প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ২০:২৭
অদৃশ্য রাসায়নিকের রহস্য: ব্যাংকিং খাতে নতুন আতঙ্ক?
রহস্যে ঘেরা কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংক শাখা: চেতনানাশক প্রয়োগে লুটচেষ্টা?

ছয় কর্মকর্তা অচেতন, কাচ ভাঙা, তদন্তে রহস্য: ব্যাংক লুটে নতুন মডেল আশঙ্কা
রোববার (১ জুন) দুপুরে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকের একটি শাখায় ঘটে চাঞ্চল্যকর ও রহস্যময় এক ঘটনা।
ব্যাংকের ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং একে একে বমি করতে থাকেন।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, একটি দুর্বৃত্তচক্র পরিকল্পিতভাবে চেতনানাশক প্রয়োগ করে ব্যাংক লুটের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল।ঘটনাটি ঘটে কুলিয়ারচর থানা সড়কের হাবিব কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত আইএফআইসি ব্যাংকের কুলিয়ারচর শাখায়। প্রায় তিন বছর ধরে এই শাখার কার্যক্রম চলছে।
দুপুর ১টার দিকে কয়েকজন গ্রাহক ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান, প্রধান ফটকের সামনে একজন পড়ে আছেন, ভিতরে সবাই বমি করছেন ও নিস্তেজ।স্থানীয়রা দ্রুত পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পুলিশ এসে দেখতে পান, ক্যাশ কাউন্টারের সামনের কাচ ভাঙা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এটি কোনো লুটের আলামত হতে পারে। তদন্তের স্বার্থে তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন।
তবে, কিছু ফুটেজ ডিলিটেড পাওয়া গেছে বলেও জানা গেছে।
ছয়জনের মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে তাদের স্থানান্তর করা হয় জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আদনান আক্তার বলেন,
"ব্যবস্থাপককে হাসপাতালে আনার সময় তিনি অচেতন ছিলেন এবং এরপর বমি করতে থাকেন। এটি চেতনানাশক জাতীয় কোনো পদার্থ হতে পারে।"ব্যাংকের একটি অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে,
“ব্যাংকের লেনদেন দুপুর ১২টার পর বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অসুস্থতা শুরু হয় তার পরপরই, যা পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দেয়।”বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নতুন ধরনের ‘নীরব লুট’ মডেল।
ক্যাশ ভাঙা, অচেতন করা, ফুটেজ মুছে দেওয়া – সব মিলিয়ে এটি একটি সংঘবদ্ধ অপারেশন হতে পারে।
এখনও কোনো অর্থ লোপাট হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি।
কুলিয়ারচরের বিশিষ্টজন অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন,
"এই ঘটনায় শুধু কুলিয়ারচর নয়, গোটা দেশের ব্যাংকিং নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। দ্রুত র্যাব, সিআইডি, ও ডিবি টিম তদন্তে নামা উচিত।"ব্যাংকটির হেড অফিস থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিককালে দেশের ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের ঘটনা বিরল, যা নতুন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে।সাবধানতা ও তদন্ত ছাড়া এই ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগেই এই 'নীরব সন্ত্রাসের' চক্রান্ত উন্মোচন সম্ভব।
বিসিকে/এমজেডএইচ