শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৪

"৭ মার্চ: তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস ও নির্যাতনের কাহিনী"

প্রতিবেদন: মো. জাকির হোসেন
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।ছবি: সংগৃহীত

৭ মার্চ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমানকে ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারেক রহমানের গ্রেপ্তারের পর তাকে যে অমানবিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নির্যাতনের ফলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক দৃঢ়তা এবং শক্তি আরও বেড়ে ওঠে, এবং আজকের দিনেও এটি বিএনপির আন্দোলন এবং দলের শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।

কারাবন্দি অবস্থায় নির্যাতনের ভয়াবহতা

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন, এবং তাকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। প্রথমে তাকে একটি অন্ধকার কক্ষে একা বন্দি রাখা হয়, যেখানে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও ছিল না। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রতিদিনই তাকে শারীরিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হতো, যা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কারাগারে থাকার সময় এক পর্যায়ে তারেক রহমানকে চরম অবহেলার শিকার হতে হয়, ফলে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটে। তার স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি, যা তার শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। একাধিক সূত্রের মতে, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল, এবং তার পেটে নানা ধরনের অস্বাভাবিক সমস্যা দেখা দেয়। তার মুখমণ্ডল, পিঠ ও পায়ে বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট ছিল, যা তার ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের প্রমাণ বহন করে।

তাকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার পাশাপাশি, মানসিকভাবে এবং সাংগঠনিকভাবে তাকে দেউলিয়া করার প্রচেষ্টা ছিল। তাঁকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার জন্য তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখা হয়নি। তার পরিবার, দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল। এর ফলে, তার মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছিল যা তার কার্যক্ষমতা এবং সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

নির্যাতনের কারণ: তারেক রহমানের রাজনৈতিক শক্তি

তারেক রহমানের উপর এই অমানবিক নির্যাতন ছিল মূলত তার রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে দুর্দান্ত রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি করেছিলেন, তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এতটাই ভয় ছিল যে, তাকে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, যাতে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে না পারেন।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের ফলে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। সরকার জানত, তিনি বিএনপির নতুন নেতৃত্বকে প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং দেশের রাজনীতিতে তিনি এক বিরাট শক্তি। ফলে, তাকে দুর্বল করে দেওয়া, দলীয় ঐক্য নষ্ট করার এবং জনগণের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা কমানোর জন্য এই ধরনের নির্যাতন করা হয়েছিল। এই অত্যাচারের মাধ্যমে তারেক রহমানকে শূন্য করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বরং, তারেক রহমানের নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং তা গণতন্ত্রের পক্ষে এক অবিচলিত সংকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তারেক রহমানের প্রতিরোধ এবং শক্তি

তবে, এই অমানবিক নির্যাতন তারেক রহমানকে ভেঙে ফেলতে পারেনি। বরং, তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারেক রহমান তার শারীরিক নির্যাতনের মধ্যেও একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, তিনি কখনোই ভয় পাননি এবং গণতন্ত্রের জন্য তার সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "যতবার আমাকে আঘাত করা হয়েছে, ততবার আমি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছি। আমার ওপর যতটা চাপ দেওয়া হয়েছে, ততটাই আমি জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর দৃঢ় সংকল্পে অবিচল থেকেছি।"

তিনি আরও বলেন, “আমি জানি, যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা একদিন বুঝবে, আমরা ভয় পাই না। তাদের পরিকল্পনা কখনোই সফল হবে না। আমাদের জয় একদিন আসবে, সেটা কেবল সময়ের ব্যাপার।”

তারেক রহমানের নেতৃত্বের জন্য তার সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের শাশ্বত বিশ্বাস এবং শক্তি তৈরি হয়েছে। তার আদর্শ এবং শৈল্পিক কৌশলগুলো দলীয় কর্মীদের মধ্যে এক অবিচ্ছিন্ন শক্তি এবং উদ্দীপনা তৈরি করেছে, যা পরবর্তী বছরগুলোতে বিএনপির রাজনীতিকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে গেছে।

তারেক রহমানের নির্যাতন এবং জনগণের প্রতি তার দায়িত্ববোধ

তারেক রহমানের ওপর যে অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা জনগণের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং দেশপ্রেমের প্রতি তার শক্তিশালী বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল। তিনি জানতেন যে, তার এই সংগ্রাম কেবল তার ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, এটি একটি জাতীয় সংগ্রাম। জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য তার আন্দোলন চলবে। একে দেশপ্রেম এবং আদর্শের প্রতি তার অটল প্রগাঢ় বিশ্বাস হিসেবে দেখা হয়।

তারেক রহমান তার ব্যক্তিগত জীবন এবং রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে একটি ব্যালান্স তৈরি করেছেন। তার শারীরিক অবস্থা যখন এতটাই নাজুক হয়ে গিয়েছিল, তখনও তিনি প্রতিদিন দেশের জনগণের জন্য তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। তার দৃঢ় সংকল্প এবং নিঃস্বার্থ প্রজ্ঞা আজ বিএনপির অন্যতম শক্তি।

তারেক রহমানের নেতৃত্ব এবং ভবিষ্যত রূপরেখা

তারেক রহমানের শারীরিক এবং মানসিক সংগ্রাম কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রচেষ্টা নয়, এটি দেশ ও জাতির প্রতি তার অঙ্গীকারের চূড়ান্ত পরীক্ষা। তার মতে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত কেবল তখনই নিরাপদ হবে যখন এই দেশের জনগণ নিজের অধিকার পুনরুদ্ধার করবে এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা এবং সম্মানিত জীবন দেওয়ার জন্য আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, এবং আমি যতদিন বাঁচবো, এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে যাবো।”

এখানে একটি দৃষ্টান্তমূলক বিষয় হলো, কারাবন্দি অবস্থায় থেকেও তারেক রহমান দলের উদ্দেশ্যকে কখনো অস্বীকার করেননি। বরং, তিনি দলের কর্মীদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, যা দলের নতুন শৃঙ্খলা এবং ঐক্যকে আরো দৃঢ় করেছে। তার বক্তব্য এবং মানসিক দৃঢ়তা তারেক রহমানকে শুধু তার দলের মধ্যে নয়, সারা দেশের জনগণের কাছে এক প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তারেক রহমানের শারীরিক ও মানসিক সংগ্রাম

৭ মার্চ তারেক রহমানের কারাবন্দি দিবস শুধু একটি রাজনৈতিক দিন নয়, এটি তারেক রহমানের ওপর চালানো অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদও। তার একটিই উদ্দেশ্য ছিল—দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। তার এই সংগ্রাম আজকের দিনে বিএনপি এবং বাংলাদেশের জনগণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বের জন্য যারা তাকে সমর্থন করেছিলেন, তারা জানতেন যে, তিনি কখনোই হাল ছাড়বেন না এবং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তার সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

আজ তারেক রহমানের এই নির্যাতনের কাহিনী শুধু একটি বেদনার গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক অটল প্রতীক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য তার সাহসী লড়াইয়ের সাক্ষী। তারেক রহমানের আদর্শ, তার নেতৃত্ব এবং তার সংগ্রাম বাংলাদেশের জনগণের জন্য চিরকাল প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

প্রতিবেদন : মো.জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক,চাঁদপুর জেলা বিএনপি।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়