প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ০৯:১৮
যেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা নিরাপদে থাকেন না---

ফরিদগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তার ভাড়া বাসা থেকে সরকারি একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিন ও ১৬ রাউন্ড গুলি চুরির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৫ মে ২০২৫) ফরিদগঞ্জ থানা ভবন থেকে ১০০ গজ দূরে অবস্থিত ৪ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাড়া বাসার ফ্লাটের তালা ভেঙ্গে এ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে এসআই মো. রাকিব উদ্দিনকে ক্লোজড করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) সন্ধ্যা পর্যন্ত চুরি হওয়া পিস্তল, ম্যাগজিন ও গুলির হদিস মেলেনি। ঘটনার শিকার এসআই মো. রাকিব উদ্দিন বলেন, ঘটনার দিন দুপুরে তিনি বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। বিকেলে বাসায় ফিরে দরজা খোলা ও আসবাবপত্র এলোমেলো দেখতে পান। বাসার ভেতরে একটি ব্রিফকেসে থাকা সরকারি পিস্তল, দুটি ম্যাগজিনসহ ১৬ রাউন্ড গুলি এবং নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে চোরের দল। ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) সন্ধ্যায় ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের অভিযুক্ত করে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমানসহ পিবিআই ও সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। যে ভবনে এই চুরি সংঘটিত হয়েছে, সেটির আশপাশেই থানা ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পসহ নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা রয়েছে। ভবনটির অন্যান্য ফ্ল্যাটেও থানার সদস্যরা ভাড়া থাকেন। এমন নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় পিস্তল চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদগঞ্জে পুলিশ কর্মকর্তাদের আবাসস্থলে ও নিকটবর্তী স্থানে চুরির ঘটনা এবারই নূতন নয়। এবার সরকারি পিস্তল চুরি হওয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্ট হয়েছে। চাঁদপুরের খোদ জেলা শহরে জেলা ও দায়রা জজের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটলেও ফরিদগঞ্জ ছাড়া অন্যত্র কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় চুরির ঘটনা গণমাধ্যমে সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হতে দেখা যায় নি। ফরিদগঞ্জের চোরেরা এতোটা কুখ্যাত তাদের দুঃসাহস ও দক্ষতার জন্যে যে, তারা পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়ও চুরি করতে মোটেও চিন্তা করে না। এই চোরদের পাকড়াও করে দমিয়ে রাখতে না পারাটা অবশ্যই ফরিদগঞ্জ থানা-পুলিশের ব্যর্থতা। এই হাত-পাকানো চোরেরা শেষ পর্যন্ত থানায় চুরি করে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। পুলিশ কর্মকর্তার কোনো ধরনের উদাসীনতা, অবহেলা কিংবা যোগসাজশে যদি পিস্তলটি চুরি হয়ে থাকে এবং সেটি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার চাকুরিটা থাকে কিনা সন্দেহ। আমরা মনে করি, পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশের যে কোনো সদস্যকে নিরাপদ স্থানে বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে কিংবা বাসাকে নিরাপদ রাখার কম-বেশি পদক্ষেপ নেয়াসহ সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। চোর-ডাকাত দ্বারা পুলিশ আক্রান্ত হবার বিষয়টি সাধারণ্যে হতাশা তৈরি করে এবং থানা এলাকার লোকজন অকপটে বলে ফেলে, যেখানে পুলিশের নিরাপত্তা নেই, সেখানে আমরা নিরাপদ থাকবো কীভাবে? এজন্যে পুলিশের আবাসস্থল সরকারি বা বেসরকারি যেটাই হোক না কেনো, সেটার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।