প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ১১:৩১
কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্যের কাছে এতো অস্ত্র থাকে কীভাবে?

চঁাদপুর সদরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুল দেশীয় অস্ত্র সহ কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য আটক হয়েছে। এ ব্যাপারে চঁাদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সচিত্র সংবাদ দেখে অনেকেরই চোখ ছানাবড়া হয়েছে। বুধবার (৩০ এপ্রিল ২০২৫) দুপুর দেড়টার সময় স্থানীয় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চঁাদপুর সদর আর্মি ক্যাম্প এবং চঁাদপুর সদর থানা পুলিশ কর্তৃক তালিকাভুক্ত অপরাধী ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে চঁাদপুর শহরের স্বর্ণখোলা নামক স্থান হতে চিহ্নিত কিশোর গ্যাং সদস্য রিফাত (২০)কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত রিফাতের নিকট থেকে ২টি হকিস্টিক, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ৩টি চেইন হুইল, ৫টি তরবারি, ১১টি রড পাইপ, ১টি পাইপ রেঞ্জ, ২টি স্ক্রু ড্রাইভার এবং ১টি প্লাস উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে উদ্ধারকৃত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ গ্রেফতারকৃত রিফাতকে চঁাদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হলে পুলিশের সাময়িক নিষ্ক্রিয়তায় চঁাদপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপক উত্থান ঘটে। এতে জনজীবনে চরম অস্বস্তি দেখা দেয়। এমতাবস্থায় বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। চঁাদপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম কিশোর গ্যাং দমনে পুলিশ অফিসারদের জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করেন। এতে কিশোর গ্যাংয়ের অবাধ তৎপরতা পূর্বের চেয়ে অনেকাংশে হ্রাস পায়। তবে নিঃশেষ বা নির্মূল হয় নি। এমন বাস্তবতায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে কিশোর গ্যাংবিরোধী সঁাড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে। এ অভিযানগুলো গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হচ্ছে। যার ফলে প্রায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দেশীয় অস্ত্র, মাদক ইত্যাদি সহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা আটক হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০ এপ্রিল বুধবার চঁাদপুর শহরের বাস টার্মিনাল সংলগ্ন স্বর্ণখোলা এলাকা থেকে ২৬টি দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাং সদস্য রিফাতের আটক হবার ঘটনাটি শহরে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্ট করেছে। সবারই বিস্ময়-একজন কিশোর গ্যাং সদস্যের কাছে এতো দেশীয় অস্ত্র থাকতে পারে!
বিদ্যমান আইনে কিশোর গ্যাং সদস্যদের মধ্যে যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ সত্যিকারের কিশোর, তারা পুলিশের হাতে আটক হলেও মুচলেকা দিয়ে অভিভাবকের জিম্মায় দীর্ঘদিন ধরেই ছাড়া পেয়ে আসছিলো। তবে যৌথ বাহিনী কিশোর গ্যাং সদস্যদের যাদেরকে আটক করছে, বয়স যা-ই হোক, তাদেরকে ছাড়ছে না। আদালতের মাধ্যমে তারা জামিনে আসছে কিংবা জেল হাজতে যাচ্ছে। একসময় আটক কিশোর গ্যাং সদস্যদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্মীরা পুলিশ কর্তৃক কখনো কখনো বাধার সম্মুখীন হলেও বর্তমানে যৌথ বাহিনী কর্তৃক আটক কিশোর গ্যাং সদস্যদের গলায় ‘কিশোর গ্যাং’ লেখা ঝুলিয়ে ছবি তুলে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে পাঠানো হচ্ছে। এতে নিশ্চয় কিশোর গ্যাং সদস্য ও তাদের পরিবার সাধারণ্যে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। তবে শান্তিপ্রিয় মানুষ কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করে। যেমন-আটকের পর কিশোর গ্যাং সদস্যদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা অস্ত্র বানানোর খরচ কোত্থেকে পায় এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় কারা অর্থাৎ গড ফাদার কে বা কারা সেটা জানা এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা। রিফাতের মতো ২০ বছর বয়সী কিশোর গ্যাং সদস্যদের আদালতের মাধ্যমে পুলিশি রিমান্ডে নিয়ে তাদের কিশোর গ্যাং হিসেবে বেড়ে ওঠার গল্প জানা এবং সেটা গণমাধ্যমে তুলে ধরা। এতে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব নির্মূলের উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা।