর্তন আমার একার পক্ষে সম্ভব নয় তবে লেখনির মাঝে সেই পরিবর্তনগুলোর অংশ হতে চাই। আমার লেখা দুইটি প্রকাশিত আর চলমান একটি উপন্যাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা ও নির্দশনকে রিপ্রেজেন্ট করার চেষ্টা করেছি আর আগামীতেও প্রতিটি লেখায় একটু একটু করে বাংলাদেশ ও এদেশের প্রতিটি বিষয়বস্তুকে তুলে ধরার চেষ্টা থাকবে। ইচ্ছে আছে পরমকরুণাময়ের কৃপা থাকলে উপণ্যাসের পাশাপাশি গল্প ও সায়েন্সফিকশন কিছু নিয়ে কাজ করবো যাতে তরুন প্রজন্মের পাশাপাশি কিশোররাও উৎসাহিত হয় আর আমি তাদের পছন্দের লেখক হতে পারি।
অবসর সময়ে কী করেন? অনেকগুলো শখের মাঝে আমার সবচেয়ে পছন্দের হলোÑনতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া আর সেখানকার পরিবেশে মিশে যাওয়া ও সেখানকার খাবার-দাবারের স্বাদ নেয়া। রাস্তায় একা একা হেঁটে যাওয়া। যেখানে সবাই থাকবে ব্যস্ত আর আমি ব্যস্ত আমার ভুবনে। এখন অবসর সময়ে পরিবারকে সময় দেয়ার চেষ্টা করি, পারিবারিক দায়িত্বগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা করি। এ সকল কিছুর মাঝে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়াটা মিস করি না। প্রয়োজনে তাদের খুঁজে নিয়ে আড্ডায় জমে যাই। অবসরের একান্ত একটা সময় বের করে নেই যেটাতে গান শোনা ও বই পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ থাকবে না।