প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ০৮:২১
ক্ষমতার জোরে পথ বন্ধ করে দোকান নির্মাণ!

ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজারের প্রসিদ্ধির সাথে বদনামও আছে। যেমন-দোকানিদের ফুটপাত দখল করে রাখা, ইজারাদারের অতিরিক্ত টোল আদায়সহ আরো কতো কী। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা গেলো আরো একটি বদনামের কথা। সেটি হলো : পথ বন্ধ করে দোকান নির্মাণ। এই দখলদারদের আচরণগত বৃত্তান্ত জানা গেলো সংবাদটি পড়ে।
সংবাদটিতে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, সিএস এবং বিএস দুই নামের খতিয়ানেই জায়গাটি একটি সরকারি পথ। পথটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের প্রসিদ্ধ চান্দ্রা বাজারের বড়ো মসজিদের পুকুরের পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ পথ ছিলো। এই পথ দিয়ে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, চান্দ্রা অঞ্চলের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, চান্দ্রা বড়ো মসজিদের মুসল্লিগণ চলাচল করতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী সরকারের আমলে এই পথটি দোকান নির্মাণ করে দখল করে আছেন বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে এলাকার সুধী মহল, বাজারের ব্যবসায়ী ও অন্যান্যের সাথে দখলদারদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে ইউনিয়ন ভূমি অফিস উল্লেখিত স্থানে শর্ত সাপেক্ষে কাজ বন্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, চলাচলের এই পথটি বিএস খতিয়ান ৫৭১ এবং সিএস খতিয়ান ৫১৬ দাগে বাজারের মানুষদের চলাচলের একটি পথ। এই পথ দিয়ে এক সময় বাজারে আগন্তুক ক্রেতা-বিক্রেতা ও বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মানুষজন বাজারের বড়ো মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন এবং চান্দ্রা এলাকার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী এই পথ ব্যবহার করতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাজারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী তপাদার ক্লথ স্টোরের মালিক সাইফুল তপাদার গং, তাফাজ্জল ইঞ্জিনিয়ার নামে এক ব্যক্তি এবং মসজিদ কমিটি দোকান নির্মাণ করে পথ বন্ধ করে রেখেছে। রাস্তাটি বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় বাজার এবং বাজার এলাকার সচেতন মহল রাস্তাটি খুলে দেয়ার জন্যে অনুরোধ করে। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী শামীম পাটোয়ারী বলেন, এই রাস্তাটি বাজারের পুরানো রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে মসজিদে যাতায়াত এবং বাজারের মানুষজন চলাফেরা করতো। কিন্তু গত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজারের কয়েক ব্যবসায়ী এই পথের ওপর দোকান নির্মাণ করে দখল করে আছেন। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা এই পথের ওপর থেকে দোকান সরিয়ে দিয়ে মানুষ চলাচলে সহযোগিতা করবে। এছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজান মেম্বার বলেন, রাস্তাটি একটি সরকারি রাস্তা। কিন্তু কয়েক ব্যবসায়ী এবং মসজিদ কমিটি এই রাস্তার উপর দোকান নির্মাণ করে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং মসজিদের মুসল্লি ও বাজারে আগন্তুকদের ব্যাপক ক্ষতি করে আসছে। রাস্তাটি বিএস এবং সিএস খতিয়ানে সরকারি রাস্তা। তাই আমরা জনগণের উপকারের স্বার্থে রাস্তাটি খুলে দেয়ার অনুরোধ করবো। বিষয়টি নিয়ে বাজারে প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তারাও শামীম পাটোয়ারী ও মিজান মেম্বারের মতামতের ওপর মত দেন। বিষয়টি নিয়ে চান্দ্রা বাজারের বড়ো মসজিদের ইমাম মাওলানা আশেক সাহেবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখান দিয়ে একটি সরকারি রাস্তা ছিলো--এটা সত্য কথা। রাস্তাটি সচল করলে বাজারের উপকার হবে। রাস্তাটি সচল করতে আসলে আমরাও মসজিদের পক্ষ থেকে দোকানটি সরিয়ে দিবো। অন্যদিকে ব্যবসায়ী সাইফুল তপাদার বলেন, আমরা উল্লেখিত দাগে লিজ এনেছি, তাই দোকান নির্মাণ করেছি। চান্দ্রা ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (সাবেক তহশীলদার) সুমন পালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিএস এবং সিএস দুটি দাগেই উল্লেখিত স্থানে পথ বা রাস্তা উল্লেখ করা আছে এবং সিএস ও বিএস দাগে মেপে দেখা যায়, এখানে সরাসরি একটা রাস্তা দেখানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে উল্লেখিত স্থানে দোকান নির্মাণের কাজ বন্ধ করে রেখেছেন বলে তিনি জানান।
আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকলে স্থানীয় এমপি, এমপির তথাকথিত প্রতিনিধি, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান--এদের কারো না কারো চাপে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নিশ্চয়ই দখলদার সাইফুল তপাদার গংয়ের সুরেই কথা বলতেন। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে গণমাধ্যমকর্মী কিংবা সচেতন কারো প্রশ্নের জবাবে বলতেন, পথের জায়গাটি লীজ নিয়ে সাইফুল তপাদার গং দোকান নির্মাণ করেছেন। এমনটি চান্দ্রা বাজার কেনো, আরো কতো জায়গায় যে ঘটেছে ও ঘটছে সেটার বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এবং শাসক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দখলদাররা বাজারে বিদ্যমান সরকারি জায়গা ও সরকারি খাল দখল করে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। শাসক দলের নেতাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এটা সব আমলেই হয়ে থাকে। এতে বদলি হবার ভয়ে কিংবা বাড়তি আয়ের লোভে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তারা নীরবতা অবলম্বন করেন। অথচ তারা কৌশলে গণমাধ্যমকর্মীকে এমন দখলদার সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন। বাস্তবে সেটা করার মতো ভূমি কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া যায় না বললেই চলে।