মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৫৪

প্রতিবাদে তিন সদস্যের পদত্যাগ

শাহরাস্তিতে মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ওলামা লীগ নেতা!

শাহরাস্তি ব্যুরো।।
শাহরাস্তিতে মাদ্রাসা গভর্নিং বডির সভাপতি ওলামা লীগ নেতা!
গভর্নিং বডির নবাগত সভাপতি আমিনুল ইসলাম, যিনি চাঁদপুর জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক।

শাহরাস্তি উপজেলার বলশিদ মহিলা মডেল আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন চাঁদপুর জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। বিষয়টি জানাজানি হলে সভাপতির অব্যাহতি দাবি করে কমিটির তিন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনিরুজ্জামান, অভিভাবক সদস্য মো. খোরশেদ আলম ও সদস্য আয়েশা বেগম পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে তিন দফা মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। মাদ্রাসাটির যাত্রাকালে নামকরণ করা হয় ফজিলতেননেছা মহিলা মাদ্রাসা। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের মায়ের নামে মাদ্রাসাটির নামকরণ করা হয়েছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশেষ সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে আমিনুল ইসলাম নামের আগে পরে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা মাদ্রাসা নামকরণ করেন। বর্তমানে বলশিদ মডেল মহিলা আলিম মাদ্রাসা নামে নামকরণ হলেও প্রধান ফটকে এখনো শোভা পাচ্ছে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা মাদ্রাসা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলছে। শিক্ষক মিলনায়তন খোলা থাকলেও উপস্থিত শিক্ষক সংখ্যা অল্প। মাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষক ঝর্ণা আক্তার বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উপজেলার মিটিংয়ে গেছেন, অফিস সহকারী ছুটিতে। কমিটির ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। শুনেছি আমার নাম থাকতে পারে, তবে কমিটি আসলেই হয়েছে কিনা আমি জানি না।

এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগকারী বাবুল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, এই মাদ্রাসাটির নাম তিন দফা পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমান সভাপতি একজন আওয়ামী লীগ নেতা, তিনি জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তিনি এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বিগত কয়েক বছর পূর্বে তিনি আহমেদনগর আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা বলে তিনি অঘোষিতভাবে দুটি মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তার স্ত্রী নাজমা বেগম মাদ্রাসার অফিস সহকারী। এছাড়াও তার পরিবারের ৫ সদস্য এই মাদ্রাসায় বিভিন্ন পদে চাকুরি করে আসছেন। বাড়িতে বসেই তার স্ত্রী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন জানান, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গোপনে এই কমিটি করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না।

কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, আমার দুই মেয়ে এই মাদ্রাসায় পড়ে। একদিন অফিসে গেলে আমাকে বলা হয়, আমি অভিভাবক সদস্য, এখানে স্বাক্ষর করতে হবে। কিছু না বুঝেই স্বাক্ষর করি। পরে জানতে পারি এটি পরিকল্পিত একটি কৌশল। তাই আমি পদত্যাগপত্র দিয়েছি।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, অধ্যক্ষের কক্ষের চাবি সভাপতির কাছে থাকে এবং অফিসের মূল্যবান কাগজপত্র তিনিই সংরক্ষণ করে থাকেন। গত ১৩ আগস্ট কমিটির সভা হয়েছে, সেগুলোর রেজুলেশন সভাপতির কাছে রয়েছে। কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে সদস্যদের নামের তালিকাও ওনার কাছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এলাকাবাসী মনে করেন, এই কমিটি অবৈধ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গঠিত। তারা অভিযোগপত্রের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে এলাকাবাসীর মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়