সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪১

রোগের নাম ‘প্রজাপতি শিশু’ বা ‘বাটারফ্লাই বেবি’

ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
রোগের নাম ‘প্রজাপতি শিশু’ বা ‘বাটারফ্লাই বেবি’

ফুলে ফুলে রঙিন প্রজাপতি যখন উড়ে যায় ডানা মেলে তখন মন বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে। তার রঙিন ডানা সে কোথায় পেলো তা খুব জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ত্বক যদি প্রজাপতির ডানার মতো কোমল ও মোলায়েম হয়, নাজুক হয়ে ওঠে যে কোনো স্পর্শে, তখন আর প্রজাপতিকে ভালো লাগে না। প্রজাপতির নান্দনিক সৌন্দর্য যেমন মানুষকে নির্মল আনন্দ আর বিনোদন দেয় তেমনি উল্টোভাবে প্রজাপতির মতো আমাদের নাজুক ত্বকও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যে রোগে এরকম হয়, তাকে বলে এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা। এটি বিরল জীনগত রোগ যাতে শিশুর ত্বক জন্মগতভাবে পাতলা ও অল্পতে ছিঁড়ে যাওয়ার প্রবণতা সম্পন্ন হয়; যেন ঠুনকো। আলতো ছোঁয়া লাগলেই প্রজাপতির ডানার মতো ত্বক ছিঁড়ে যায় এবং ফোস্কা পড়ে। যে সব শিশু এরকম ক্ষণভঙ্গুর ত্বক নিয়ে জন্মায় তাদের ‘প্রজাপতি শিশু’ বা ‘বাটারফ্লাই বেবি’ বলে।

এ রোগের মৃদু রূপ সময় সাপেক্ষে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু মারাত্মক রোগে তীব্র ব্যথা হয়, জীবন সংশয় দেখা দেয়।

রোগের রকমফের

এপিডার্মোলাইসিস বুলোসার পাঁচটি ধরন দেখা যায়। ফোস্কা ত্বকের কোন জায়গায় পড়ে তার ভিত্তিতেই রোগের ধরন নির্ণীত হয়। যেমন :

১. এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা সিমপ্লেক্স : এটি হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরন। প্রথমে সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রে এ রোগ দেখা দেয়। এ রোগে হাতের তালু ও পায়ের তালু আক্রান্ত হয়।

২. জাংশনাল এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা : এটিও শিশুদের আক্রান্ত করে। এটি অপেক্ষাকৃত মারাত্মক ধরনের। এ রোগে আক্রান্ত শিশুর ত্বকের গভীর স্তরে ফোস্কা পড়ে।

৩. ডিস্ট্রোফিক এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা : এ রোগে আক্রান্ত শিশুর ত্বকে হয় কোলাজেন তন্তু থাকে না নয়ত থাকলেও তা অকার্যকর। ফলে ত্বক সুসংহত হয় না। অর্থাৎ ত্বকের বিভিন্ন স্তরগুলো একত্রে জমাট থাকে না। কখনও কখনও এ ধরনের এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা শৈশব পর্যন্ত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে না। ৪. কিন্ডলার সিন্ড্রোম : এটি একটি মিশ্র ধরনের এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা যাতে ফোস্কাগুলো বিভিন্ন ত্বকস্তরে দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক সূর্যলোকের সংস্পর্শে আসলে ছোপ ছোপ বিবর্ণতা বা বর্নিলতা দেখা দেয়।

৫. এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা অ্যাকুইজিটা : এ ধরনের রোগে হাতে ও পায়ে ফোস্কা পড়ে। এর পাশাপাশি মুখের মিউকাস ঝিল্লিও ফোস্কাক্রান্ত হয়।

রোগের কারণ

প্রায় সব ধরনের এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা পরিবার থেকেই উদ্গম হয়। কারও বাবা-মা থেকে যদি কেউ বংশগতিক্রমে জীনগত ত্রুটি ধারণ করে

তবে তার এ রোগ হয়। কেবল একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এপিডার্মোলাইসিস বুলোসা অ্যাকুইজিটা হলো একমাত্র ধরন যা বংশগতি দ্বারা বাহিত হয় না। এটা ব্যক্তির রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকলে হয়।

রোগের লক্ষ্মণ

যে সব শিশু মাত্র হাঁটতে শিখেছে এবং যারা এখনও কোল ছাড়েনি, সেসব শিশুরাই প্রথম উপসর্গে আক্রান্ত হয়। ত্বকে তীব্র ব্যথাযুক্ত ফোস্কা হলো প্রথম উপসর্গ। এই ফোস্কাগুলো ত্বকের যে কোনো স্থানে হতে পারে। কখনও কখনও চোখ, কণ্ঠনালী, পাকস্থলী, মূত্রথলি ইত্যাদি অঙ্গের অভ্যন্তরে ফোস্কা পড়ে। এই ফোস্কাগুলোতে জীবাণু সংক্রমিত হলে এবং ত্বকে ক্ষত তৈরি হলে অবস্থা বেশ বেগতিক হয়।

রোগ নিরূপণ

আক্রান্ত ত্বকের আণুবিক্ষণিক পরীক্ষায় আক্রমণকারী জীবাণু সনাক্ত হয়। চিকিৎসা

এপিডার্মোলাইসিস বুলোসার কোনো নিরাময়কারী চিকিৎসা নেই। তবে ক্ষতস্থানের যত্ন নেওয়া, অ্যান্টিসেপ্টিক মলম লাগানো, ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজাবৃত রাখাটাই হলো সমাধান। পাশাপাশি ব্যথানাশক ঔষধ ও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়। কখনও কখনও শৈল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কণ্ঠনালী ও অন্ননালীতে ফোস্কাপড়ায় রোগীরা তীব্র ব্যথায় খাবার গলাধঃকরণ করতে পারে না। এদের ক্ষেত্রে রাইল’স টিউব দিয়ে ফিডিং করাতে হয়।

বাড়িতে যত্ন

হাতেপায়ে লোশন মেখে ত্বকের ঘর্ষণ রোধ করা যায়। ক্ষতস্থান এমনভাবে গজ দিয়ে আবৃত রাখতে হবে যাতে ছুটাতে গেলে ত্বকসহ উঠে না আসে। ঢিলেঢালা জামা পরিধান করতে হবে। জীবাণু-সংক্রমিত ফোস্কাগুলো গালতে হবে। ভেতরের পূঁঁজ ও তরল বের করে আনতে হবে। স্নানের জল কক্ষতাপমাত্রার চেয়ে বেশি উষ্ণ রাখা যাবে না। অতিরিক্ত গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকাটা বাঞ্ছনীয়।

ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমণ হলে ত্বক লালচে হতে পারে, পূঁযের রং হলদে হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের জন্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। খাদ্য তালিকায় আয়রন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে।

তথ্যসূত্র :

১. ওয়েবমেড এডিটরিয়াল, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩; রিভিউ : স্টেফানি এস গার্ডনার, এমডি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়