প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪২
লক্ষ্মীপুরের ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক : ৬ মাস ওষুধ নেই, ক্ষোভ নিয়ে ফিরছেন রোগীরা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার মতো নানা রোগ নিয়ে মানুষ প্রতিদিন আসছেন। ৬ মাস ওষুধ না থাকায় খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন অসহায়-দরিদ্র মানুষ। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট ২০২৫) উপজেলার চরবংশী এলাকার সিএইচসিপিও আবদুর রহমান ও মো. মহসীন জানান।
|আরো খবর
রায়পুরসহ জেলার ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে গত এক বছর ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়েই খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসাটি হারিয়ে কষ্টে গ্রামের অসচ্ছল পরিবারগুলো। অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যকারিতা নিয়ে এখন সমালোচনা করছেন।
গ্রামের এলাকায় নির্মাণ হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সাধারণত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দিয়ে থাকে; পাশাপাশি মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করে। বয়স্ক, শিশু -কিশোর ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শও দেয়া হয়। রোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অণুপুষ্টিকণার প্যাকেট পান।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় এখন রোগীদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। সাধারণত প্রতি তিন মাসে জেলা পর্যায়ে ওষুধ পাঠানো হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওষুধ আসা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে মজুত থাকা ওষুধ দিয়ে কোন রকম রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। এরপর আর রোগীরা ওষুধ পাননি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় এখন রোগীদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। সাধারণত প্রতি তিন মাসে জেলা পর্যায়ে ওষুধ পাঠানো হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওষুধ আসা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে মজুত থাকা কিছু ওষুধ দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। এরপর আর রোগীরা ওষুধ পাননি। এ কারণে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হায়দরগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. মানষের চিকিৎসা নিতে আসা জয়নব বেগম বলেন, ‘আঁর হুতের বউর খুব জ্বর আর কাশি। তাই তারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আইছি। ডাক্তার (স্বাস্থ্যকর্মী) প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, কিন্তু ওষুধ দেন নাই। বাজার থাইকা কিনতে হইবো বলে। আঙ্গোরলাই খুব কষ্ট হইবো।’
রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী আখনবাজার এলাকার হাওয়া বেগম জানান, চরকাছিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে আগে জ্বর, সর্দিকাশি কিংবা পেট ব্যথার ওষুধ বিনা মূল্যে পাইতো। এতে তাদের মতো কৃষক পরিবার অনেকটা স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু গত এক বছর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলেও ক্লিনিকে গিয়ে কোনো ওষুধ পাননা। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে কিনেছেন।
ওষুধ না থাকায় তাদের মতো অসহায় দরীদ্র মানুষ হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও বিব্রত হচ্ছেন।’ তারাও সময়মত ক্লিনিকে যাননা বলে হাসপাতালে অবস্থান করা এক নারী সিএইচসিপিএ জানান। ওষুধ না থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররাও (সিএইচসিপি)। তারাই রোগীদের হাতে বিনা মূল্যে ওষুধ দিয়ে থাকেন।
রায়পুরের উত্তরচর বংশী কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডার মো. মহসিন মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন জ্বর, সর্দিকাশি, ডায়রিয়া, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিয়ে মানুষ আসেন। ওষুধ না থাকায় তাঁদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীরা হতাশ হয়ে আমাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।’’
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি ১৫দিনের মধ্যেই সমাধান হবে।’