সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০০

আজ থেকে ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান

অভিযান চলাকালে নদীতে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক জেলে ধরা পড়লে তাদের জেল-জরিমানা হবে, আর অপ্রাপ্তবয়স্কদের কিশোর কারাগারে পাঠানো হবে : জেলা প্রশাসক

মো. মিজানুর রহমান
আজ থেকে ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষা অভিযান

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। 'মা ইলিশ রক্ষা অভিযান ২০২৫' নামে এই নিষেধাজ্ঞা আজ ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীতে এ ২২দিন মাছের অভয়াশ্রম থাকবে। এ সময় নদীতে জেলেদের জাল নিয়ে নামা যাবে না। চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার অংশ ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের এই অভিযান বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উপকূলীয় এলাকায় চালানো হয়েছে সচেতনতামূলক ব্যাপক প্রচারণা।

মা ইলিশ রক্ষায় চাঁদপুরসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে আজ থেকে শুরু হলো মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এ সময় সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন।

অভিযান চলাকালে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। এ সময় নদীতে সকল ধরনের মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। অভিযানটি চাঁদপুরে সফলভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তর সমন্বয়ে গঠিত জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স আগেভাগেই তৎপর হয়েছে। ইতোমধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার জেলে পল্লী ও মাছঘাট এলাকায় সচেতনতামূলক বহু পথসভা ও সভা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ সময় যাতে জেলেরা নদীতে না যায় এ আহ্বান জানিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র হিসেবে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন হয়ে পড়ে জেলেরা। এ সময় তাদের সংসার চালানো নিয়ে বাড়ে দুশ্চিন্তা। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জেলেদের একজন বলেন, ‘অভিযানের সময় কিস্তি বন্ধ করে দিলে আমাদের জন্যে অনেক সুবিধা।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং করছি ও লিফলেট দিচ্ছি। তিনি জানান, এ বছর চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার ৪৫ হাজার ৬শ’ ১৫ জেলেকে ২৫ কেজি করে সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল দেয়া হবে। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে নদীতে কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক জেলে ধরা পড়লে তাদেরকে জেল দেয়া হবে ও জরিমানা করা হবে। একই সঙ্গে যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাদেরকে কিশোর কারাগারে পাঠানো হবে।

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল হলে আগামীতে দেশের নদীগুলো ইলিশের প্রাচুর্যে ভরে উঠবে বলে প্রত্যাশা মৎস্য বিভাগের। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

জানান, আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চারদিন ও অমাবস্যার পরের তিনদিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২দিন ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ চলবে। এ অভিযানে মৎস্য কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অংশ নেবে।

এ সময় দেশের ৩৭ জেলার ১৬৫ উপজেলার ৬ লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সহায়তা দেয়া হবে। পরিবারপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হবে, যা মোট ১৫ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন চালের সমান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়