বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১৮:০৬

সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তার: অতীতের ছায়া ও বর্তমানের উদ্বেগ!

সেনাবাহিনীর সফল অভিযান: কুষ্টিয়ায় গ্রেপ্তার 'সেভেন স্টার' গ্যাংয়ের প্রধান!

বিশেষ প্রতিবেদক: মো.জাকির হোসেন
সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তার: অতীতের ছায়া ও বর্তমানের উদ্বেগ!
ছবি : সংগৃহীত
সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত অভিযানে কুষ্টিয়ার একটি গোপন বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযান শেষে তাকে ঢাকায় আনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে ত্রাস ছড়ানো এই অপরাধী 'সেভেন স্টার' গ্যাংয়ের প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

অপরাধ জগতের উত্থান: মগবাজার থেকে আন্তর্জাতিক পালিয়ে বেড়ানো

সুব্রত বাইনের জন্ম ১৯৬৭ সালে বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার জোবারপাড় গ্রামে। পিতা বিপুল বাইন ছিলেন একটি এনজিওর গাড়িচালক। ঢাকায় এসে মগবাজারে বসবাস শুরু করেন তারা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরই তিনি অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়েন।

১৯৯১ সালে বিএনপির পক্ষে কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এরপর মগবাজার ও আশেপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে শীর্ষ খবরে পরিণত হন।

আন্তর্জাতিক পালিয়ে বেড়ানো ও গ্রেপ্তার: কলকাতা থেকে নেপাল, আবার ঢাকা

২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে, যার শীর্ষে ছিল সুব্রতের নাম। এরপর তিনি পালিয়ে যান কলকাতায়। সেখান থেকে নেপালে গিয়ে ২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হন, কিন্তু ২০১২ সালে নেপালের ঝুমকা কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে যান। পরে আবার কলকাতায় গ্রেপ্তার হন এবং সেখানেই ছিলেন।

নতুন করে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা: কুষ্টিয়ায় গোপন আস্তানা

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত বাইন বাংলাদেশে ফিরে আবার অপরাধ জগতে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কুষ্টিয়ার গোপন বাসায় তিনি পুরনো সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছিলেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় পুরনো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গ্রেপ্তারের পরবর্তী পদক্ষেপ: আইনের মুখোমুখি সুব্রত

সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের পর সুব্রত বাইনকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে থাকা ২০টিরও বেশি মামলার তথ্য হালনাগাদ করে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে। এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে রাজধানীর অপরাধ জগতের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপসংহার: সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তার—নতুন যুগের সূচনা?

সুব্রত বাইনের গ্রেপ্তার দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কি দেশের অপরাধ জগতের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে, নাকি এটি শুধুমাত্র একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা? সুব্রত বাইনের মতো অপরাধীদের পুনরায় উত্থান রোধে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়