বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ০৩:১৯

মুক্তিযোদ্ধা আইনে ব্যাপক পরিবর্তন!

'বীর মুক্তিযোদ্ধা' নন বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন-নজরুল!

মুক্তিযোদ্ধা আইনে ব্যাপক পরিবর্তন: বঙ্গবন্ধুসহ ৪০০+ নেতা এখন 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী'!

বিশেষ প্রতিবেদনক: মো.জাকির হোসেন
'বীর মুক্তিযোদ্ধা' নন বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীন-নজরুল!
ছবি : সংগৃহীত

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ।

নতুন এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রায় ৪০০ জন এমএনএ এবং এমপিএ’র 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি বাতিল হয়েছে। তাদেরকে এখন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পুনঃশ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।

জামুকা আইনের সংশোধিত এই অধ্যাদেশে মোট পাঁচটি শ্রেণিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন:

  1. প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বে ছিলেন।
  2. বিদেশে জনমত গঠনে অবদান রাখা পেশাজীবীরা – যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন।
  3. মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী, দূত ও সহকারী কর্মকর্তারা – যারা যুদ্ধকালীন সময়ে প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
  4. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও সাংবাদিকরা – যারা প্রচার ও তথ্যযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
  5. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা – যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অর্থ সংগ্রহ ও মনোবল বৃদ্ধির কাজে যুক্ত ছিলেন।

২০২২ সালে প্রণীত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন অনুযায়ী, উপরোক্ত পাঁচ শ্রেণির সবাইকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন অধ্যাদেশে এই শ্রেণির সবাইকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এতে পূর্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে এই নেতাদের নাম সরাসরি বাদ না দিলেও, তাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় বিলুপ্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে।

এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ৪০০+ রাজনীতিবিদ ও কর্মচারীর সরকারি নথিতে আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিতি থাকবে না। ফলে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হবেন।

এছাড়া, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধা তালিকা এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, তা নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন পড়বে।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুজিবনগর সরকার ভারতের মেহেরপুরে গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাজউদ্দীন আহমদ। সৈয়দ নজরুল ইসলাম হন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। এ সরকার যুদ্ধকালীন প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের এই পরিবর্তন একদিকে যেমন প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মূল্যায়ন নিয়েও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। সংশোধিত অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার ফলে জাতির গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও ইতিহাসে অবদান রাখা বহু নেতার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির কাঠামো বদলে যাচ্ছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়